ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কলা তো খাচ্ছেন, জানেন কী এর কত গুণ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৪:৩২ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার

সবচেয়ে সহজলভ্য হলো কলা। রাস্তার আশপাশের চা এর দোকানে তাকালেই দেখা মিলে কলার। রাস্তায় হাঁটছেন, কলা দেখেই খেয়ে নিচ্ছেন দুটি। অফিস থেকে ফেরার পথে এক কাঁদি কলা হাতে ঢুকছেন বাসায়। এ দৃশ্য সচরাচর সর্বত্রই দেখা যায়।  সকালের নাস্তার টেবিলে অনেকেই  রাখছেন কলা। বাচ্চাদেরকেও কলা খাবার তাগিদ দিচ্ছেন। আমরা প্রতিনিয়ত যে এতো কলা খাচ্ছি, আসলে কি আছে কলায়? চিন্তা করেছেন কখনও? জেনেছেন কখনও কলার গুণাগুণ। আসুন জেনে নেই কলার গুণাগুণ।

গুণে সমৃদ্ধ ফল হলো কলা। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সঙ্গে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোনো তাজা ফলের তুলনায় বেশি।

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলার খাদ্যগুণ

পানি ৭০.১%, আমিষ  ১.২%, ফ্যাট (চর্বি) ০.৩%, খনিজ লবণ ০.৮%, আঁশ  ০.৪%, শর্করা ৭.২%, ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ৮ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সিও রয়েছে কলায়।

কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা শরীরে শক্তি যোগায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এবার জানা যাক কলার বিস্তারিত গুণাগুণ :

কর্মশক্তি যোগায়

কলার মধ্যে থাকা তিন ধরনের প্রাকৃতিক চিনির শক্তিশালী মিশ্রণ (ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ) আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে এবং আপনাকে যোগান দেয় দিনের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি। প্রতিদিনের খাবারে রাখুন কলা এবং যখন অতিরিক্ত ঘর্মাক্ত হয়ে দুর্বল অনুভূব করেন তখনই কলা খাবেন। শরীরে বল আসবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কলার মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ২টি করে কলা খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। এ ছাড়া হজম শক্তিও বাড়ায় কলা।

শরীরে প্রোবায়টিকের যোগান দেয়

প্রোবায়টিকের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হলো কলা। এতে রয়েছে ফ্রুক্টোওলিগোস্যাকারাইড (FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমাদের দেহের অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়টিক গ্রহণ করা প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

কলায় থাকা উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম ও নিম্নমাত্রার সোডিয়াম শরীরের রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া হৃদরোগের জন্য কলা অত্যন্ত সহায়ক। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্যেও কলা উপকারী। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন ২টি কলা খেতে পারেন।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

কলায় থাকা আয়রন রক্ত কোষকে উজ্জীবিত করে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। এর ফলে অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনা কমে। এমনকি অ্যানিমিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা।

স্নায়ুকে শান্ত করে

কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ হওয়ায় কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়ুবিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি যা স্নায়ুকে শান্ত করে।

দুশ্চিন্তা দূর করে

মানসিক চাপ কমায় এবং একইসঙ্গে মানসিক কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে কলা। তাই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা স্ট্রেসফুল কাজ শুরু করার পুর্বে একটি কলা খেয়ে নিতে পারেন, অনেক উপকার পাবেন।

পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শক্তি যোগায়

বড় ধরনের শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামে শক্তি যোগায় কলা। এটি শরীরের পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে তোলে। যেহেতু এটি শারীরিক পরিশ্রমে প্রচুর সহায়তা করে, তাই ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।

ঘুমের জন্য সহায়ক

কলায় ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা সেরোটিন নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন ঘুমের জন্য সহায়ক।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

অধিক ক্যালরি সম্পন্ন খাবারের বিকল্প হিসেবে কলা খাওয়া হলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। মাঝারি আকৃতির একটি কলায় মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে ক্রোমিয়াম নামক খনিজ পদার্থ, যা বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করে

ধূমপান ছাড়তে চাইলে বেশি করে কলা খান। কারণ কলায় উপস্থিত ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে।

তাছাড়াও কলাতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালিশিয়াম থাকে যা শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। এছাড়া যারা হাড়ের বা বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের খাদ্যাভাসে কলা রাখতে পারেন। কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি মাথাব্যাথার প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে।

তথ্যসূত্র : স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বই এবং ইন্টারনেট।

এএইচ/