ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দৃষ্টিনন্দন পাখি মোহনচূড়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১২:০৬ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার

বাংলাদেশে সুন্দর পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মোহনচূড়া। এদেরকে চলার পথের পাখি অর্থাৎ প্যাসেজ মাইগ্রান্টও বলা হয়। মোহনচূড়ার ঝুঁটি বেশ আকর্ষণীয়। ঝুঁটিটি বেশ বড়, হাত পাখার মতো। ঝুঁটি মেলে ধরলে দারুণ সুন্দর দেখায়। এদের ডানা জেবরার মত স্ট্রাইপ, গলা এবং ঠোঁট লম্বা গড়নের। দেখতে এককথায় অপূর্ব।

পরিচিতি

ইংরেজি নাম Hoopoe, বৈজ্ঞানিক নাম Upupa epops. বাংলাদেশের একটি বিরল পাখি। তবে এশিয়া ও ইউরোপে এটি প্রচুর দেখা যায় এবং এরা বিলুপ্তির শংকামুক্ত। এদের অনেকগুলো উপপ্রজাতি রয়েছে। সেইন্ট হেলেনা প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে। পাখিটির নামকরণ `মোহনচূড়া` দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক বনফুল। এদের অন্যান্য নাম হুদহুদ, কাঠকুড়ালি ইত্যাদি। এই পাখি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, এর ঝুঁটি ও পাখার সৌন্দর্য একে বিশেষায়িত করেছে।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ- Animalia, পর্ব- কর্ডাটা, শ্রেণী- পক্ষী, বর্গ- Coraciiformes, পরিবার- Upupidae, Leach, 1820, গণ- Upupa, প্রজাতি- ইউ. এপপস্, দ্বিপদী নাম- উপুপা এপপস্।

বর্ণনা

মোহনচূড়া পাখি ২৫ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। লালচে বাদামি শরীর, ডানা ও লেজে সাদা ও কালো দাগ আছে। এর ঠোঁট লম্বা ও কিছুটা বাঁকানো। মাথায় ঝুঁটি দেখতে হলদে বর্ণ। উত্তেজিত হলে পাখিটি ঝুঁটি প্রসারিত করে। বাদামি পালকের মাথাটা কালো। এরা প্রতি মুহূর্তে ঝুঁটি মেলে এবং গুটায়।

এটি মেঠো পাখি, গ্রামের ঘর-বাড়ির আঙ্গিনায় দেখতে পাওয়া। গভীর অরণ্য এই পাখির পছন্দ নয়। শীতকালের শস্যক্ষেত, পতিত জমি ও ঘাসবহুল মাঠ এদের বিচরণ ক্ষেত্র। একাকি ঘুরে বেড়াতে এদের খুব পছন্দ। উড়ার ভঙ্গি কাঠঠোঁকরার মত। দুলে দুলে উড়ে।

বেশির ভাগ সময় মাটির উপরে হেঁটে হেঁটে পিঁপড়ে, কেঁচো, ছোট পোকামাকড় ধরে খায় মোহনচূড়া। এছাড়া লম্বা ঠোঁট মাঠের গর্তে ঢুকিয়ে পোকামাকড় ধরে খেয়ে থাকে।

বংশবৃদ্ধি

মোহনচূড়ার প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন মাস। গাছের কুঠোরে বা পুরনো বিল্ডিংয়ের ফাঁক-ফোকড়ে বাসা বাঁধে। ৫-৬টি ডিম দেয়। স্ত্রী পাখি ডিমে ১৮ থেকে ২০ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।

মানুষের সাথে সম্পর্ক

ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের জন্য উপকারি পাখি হিসেবে সমাদৃত মোহনচূড়া। এজন্য অনেক দেশে আইন করে একে রক্ষার ব্যবস্থা করেছে। মানব সভ্যতার বিভিন্ন যুগের সংস্কৃতিতে এই পাখির সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রাচীন মিসরে একে পবিত্র জ্ঞান করা হত। কোরআনে ও বাইবেলে এই পাখির উল্লেখ আছে। কোরআনের সূরা নামলের ২০-২২নং আয়াতে এই পাখির কথা বলা হয়েছে। একটি হুদহুদ পাখি নবী হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর পোষা ছিল এবং এর কাজ ছিল বিভিন্ন স্থান থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করে নবীকে জানানো। প্রাচীন পারস্যে এই পাখিকে সততার প্রতীক হিসেবে দেখা হত। তবে ইউরোপে একে চোর হিসেবে গণ্য করা হত। এস্তোনিয়ায় একে মৃত্যুর প্রতীকরূপে দেখা হয়।

তথ্যসূত্র : পাখি সংক্রান্ত বই এবং উইকিপিডিয়া।

এএইচ