ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আরাফার দিনেও জুলুমকারী ক্ষমা পাবেন না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১৭ পিএম, ১৬ জুন ২০১৯ রবিবার

একজন মানুষ যতই নেককার হোক, যতই নামাজ-রোজা তাসবীহ-তাহলীল করুক, যদি সে জুলুমকারী হয় তবে তার জন্য শাস্তি অনিবার্য। সে পৃথিবীতে ও পরকালে লাঞ্ছিত হবে।

জুলুম বা অত্যাচার জঘন্যতম অপরাধ। জুলুমকারী যত সৎকর্মই করুক না কেন তা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শেষ বিচারের দিনে শাস্তি প্রদান থেকে বাঁচতে পারবে না।

যে জুলুম করে সেই জালেম। জালেমের কোনো ধর্ম নেই, তারা মানবতার শত্রু। জালেমের শাস্তি আল্লাহ খুব দ্রুত দিয়ে দেন কেননা মজলুমের অভিশাপ আল্লাহর কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়। আর আল্লাহ জালিমকে অভিশাপ দেন। সে লাঞ্ছিত হবে পৃথিবীতে ও পরকালে। আল্লাহর রাসূল (সা.) এ জন্য আমাদের সবাইকে জুলুম তথা আল্লাহর অভিশাপের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।

আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, সাবধান, জালিমদের ওপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ। (সাফওয়ান ইবনে আল মাহদী : বুখারী ১৩৭১)

বল প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করা, নির্ধারিত কাজের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয়া, অহেতুক কাউকে শাস্তি দেয়া, অবিচার করা, নিয়োগকৃত শ্রমিককে পর্যাপ্ত খাবার না দেয়া, নির্ধারিত সময়ে মজুরি না দেয়া ইত্যাদির সঙ্গে খারাপ আচরণও জুলুমের মধ্যে পড়ে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেন, জুলুম জালিমের জন্য কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে আসবে। (বুখারী) ১৩৭৫)

জুলুম বা নির্যাতন এত মারাত্মক অপরাধ। হজের আরাফার দিনেও আল্লাহ জুলুমকারীকে ক্ষমা করবেন না। আব্বাস বিন মায়দাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) আরাফার দিনে তার উম্মতের ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ উত্তরে বললেন- আমি জুলুমের অপরাধ ব্যতীত অন্যদের অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি জালেমের কাছ থেকে নির্যাতিতের পক্ষে যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিয়েই ছাড়বো। (তিরমিযি)

অত্যাচারী আচার-আচরণে যতই ধার্মিকের মুখোশ পরে থাকুক না কেন আল্লাহর অভিশাপ তার উপর পড়বেই। জালেম যতই পূণ্যের ভাণ্ডার জমা করুক না কেন তার কোন মুক্তি নেই। কেননা আল্লাহ কিয়ামতের দিন মজলুমের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবেন। যার বিরুদ্ধে আল্লাহ স্বয়ং দাঁড়িয়ে যাবেন সে কিভাবে মুক্তি পেতে পারে।

এ জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) যিনি মানবতার মুক্তিদূত ও মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী তিনি জুলুম না করতে ও জালেমকে সাহায্য না করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাসূল (সা.) বলেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দও করবে না। যে কেউ তার ভ্রাতার অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণে তৎপর থাকবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের মধ্যে বড় বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণিত : বুখারী ১৩৭২)

যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি চায় তার উচিত মানুষকে কষ্ট দেয়া বা জুলুম করা থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকা। কেননা জুলুমের বদলা মজলুমের কাছ থেকে নেয়া হবে এবং আল্লাহ জুলুমের পাপ নিজে ক্ষমা করবেন না। সামান্যতম জুলুম ও অবিচার পাহাড় পরিমাণ সৎকর্মকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারে। তাই নিজেদের স্বার্থেই আমাদের প্রত্যেককে জুলুমের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।

তথ্যসূত্র : ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের সোপান গ্রন্থ।

এএইচ/