বাংলাদেশের সঙ্গে ৮ চুক্তি হবে চীনের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া সরকারপ্রধানের সফরকালে চীনের শীর্ষ নেতাদের কাছে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরা হবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার (২৮ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন এ তথ্য জানান। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী ১-৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করবেন। এর মধ্যে ১-৩ জুলাই চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় যোগ দেবেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেট হলে অভ্যর্থনা জানানো হবে। অভ্যর্থনা শেষে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের আলোকে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।
তিনি আরও জানান, চীন সফরকালে আগামী ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝংসুর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা করেই বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ সহযোগিতা নেওয়া হয়। চীনের ক্ষেত্রেও তেমন অবস্থান আমাদের। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সব কিছুই বিবেচনায় নিয়ে থাকি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেই চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। আমরা যাতে চীনের ঋণের ফাঁদে না পড়ি সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। এর আগেও আমরা চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করেছি। কিন্তু সবগুলো ঋণ নেইনি। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে কত টাকার ঋণ চুক্তি হবে সেই পরিমাণ এখনও ঠিক হয়নি।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে ঋণের শর্তাবলির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে পাঁচ প্রকল্পে ঋণের সুদহার ২ শতাংশ। তবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে ঋণ-সংক্রান্ত যে সব চুক্তি হবে সেগুলোর সুদহার বেড়ে হচ্ছে ৩ শতাংশ। এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ফি এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে।
চীন সাধারণত দুই প্রকার ঋণ দেয়। এর একটি হলো- গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল)। অন্যটি প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি)। উভয় ঋণের সুদহার এর আগে ধরা ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে ঋণ চুক্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দাবি করে চীন। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে জিসিএল ঋণে সুদহার ২ শতাংশ এবং পিবিসি ঋণের সুদহার বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
ড. মোমেন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করবেন। চীনকে বার্তা দেবেন যে রোহিঙ্গা ইস্যু জিইয়ে থাকলে এ অঞ্চলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে, ব্যাহত হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। এসব বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সংকট সমাধানে চীনকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে বলবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন চীন সফরে শি জিংপিনের গত ২০১৬ সালে ঢাকা সফরের যৌথ ঘোষণা নিয়েও আলাপ হবে। ওই ঘোষণায় দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়েছে তা চলমান আছে। ওইসব চুক্তির অনেক কাজ চলছে। নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, রেল লাইন স্থাপন এসব প্রকল্প চলমান রয়েছে। দেশের স্বার্থে ঢাকা ব্যালান্স ডিপ্লোমেসি চালাচ্ছে। যেমন চীনের বেল্ট এন রোড ইস্যুতে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম যোগ দেয় এবং তা দেখে শুনে ও দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করে।
দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে, সেগুলো হলো- ১. ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালী ও বৃদ্ধিকরণ চুক্তি, ২. ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার শক্তিশালী ও বৃদ্ধিকরণে ঋণ চুক্তি, ৩. ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার শক্তিশালী ও বৃদ্ধিকরণে ক্রেতা অগ্রাধিকার ঋণ চুক্তি,
৪. পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) আওতায় পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ চুক্তি, ৫. বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি, ৬. বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই, ৭. ইয়ালুজংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বিনিময় সমঝোতা স্মারক এবং ৮. সাংস্কৃতিক ও পর্যটন বিনিময় সমঝোতা স্মারক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সরকারের আমন্ত্রণে আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই চীন সফর করবেন। এ সফরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উন্নয়নে চীনের সঙ্গে ৮টি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এসব চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকের মধ্যে ঋণ চুক্তিও রয়েছে।
আরকে//