ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৫০ পিএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আখ্যা দিয়ে এর বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন, এই বাজেট যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সকলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন, যেন বাংলাদেশটাকে আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারি।’ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।

বাজেটের পরের দিনটি অর্থমন্ত্রী বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এমন রেওয়াজ থাকলেও এদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী অসুস্থবোধ করলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পক্ষে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পাঠ করে ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে আজকে একটা মর্যাদা পেয়েছে এবং বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে পারে। সবদিক থেকেই আজকে বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেই গতিটা যেন চলমান থাকে সেই আকাংখা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই আমরা প্রতিষ্ঠা করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত সমৃদ্ধ সোনর বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।

সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শ্লোগান সম্বলিত এ প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ।
এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলনটি উপস্থাপনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন,পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির প্রধানমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব সহ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল ৩টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সেই লক্ষ্যমাত্রার পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।’ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। গ্রাম হবে আধুনিক শহর।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভুর্তকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮টি মেডিকেল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউট খোলা হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগসহ সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বাজেট নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা- প্রশংসিত হলেও কারও কারও এটা ভালো লাগে না। আসলে ‘ভালো না লাগা পার্টি’র কিছুই ভালো লাগে না। কিছু সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বচ্ছল ও উচ্চ আয়ের মানুষকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে একজন সাংবাদিকের একটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। এতো সমালোচনা করেও আবার বলবে, আমরা কথা বলতে পারি না। আমার কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ খুশি কি-না। তারা লাভবান হচ্ছে কি-না, এটাই দেখার বিষয়। আজকে আমাদের এগারোতম বাজেট। এটা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। এর সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা এবং স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য। আমি মনে করি আমরা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল। আগে বিশ্বদরবারে ভিক্ষুকের জাত বলতো, এখন আর কেউ এটা বলতে পারে না। এটাই বড় অর্জন। এমন অর্জন সত্ত্বেও সমালোচনা। যারা সমালোচনা করে, করে যাক। ভালো কিছু বললে গ্রহণ করবো, মন্দ কিছু বললে ধর্তব্যে নেবো না।

প্রধানমন্ত্রী যত্রতত্র অনলাইন নিউজপোর্টাল গজিয়ে উঠছে উল্লেখ করে নিউজপোর্টালগুলো নিবন্ধনের তাগিদ দিয়েছেন।’

সূত্র-বাসস

এনএম//আরকে