ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মোংলা ইপিজেডে বন্ধ ৮ ফ্যাক্টরি

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ০৮:৩৭ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার

বিনিয়োগকারী টানতে পারলেও ব্যবসায়ীদের সমস্যা মিটাতে ব্যর্থ হচ্ছে মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। সমস্যার সমাধানে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় এ ইপিজেডে তিন বছর ধরে আটটি ফ্যাক্টরি বন্ধ আছে। ওইসব ফ্যাক্টরি থেকে উৎপাদিত পণ্য শুধু যেত ভারতে। ভারতের ব্যবসায়ীদের মোংলা ইপিজেড থেকে পণ্য নিতে অতিরিক্ত টাকা গচ্ছা হওয়ায় পণ্য নেওয়া থেকে বিরত থাকে। আর তারপর থেকেই দৃশ্যত মোংলা ইপিজেডে আটটি সুপারি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়।

‘মোংলা ইপিজেড এক্সপোর্ট এ্যাসোশিয়েশনে’র সভাপতি গালিব কাপাডিয়া জানান, ভারত সরকার তাদের ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিএফটিআইয়ের (ডায়রেক্টর জেনারেল ফরেন এ্যাসোসিয়েশন) এক ঘোষণায় জানান, বাইরে থেকে কোন পণ্য আমদানি করতে হলে ৩৬’শ থেকে চার হাজার ডলারের মধ্যে আমদানি করতে হবে, এর নিচে হলে ভারতে পণ্য আমদানি করা যাবে না। তাই এখন ২৫১ রুপির ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরা ২০১৬ সাল থেকে মোংলা ইপিজেড থেকে পণ্য নেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে ২০১৬ সালের আগে দুই হাজার ডলারের মধ্যে পণ্য আমদানির নিয়ম ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে।  

মোংলা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী কাপাডিয়া আরও বলেন, ভারত সকারের এই রেট বিশ্বের কোন রাষ্ট্রে নেই। তাই আমাদের কর্তৃপক্ষ এ জন্য সমাধানের উদ্যোগ নিলে ওখানকার ব্যবসায়ীরা আমাদের সুপারি ফ্যাক্টরিগুলো থেকে পণ্য নিত এবং ফ্যাক্টরিগুলো আবার সচল হত বলে জানান তিনি। 

তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া আটটি ফ্যাক্টরির কর্মকর্তাদের বেতন ও ইপিজেডের ভাড়া (ল্যান্ড টেক) দিয়ে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কোনও সহযোগিতা করছেন না বলে জানান এ ব্যবসায়ী। সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, এনবিআরসহ সরকারের একাধিক সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েও কোন সমাধান পাননি বলেও মোংলা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠা ব্যবসায়ী কাপডিয়া জানান।

কাপাডিয়া আক্ষেপ করে আরও বলেন, “এখানে ব্যবসায়ীদের কি সুযোগ সুবিধা দিতে হবে তা মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষের মাথায় নেই, মাস শেষ হলেই ফোন করে শ্রমিকদের বেতন দিতে চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। এটাই হচ্ছে তাদের মাস শেষে ওয়ার্ক। অথচ আমাদের ফ্যাক্টরি কেন আট বছর ধরে বন্ধ, সাত থেকে আট কোটি টাকার পণ্য (সুপারি) পচে নষ্ট হচ্ছে-তার কোন খবর নেয় না তারা”। আর যখন ফ্যাক্টরি চালু ছিল তখন প্রতি বছর ৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এখান থেকে রপ্তানি করতাম, কিন্তু এখন তা বন্ধ।

আটটি সুপারির ফ্যাক্টরি দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধের কথা স্বীকার করেছেন ইপিজেড কর্তৃপক্ষও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোংলা ইপিজেড এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এখানকার সুপারি রপ্তানিকারকদের এইচ এস কোট নিয়ে একটা সমস্যার কারণে ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে পণ্য রপ্তানি কোট দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। এনবিআর থেকে পণ্য রেট কোটের সংশোধনি হলে পরে ওই রেটে ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা শুরু করবেন বলে তিনি জানান”।

 এছাড়া ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, মোংলা ইপিজেডে এখন আগের তুলনায় অনেক বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে এ ইপিজেডে ব্যাগ, চুল, গার্মেন্ট পণ্য ও কার্টুনসহ মোট ২৮টি ফ্যাক্টরি চালু আছে। আরও ১৫টি ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতু ও ফয়লায় নির্মানাধীন বিমান বন্দরকে ঘিরে ইপিজেডে বিনিয়োগ বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

২০০১ সালের ১ মার্চ মোংলা ইপিজেড থেকে প্রথম রপ্তানি শুরু হয়। এরপর পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোংলা ইপিজেডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকায় তেমন রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। তবে ২০০৮ সালের পর বর্তমান সরকারের বহুমূখী উদ্যেগের কারণে এ ইপিজেডের ব্যবসায়ীদের ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) জনসংযোগ কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, গত ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে মোংলা ইপিজেডের পূঞ্জিভূত বিনিয়োগের পরিমান দাড়িয়েছে ৪৫ কোটি থেকে ৫২৫ কোটি টাকায়। এখানে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯৫ কোটি থেকে ৪৮০০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১০ বছরে এখান থেকে রপ্তানির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ গুন। আর বিনিয়োগ বেড়েছে ১২ গুন।

তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরকে ঘিরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মোংলা ইপিজেডের চিত্র পাল্টে যাবে। দেশের অর্থনীতির সার্ভিক উন্নোয়নের পাশাপাশি মোংলা ইপিজেডের অবস্থান এক নম্বরে থাকবে বলেও জানান তিনি।

 কেআই/