ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মোদি সরকার ২.০ এবং আগামী দিনের ভারত

মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.)

প্রকাশিত : ১১:৫৬ পিএম, ৯ জুন ২০১৯ রবিবার

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ গ্রন্থের শেষ দিকে আপসোস করে বলেছেন ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেল বটে, কিন্তু ভারত মাতার দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। দ্বিখণ্ডিত এই দেহ থেকে যে রক্তক্ষরণ শুরু হলো তার শেষ কোনোদিন হবে কিনা তা নিয়ে মাওলানা নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মুসলমানদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের স্লোগান তুলে যেভাবে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলো তাতে গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ হাসিল হলেও সমগ্র ভারতের মুসলমানদের স্বার্থ আগামীতে কিভাবে রক্ষিত হবে তার কোনো কিনারা তিনি দেখতে পাননি। আয়েশা জালালের গ্রন্থ, দ্যা পিটি অব পার্টিশনের বর্ণনা অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের কয়েক মাসের মধ্যে উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ লাখ নিরীহ মানুষ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বলি হয়েছেন এবং চৌদ্দপুরুষের ভিটে মাটি ছাড়া হলেন প্রায় দেড় কোটি। হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন জাতি, তারা আলাদা হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের বাসিন্দা হলে উপমহাদেশে শান্তি আসবে, এই ধারণার কোনো বাস্তব চিত্র বিগত ৭২ বছরে দেখা যায়নি।

তারপর ১৯৭১ সালে তো পাকিস্তানের এক মুসলমান পক্ষ অন্য মুসলমান পক্ষের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করল, ধর্ষণ করল দুই লক্ষ নারীকে। সঙ্গত কারণেই সাধের পাকিস্তান থাকল না, দ্বিখণ্ডিত হলো। এখন বর্তমান যে পাকিস্তান সেখানে তো প্রায় শতভাগ মুসলমান। তারা আগামীতে এক পাকিস্তান হয়ে থাকবে এমন কথা কোনো যুক্তিবাদি মানুষ বিশ্বাস করে না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। প্রায় একশ কোটির অধিক হিন্দুদের মধ্যে ভারতে এখন প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের আবাস। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে তীব্র জাতীয়তাবাদি ও সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি হিন্দুত্ববাদের স্লোগান তুলে যেরকম মহাপ্লাবনসম বিজয় অর্জন করেছে তা এক কথায় বিস্ময়কর এবং অভাবনীয়। শুধুমাত্র দক্ষিণের কেরালা ও তামিলনাড়ু বাদে এতদিন রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষাকারি আঞ্চলিক দলগুলো প্রায় ধুলোর সঙ্গে মিশে গেছে। উত্তর প্রদেশে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বি আখিলেশ যাদবের সমাজবাদি পার্টি (এসপি) এবং মায়াবতির বহুজন সমাজবাদি পার্টি (বিএসপি) এবার জোটবদ্ধ হওয়ায় সকল জায়গা থেকেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়েছিল উত্তর প্রদেশে বিজেপির আসন ২০১৪ সালে প্রাপ্ত আসন থেকে অর্ধেক বা তারও নীচে নেমে আসবে। কিন্তু ২৩ মে ফল প্রকাশের পর দেখা গেল উল্টো চিত্র। ২০১৪ সালে প্রাপ্ত ৭১ আসনের জায়গায় এবার বিজেপি একাই পেয়েছে ৬০টি আসন। একমাত্র রায়ব্রেলির আসনটি ছাড়া উত্তর প্রদেশ থেকে কংগ্রেস একেবারে ছাপ হয়ে গেল। সবচাইতে বিপর্যয় ঘটেছে আমেথি আসনে। গান্ধী পরিবারের মর্যাদার প্রতীক সেই আমেথি আসনে বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানীর কাছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী হেরে গেছেন। কেউ ভাবতেও পারেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হলেও সৌজন্যতার খাতিরে উত্তরের দুই মহারথী যাদব আর মায়াবতি আমেথি আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তারপরও রাহুল গান্ধীর হেরে যাওয়াটা আগামীতে ভারতের রাজনীতির জন্য সুদূরপ্রসারি বার্তা বহন করে।

বিজেপির উত্থানের পথে উত্তর প্রদেশের পর পশ্চিমবঙ্গকে আরেকটি বড় চেক পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখানে কোনো অংক এবং হিসাব-কিতাব কাজ করেনি। এখানেও অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। এপ্রিল মাসে নির্বাচন শুরু হওয়ার পরপরই ঢাকায় এসেছিলেন সর্ব ভারতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহুয়া চৌধুরী। কোলকাতার মানুষ এখন দিল্লিতেই থাকেন। ঢাকায় তাঁর সাথে কথা প্রসঙ্গে আমি বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবার হয়তো সাত-আটটি আসন পেতে পারে। তিনি আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই বললেন, ‘না দাদা দুটি আর টেনে টুনে হলে তিন-চারটির বেশি আসন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে পাবে না।’ সেই জায়গায় পশ্চিমবঙ্গে আসন পেয়েছে তারা ১৮টি। ২০১৪ সালে যেখানে ভোট পেয়েছিল শতকরা ১৭ ভাগ, সেখানে এবার পেয়েছে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ ভোট। পশ্চিমবঙ্গে এমনটার জন্য সবাই মমতা ব্যানার্জিকেই দুষছেন। বেপরোয়া আচরণ এবং ভোট ব্যাংক রাজনীতির অতি তোষণে মুসলিম উগ্রবাদিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার জন্য মমতার অনড় ভূমিকার পিছনে কাজ করছে পশ্চিমবঙ্গের উগ্রবাদি মুসলিম রাজনৈতিক গোষ্ঠির বিরোধীতা, যারা বাংলাদেশের জামায়াতিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় মমতা ব্যানার্জীর বিরোধীতার কারণে যখন তিস্তা চুক্তি হলো না, তার অব্যবহিত পর কোলকাতার গড়ের মাঠে এক বিশাল জনসভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তির বিরোধীতা করে মমতা ব্যানার্জী ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে ২০০১-২০০৬ মেয়াদের মতো জামায়াতপন্থি সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় এলে পুনরায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে, এই কঠিন সত্য মমতা ব্যানার্জী বুঝছেন না। তখনই বোঝা গিয়েছিল বিজেপির পরবর্তী টার্গেট হবে পশ্চিমবঙ্গ। এই নির্বাচনের সময়ে বিজেপির প্রচারণার কৌশল ও গুরুত্ব দেখেও সেটা বোঝা গেছে। অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি আলাদা আলাদাভাবে পশ্চিমবঙ্গে সাত-আটবার করে নির্বাচনি জনসভা করেছেন। আগামী ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচনে বিজেপি সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে তা এখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। তৃণমূল থেকে ইতোমধ্যেই দুইজন বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সভার ৫০ জন কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগদানের খবর বেরিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন ডুবন্ত উন্মুখ জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের হাতে গত পাঁচ বছর বিজেপির যে ৫০ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে, সেই ৫০ জনের পরিবারকে দিল্লীতে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেসের এককালের নিবেদিত ভোট সব গিয়ে পড়েছে বিজেপির বাক্সে। খবর বেরিয়েছে তৃণমূলের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে শক্তিহীন বাম এবং কংগ্রেসের ভোটাররা বিজেপির ঘরে ঢুকেছে। অনেকে বলছেন, বামের ভোট এবার রামে গেছে।

এই যে, প্যারডিস শিফট বা ভূমিধস পরিবর্তন তা কি আগামীতে ভারতের জন্য ভাল হবে, নাকি মন্দ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে উদার প্রগতিবাদি ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার ওপর আস্থাবান মানুষ কিছুটা হলেও যে শঙ্কিত সে কথা বলতেই হবে। দক্ষিণে তামিলনাড়ু ও কেরালায় বিজেপি বিরোধী শক্তি অটুট থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অন্ধ প্রদেশ এবং ওডিশায় বিজেপির মিত্র পক্ষই লোকসভার আসনে বিপুল জয় পেয়েছে এবং একই সময়ে অনুষ্ঠিত বিধান সভার নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় উঠেছেন। মোদি বিরোধী ব্লকে থাকা অন্ধ প্রদেশের ক্যারিশম্যাটিক নেতা চন্দ্রবাবু নাইড়ু রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন এবং তার স্থলে মূখ্যমন্ত্রী হলেন মোদি ঘনিষ্ঠ তরুণ নেতা জগমহল রেড্ডি। ওডিশায় বিজেপি মিত্র নবীন পাটনায়েক বিপুল বিজয় নিয়ে পঞ্চমবারের মতো মূখ্যমন্ত্রী হলেন। এক সময়ে বিহারের প্রতাপশালী নেতা লালু প্রসাদ যাদব, তার পরিবার ও দলের কোনো নিশানা নেই। সেখানেও নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডি-ইউ) ও বিজেপি জোট বেশীরভাগ আসন দখল করেছে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সেখানে কোথাও কংগ্রেস নেই। প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলগুলো সব বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেছে। সর্ব ভারতীয় রাজনৈতিক মেরুকরণে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির অবস্থান এখন অনেকটাই ১৯৪৭ সালের অব্যবহিত পর স্বাধীনতা উত্তর সময়ে জওহরলাল নেহেরুর কংগ্রেসের মতো হতে যাচ্ছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। সুতরাং প্রশ্ন ওঠেছে, তাহলে কি নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো নেতৃত্ব বা রাজনৈতিক পক্ষ আপাতত ভারতে থাকছে না। ভারতের মতো এত বিশাল আয়তন ও জনসংখ্যার দেশে প্রবল আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সঙ্গে এত বেশী জাত-পাত, ভাষা, সংস্কৃতির বহুত্ববাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিহীন শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠান কি আগামী দিনে ভারতের জন্য মঙ্গলজনক হবে? এই প্রশ্ন ওঠার পিছনে অনেক প্রেক্ষাপট ও সঙ্গত কারণ রয়েছে।

বিজেপির সর্ব ভারতীয় বিশাল উত্থানের পিছনে শক্তি হিসেবে কাজ করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদি সংগঠন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) এবং শিব সেনার মত দল। ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরপেক্ষ খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া হাউসের ভাষ্যকারদের মতে বিজেপির এই ভূমিধস বিজয়ের পিছনে গত পাঁচ বছর তাদের শাসনের সফলতা যতটুকু না কাজ করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি কাজ করেছে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত নেতৃত্বের কারিশমা এবং তার সঙ্গে কট্টর জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্ববাদের স্লোগান। নির্বাচনের প্রচার অভিযানে যে তিনটি প্রধান ইস্যু বিজেপি সামনে রেখেছে তার বাস্তবায়ন শুধু ভারত নয় পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রথমত অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ। ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা এবং সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের প্রচেষ্টার জের ও সূত্র ধরে এ পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরে যা ঘটেছে সেদিকে তাকালে এই লেখার একেবারে শুরুতে উল্লেখ করা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের কথাই স্মরণে আসে। হিন্দু-মুসলমান, একই বৃন্তে দুটি ফুল, কেউ আর রক্তক্ষরণ চায় না, কারো তা কাম্য হওয়া উচিত নয়। প্রথমত, ভারতে এখন প্রায় ২০ কোটি মুসলমান সম্প্রদায়ের আবাসভূমি। দ্বিতীয়ত, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (এনআরসি) বা নাগরিগত্ব ইস্যু। নির্বাচনের প্রচার অভিযানের সময় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মুখ থেকে এই ইস্যুতে যেসব কথা বের হয়েছে তা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। তৃতীয়ত, ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তারা বাতিল করবেন বলে বলেছেন। কাশ্মীরের বর্তমান যে অবস্থা তাতে এই ঘোষণা কার্যকর হলে সেটি পরিস্থিতিকে আরো বিপদজনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। ২০১৪ সালে কাশ্মীরের ছয়টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি তিনটি পেলেও এবার এই মহাবিজয়ের সময়ে একটি আসনও পায়নি। তবে একথাও বলতে হবে বিজেপির এই ভূমিধস বিজয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকের শঙ্কা থাকলেও একই সঙ্গে আশাবাদের জায়গাও কম নয়। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনে ভোটের রাজনীতি আর রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ২৩ মে ফল প্রকাশের পরপরই দিল্লির পার্লামেন্ট ভবনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সকল দলের ৩৫৩ জন লোকসভার সদস্যদের উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘক্ষণ দিক নির্দেশনামূলক গুরত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। সে সময়ে মঞ্চে লাল কৃষ্ণ আদভানি, মরলি মনোহর যোশীসহ জোটের সব শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মোদির পূর্বের স্লোগান সবকা সাথ, সবকা বিকাস, এবার নতুন করে তার সঙ্গে যোগ করেছেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা- সবকা বিশ্বাস। অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে সকলের উন্নতি এবং সবার বিশ্বাস তিনি অর্জন করতে চান। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের জন্যে কাজ করার কথা কয়েকবার ওই ভাষণে উল্লেখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

দ্বিতীয়ত জোর দিয়ে বলেছেন তিনি ভারতের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রাখবেন এবং তার পবিত্রতা রক্ষা করবেন। উপরোক্ত দুটি অঙ্গীকারের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত হয়েছে। আগামী দিনে দেশের ভেতরে ও বিশ্ব অঙ্গনে ভারতের যে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে তার বাস্তবায়ন চাইলে, উপরোক্ত অঙ্গীকার থেকে মোদি এবং তাঁর সরকারের সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভারতের অভ্যন্তরে যদি উগ্র হিন্দুত্ববাদের বাড়াবাড়ির ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে বিশ্ব অঙ্গনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের একটা বড় গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নরেন্দ্র মোদি নিজে এবং বিজেপি নিশ্চয়ই এ সব ইস্যুতে সতর্ক থাকবেন। ভারত নিশ্চয়ই অদূর ভবিষ্যতে মর্যাদাপূর্ণ নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে চাইবে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে ভারতকে অবশ্যই তার বহুত্ববাদের মূল্যবোধকে সর্বত্রই সমুন্নত রাখতে হবে। এটা নরেন্দ্র মোদি নিজে যেমন উপলদ্ধি করেন, তেমনি ভারতের সব পক্ষের পরিপক্ক রাজনীতিক ও সুশীল সমাজও সেটি বোঝেন। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনীতির সমীকরণে চীন-আমেরিকার টানাপোড়নে ভারত থাকবে ভারসাম্য রক্ষাকারীর ভূমিকায়। বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি টেনেই লেখাটি শেষ করছি। এতদিনে উভয় দেশের সব পক্ষের রাজনীতিক, মিডিয়া, সুশীল সমাজ সকলেই উপলদ্ধি করেছেন ভারত-বাংলাদেশের নিরাপত্তা, শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি একই সূত্রে গাঁথা। সুতরাং প্রত্যাশা করা যায় মোদির নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় সরকারের মেয়াদেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।

লেখক: রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।