ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

দুধে এন্টিবায়োটিক: গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে ধূম্রজাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৮ পিএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার

বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত দুধসহ ৭২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে কিছু পণ্যকে মানহীন ও দুধের মধ্যে এন্টিবায়োটিকের নমুনা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তারা। কিন্তু এই রিপোর্টের দায় ভার নিচ্ছে না খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ-ই।

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেছেন, অসৎ ব্যবসায়ীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে মিল্কভিটার দুধে আর্সেনিক ও ফরমালিন থাকার কথা বলেছে, এটি একটি সর্বস্ব মিথ্যা কথা বলে দাবি তার। এদিকে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তাহলে ঢাবি শিক্ষকদের এই রিপোর্টের ভিত্তি কী? এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক গবেষণা টেস্টের রিপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে কী করবেন? আপনি কি কেমিস্ট? আমাদের রিপোর্টগুলো কোনো কোম্পানি বা কাউকে দেয়ার কথা না। আমাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। ইউনিভার্সিটির ফান্ড থেকে এ কাজ করছি। আমরা কোনো কোম্পানির হয়ে কাজ করি না।

ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যানের প্রতিবাদ ও এর দায়ভার না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি তার কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, আমরা তো কাউকে দায় নিতে বলিনি। উনি যা বলছেন সেটিও ঠিক, আমরা যা বলেছি সেটিও সঠিক। পুরো বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। আমাদের প্রতিবেদনে যে অ্যান্টিবায়োটিক-ডিটারজেন্ট পাওয়ার কথা বলা হয়েছে এ বিষয়ে কোম্পানিগুলো একটু সতর্ক হলেই ঠিক হয়ে যাবে। একইসঙ্গে দুধের প্যাকেটজাত কোনো নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি না পাওয়ার বিষয়টিও বেশ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষকদের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, আমরা সচরাচর যেসব গবেষণা করে থাকি, তার রিপোর্ট কখনও সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করি না। এটা আমাদের কাজ না। আমরা সেগুলো বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করি। এরপর সরকার যদি মনে করে এসব তাদের দরকার, তাহলে তারা আমাদের কাছে আসে। তখন আমরা তাদের কাছে ডাটাগুলো সরবরাহ করি। আমরা কখনও সেগুলো তাদের কাছে গিয়ে দিই না। কিংবা সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকেও জানাই না। যারা এগুলো করে আমার মনে হয় কোনো একটি বিশাল উদ্দেশ্য থাকে এসবের পেছনে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আমি মনে করি এটি একটি সময়পোযোগী পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের ফলে মিল্কভিটা, তার যে দুধের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার সেটি বন্ধ হবে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত পরশু বাংলাদেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ঢাকা ইউনিভার্সিটির একটি টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে বলছে, মিল্কভিটায় আর্সেনিক আছে। মিল্কভিটা দুধের মধ্যে না-কি ফরমালিন আছে। এটি একটি সর্বস্ব মিথ্যা কথা।

অন্যদিকে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি প্যাকেটজাত দুধের বিষয়ে। সেখানে এসব দুধে আশঙ্কাজনক কিছু নেই বলে জানানো হয়। ব্র্যান্ডগুলো হলো- পুরা, আয়রান, আড়ং ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, মো, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আল্ট্রা, তানিয়া (২০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম), ইগলু, প্রাণ মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, মিল্ক ফ্রেশ, এবং কাউহেড পিওর মিল্ক।

ঢাবি শিক্ষকদের এই রিপোর্টের বিষয়ে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা একুশে টিভিকে বলেন, আমাদের দুধ সম্পূর্ন নিরাপদ। আমরা সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিভাবে গরু পালন করতে হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়ে থাকি। আর নিরাপদ দুধই সরবারহের চেষ্টা করি। শুধু বাংলাদেশে না বিদেশেও আমাদের দুধ সরবারহ করা হচ্ছে। একটি মহল সবসময় চায়,আমরা যেন সবসময় আমদানীকৃত দুধের উপরই নির্ভর করি। তাই এসব অপপ্রচার চালায়। আর আমরা সবসময় চাই আমাদের দেশের দুগ্ধ শিল্প সমৃদ্ধ হোক।

এনএম/আরকে