ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বৃষ্টির কারণে ছাদের নিচে কী ক্রিকেট খেলা সম্ভব?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৫ পিএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হয়। কারণ ছিলো শুধুমাত্র বৃষ্টি। পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দু দলকে। সেদিন টিভি চ্যানেলগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পুরোনো খেলার হাইলাইটস দেখিয়েছিলো।

শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছে এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালে। তখনও বৃষ্টির উপদ্রবও কমবেশি হয়েছে। ইংল্যান্ড ছাড়া অন্য দেশেও যখন বিশ্বকাপ হয়েছে, সে সময়ও বৃষ্টিতে খেলা পন্ড হয়েছে বহুবার। পরে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটি মহামূল্যবান পয়েন্ট পেয়েছিল ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায়। যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যায়। উপমহাদেশেও ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বৃষ্টির জন্য একটি খেলা বিঘ্নিত হয়।

এই বৃষ্টি থেকে বাঁচার উপায় কী ?
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে খেলা সংক্ষিপ্ত করা, রিজার্ভ ডে, পয়েন্ট ভাগাভাগি করা, এগুলো বৃষ্টি সামাল দেবার এক ধরনের উপায় হিসেবে এর প্রয়োগ সব সময়ই হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো এত বড় টুর্নামেন্টে প্রতিটি খেলার জন্য কি রিজার্ভ ডে রাখা সম্ভব?

এ কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডসকে। তার কথা, ইংলিশ ওয়েদারের কথা মাথায় রেখে অনেকে হয়তো রিজার্ভ ডে চাইতে পারেন কিন্তু এত লম্বা টুর্নামেন্টে এরকম ব্যবস্থা রাখা সহজ নয়।’

এই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাদ দেওয়া যায় কিনা। এ বিষয়েও কথা উঠেছে। বৃষ্টির হাত থেকে উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্টকে বাঁচাতে লন্ডনের সেন্টারকোর্টে সচল ঢাকনা বসানো হয়েছে। অনেক ফুটবল স্টেডিয়ামেও ঢাকনা আছে। কিন্তু ক্রিকেটের মতো খেলায় এত বড় মাঠের স্টেডিয়ামেও কি ছাদ বসানো সম্ভব? ক্রিকেট ইতিহাসবিদ বরিয়া মজুমদার বলেন, এ পরীক্ষাও ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচের নজিরও আছে যেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছাদযুক্ত স্টেডিয়ামে! বলা বাহুল্য, ১২ ম্যাচের সবকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল একই ভেন্যুতে— অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে। ভেন্যুটি একইসাথে মারভেল স্টেডিয়াম এবং দ্যা ডোম হিসেবেও পরিচিত। ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর ইতিহাদ স্টেডিয়াম নামে ছিল খ্যাতি। প্রতিষ্ঠার পর দুই বছর কলোনিয়াল স্টেডিয়াম এবং পরবর্তী প্রায় ৮ বছর টেলস্ট্রা ডোম হিসেবে পরিচিত ছিল।

নামের ইতিহাস টেনে আনার কারণ, এই ভেন্যুতে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট, সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার শুরু হওয়ার বছরেই। সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, মাইকেল বেভান হাঁকিয়েছিলেন ছাদের নিচে প্রথম আন্তর্জাতিক শতক। তিন ম্যাচ সিরিজের পরের ম্যাচ একই ভেন্যুতে টাই হয়েছিল এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে একই ভেন্যুতে জয় পেয়েছিল প্রোটিয়ারা।

২০০২ সালে পাকিস্তানের অস্ট্রেলিয়া সফরে ৩ ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে এই ভেন্যুতেই একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া বিশ্ব একাদশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে জমজমাট তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল তৎকালীন টেলস্ট্রা ডোম স্টেডিয়ামে। ঐ ম্যাচে মাইক হাসির হাঁকানো একটি বড় শট আটকে যায় স্টেডিয়ামের ছাদে।

২০০৬ সালে শেষবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখা যায় ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে। যার একটি ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা এবং অপর দুটি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মত ছাদের নিচে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।

ছাদের নিচে ক্রিকেট ম্যাচের কথা বললেই অনেকে ভেবে বসেন ইনডোর স্টেডিয়ামের কথা। সেসব স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যানের হাঁকান শট সহজেই ছুঁতে পারে সীমানা। তবে ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে বাউন্ডারির সীমানা মোটেও ছোট নয়। বলে রাখা ভালো, ১২টি ম্যাচের সবগুলোতেই কিন্তু ছাদ ব্যবহার করা হয়নি। কেবল বৃষ্টি এলেই খুলে দেওয়া হতো ছাদ, যা নিজেকে মেলে ধরতে বা গুটিয়ে নিতে মোট ৮ মিনিট সময় নেয়।

প্রশ্ন জাগতে পারে— ব্যাটসম্যানের হাঁকান শটে বল ছাদ স্পর্শ করলে কী পরিণতি হয়? উত্তর হল— ঐ বলকে গণ্য করা হত ডেড বল হিসেবে।

ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিগ ব্যাশের ম্যাচও। ২০১৮ সালে মেলবোর্ন রেনিগেডসের বিপক্ষে পার্থ স্কচার্সের অ্যাশটন টার্নারের হাঁকান একটি শট ছাদে আটকে যায়। অবশ্য ঐ বলে সতীর্থ অ্যাশটন অ্যাগারের সাথে প্রান্ত বদল করেছিলেন টার্নার, অর্থাৎ বিগ ব্যাশে বলটি ডেড বল হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

ডকল্যান্ড স্টেডিয়াম পৃথিবীর অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামগুলোর একটি। ভেন্যুর গ্যালারিতে থাকা আসন প্রয়োজন অনুযায়ী একসাথে সরান যায় সামনে-পেছনে। ক্রিকেট ম্যাচ একসাথে দেখতে পারেন ৪৮ হাজার দর্শক। রাগবি ও বিশেষত ফুটবল ম্যাচের ভেন্যু হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, স্টেডিয়ামের কাঠামোগত কারণে সেক্ষেত্রে বেড়ে যায় ধারণক্ষমতা।

এনএম//আরকে