চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ২০ কোটি টাকার আম
আমিনুল ইসলাম তন্ময়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পিএম, ৩০ জুন ২০১৯ রবিবার

ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে এখন সরগরম আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরই মধ্যে বাজারে নেমেছে নানা জাতের সুস্বাদু আম। দেশসেরা ক্ষিরশাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও নানা জাতের গুটি আম এখন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি ও উৎপাদন অনেক কম হলেও; এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এখানকার চাষীরা। পুরো জেলা মিলিয়ে প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার আম। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সব আমই বিক্রি হচ্ছে কিছুটা চড়া দামে। এতে চাষীরা খুশি হলেও; কিছুটা হিমসিম খাচ্ছেন ক্রেতা ও বাইরে থেকে আম কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা।
গত এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম বেঁচা-কেনা চললেও; ঈদের পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের আগমনে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বাজার। এখন প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২’শ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চককির্তি এলাকার আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, গত তিন বছরের ধকল সইতে হিমসিম খাচ্ছে ব্যবসায়ী আম বাগানী ও মালিকরা। এলাকায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বহু ব্যবসায়ী আমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বর্তমানে ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। আম ব্যবসার ক্ষতিতে তাদের ভেঙে গেছে মেরুদন্ড।
একই এলাকার ব্রজেন দাস জানান, উন্নয়ন সংস্থা(এনজিও) থেকে পর পর তিন বছর ৪৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি পথে বসেছেন। প্রেক্ষিতে এবার আর আম ব্যবসা করতে পারেননি তিনি। পাওয়াদার এনজিও’র দুর্ভাবনা তাকে তাড়া করে ফিরছে।
এবার গাছ ভর্তি মুকুল স্বপ্ন দেখিয়েছিল আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীদের। তবে মুকুলের শুরুতেই বৃষ্টিপাত, পরবর্তীতে গুটি অবস্থায় মিজ পোকার আক্রমন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বাধ সাধায়, সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তবে আমের উৎপাদন কমলেও; দাম গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন চাষীরা।
আম ব্যবসায়ী ধাইনগরের জামিলুর রহমান জানান, এবার মুকুল ফুটলেও আমের উৎপাদন তুলনামুলক ভাবে কম। ফলে আম ব্যবসায়ীরা বেশি মুল্যে বাগান ক্রয় করায় দাম অনেকটা বেশী এবার আমের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, আম মৌসুমে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে জেলার অর্থনীতি। আম পাড়া, পরিবহন, প্যাকিং ও বাজারজাতকরণে বেড়েছে মৌসুমী কর্মসংস্থানও। আড়তগুলোতে কর্ম ব্যস্ততা তাই চোখে পরার মত। আড়তদার ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন সামনের দিনগুলোতে এই ব্যস্ততা আরো বাড়বে। বাড়বে কেনা-বেচার পরিমান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যান তত্ত্ব ফল গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা জমির উদ্দিন জানান, কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর মুনাফা লোভী মনোবাভের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ব্যবসায় ধ্বস নেমেছিল, গত কয়েক বছর। কিন্তু বর্তমান সময়ের চলতি মৌসুমে প্রশাসনিক কাঠতার কারণে এবার আমের ব্যবসা অনেকাংশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তিনি জানান, এবার প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে ওঠা আম চাঁপাইনবাবগঞ্জহ থেকে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস স্থানে।
অপরদিকে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলার আমবাগানগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার থাকায় এবার পরিপক্ক এবং বিষমুক্ত ও শতভাগ নিরাপদ আমই বাজারজাত হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসন এজেডএম নুরুল হক। সেই সাথে এবার আমের নায্যমূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা এমনটিও জানান জেলা প্রশাসক ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুঞ্জুরুল হদা জানান, জেলায় এবার আমের আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। যার সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।
এনএম/আরকে