ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী চাঁদের কণার আহাজারি

আউয়াল চৌধুরী

প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৪১ পিএম, ৩০ জুন ২০১৯ রবিবার

নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন চাঁদের কণা। কিন্তু বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটি চাকরি জোটাতে পারেননি। জীবনের নির্মম বাস্তবতায় এবার অসহায়ের মতো এসে বসেছেন রাস্তায়, অনশন করছেন- প্রত্যাশা একটি সরকারি চাকরি।

পুরো নাম মাহবুবা হক চাঁদের কণা। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে কণা সবার বড়। বাবা আবদুল কাদের দীর্ঘ দিন থেকে অসুস্থ। আর মা হাসনা হেনা ১০ বছর আগে মারা যাওয়ায় ছোট দুই ভাই ও অসুস্থ বাবার দায়িত্ব চলে আসে তার কাঁধে।

চাঁদের কণা বলেন, ‘‘আমি কাজীপুর থানা সদর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী গার্লস অর্থনীতি কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। খেয়ে না খেয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছিলাম। সেখানে আমার তেমন কোনো বন্ধু ছিলো না। কেউ আমার সঙ্গে তেমন কথাও বলতো না। একা একাই লড়াই করছিলাম। কলেজের সিডিঁ বেয়ে উপরে উঠা আমার জন্য অনেক কষ্টের তবু আমি হাল ছাড়িনি।

‘‘ভর্তির ছয় মাসের মাথায় হঠাৎ আমার মা মারা যান। তারপর আমি দিশেহারা হয়ে যাই। রাজশাহী ছেড়ে এলাকায় ফিরে আসি। আমার মা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কত কষ্ট করে আমাকে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। মা মারা যাওয়ার পর আমরা বিপাকে পড়ে যাই। ছোট দুই ভাই এবং অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। সংসার চালানো আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়।’’ বললেন চাঁদের কণা।

কণার ভাষ্য, আমি হাঁটতে পারি না। চলাফেরা করা কঠিন। তাই বহু জায়গায় একটি চাকরির জন্য চিঠি দেওয়া শুরু করলাম। অবশেষে একটি ছোটখাটো চাকরি পেয়ে ঢাকায় আসি। সামান্য টাকাতে তখন আমার, বাবার ওষুধ খরচ, ছোট ভাইদের পড়াশুনা হয়ে উঠে না। এরপরও আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাই। রাজশাহী থেকে পাশ করার পর ঢাকায় ইডেন কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হই। এখান থেকে আমি ২০১৩ সালে প্রথম বিভাগে পাশ করি।

তিনি বলেন, চেষ্টা করতে থাকি একটি সরকারি চাকরির। পাগলের মতো হয়ে কত জনের কাছে যাই। কেউ আমাকে চাকরি দেয় না। বর্তমানে আমি এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছি যে আমার চলার মতো আর কোন অবস্থা নেই। তাই একটি সরকারি চাকরির জন্য অনশনে বসেছি।

কণা বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই তিনি যেন আমাকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। আমার চাকরির বয়সও শেষ পর্যায়ে। আমার মা নেই। তিনি আমার মায়ের মতন। তিনি ছাড়া আমার আর যাবার কোনো জায়গা নেই।

মাহবুবা হক বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে, লড়াই করে পড়ালেখা করেছি। আমি সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না। আমি কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই।

চাঁদের কণার চোখে বিন্দু বিন্দু পানি। প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত অবস্থায় বললেন, এখানে তিনদিন ধরে অনশন করছি। কোথাও থাকার জায়গা নেই। পুলিশ আমাকে একটি আবাসিক হোটেল ঠিক করে দিয়েছে, রাতের বেলা সেখানে থাকি। আমার যদি সরকারি চাকরি না হয় তাহলে আমি এখানেই অনশন করে মরে যাব। আমিতো পড়াশোনা করেছি। কাজ জানি। তাহলে কেন আমাকে কেউ চাকরি দেয় না?

এসি