ঢাকা, রবিবার   ১৮ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩২

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারে জেল-জরিমানা: তথ্যমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৮:০৫ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার

বাংলাদেশে প্রদর্শিত বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিরুদ্ধে আজ সোমবার (১ জুলাই) থেকেই অভিযানে নামছে ভ্রাম্যমান আদালত। এ ধরনের প্রচার নজরে আসলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জড়িতদের হতে পারে জেল-জরিমানার মতো শাস্তি।

সোমবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তথ্যমন্ত্রী জানান, বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের বিষয়ে জাদু মিডিয়া ও নেশন ওয়াইড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে আগেই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের চাওয়া সময়সীমা শেষের পর তাদের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিলো। সেই সময়ও গতকাল ৩০ জুন শেষ হয়েছে।

এ কারণেই আজ থেকে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা দুই বছরের জেল দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া কেবল আপারেটররা যাতে বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারে এবং টেলিভিশনের মালিকদের সংগঠনের নির্ধারণ করে দেওয়া ক্রম অনুযায়ী যেন টিভি চ্যানেল দেখানো হয়, তা নিশ্চিত করতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান ।

মন্ত্রী বলেন, বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করলে, আমরা যে ক্রম ঠিক করে দিয়েছি তা কেবল অপারেটররা অনুসরণ না করলে এবং কেবল অপারেটররা নিজেরো বিজ্ঞাপন বা অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করলে লাইসেন্স বাতিল এবং দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের আগে সেসব দেশের পরিবেশকরা বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন ছেঁটে শুধু অনুষ্ঠান প্রচার করে।

কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছিল না, বরং অনেক দেশি প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করছিল। তাতে দেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন হারাচ্ছে অভিযোগ করে সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছিলেন টেলিভিশন মালিকরা।

এই অবস্থায় গত এপ্রিলে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই কেবল অপারেটর ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান যাদু মিডিয়া ভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডকে বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের নোটিস দিলে দেশে ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের পাঁচটি চ্যানেলের সম্প্রচার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।

কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতারা পরে জানান, বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাদের।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া নোটিসের সময় গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। গত জানুযারি মাস থেকে তাদের বলা শুরু করেছি। তারা পাঁচ মাস সময় পেয়েছে, আরও সময় চায়, কিন্তু অনির্দিষ্টকাল সময় দেওয়া তো সম্ভব নয়, সেজন্য আমরা আইন প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের পক্ষ থেকে সম্প্রচারের তারিখ অনুযায়ী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুতে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং তারপরে প্রতিষ্ঠার তারিখ অনুযায়ী অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেল দেখাতে হবে।

এসব বিষয় তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বিটিভির প্রতিনিধি এবং তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে হাছান মাহমুদ জানান।

তিনি বলেন, বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন দেখানো কমেছে, এখনও বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেটিও আইনসিদ্ধ নয়। আমরা বাস্তবতার নিরিখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।… লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি বিদেশি টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে বলা হয়, “কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬’ -এর ধারা ১৯ এর ১৩ উপ-ধারার আলোকে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাংলাদেশে ডাউনলিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, আদেশ ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিদেশি টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউশনের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী অন্যান্য শাস্তি আরোপ করা হবে।
এই নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয় তথ্য বিবরণীতে।

এর আগে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশের টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মিডিয়া ইউনিক। গত ৫ নভেম্বর থেকে এনিয়ে আন্দোলন শুরু করে তারা।

গত ২০ নভেম্বর সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে যাচাই করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর গত ২৪ নভেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

ওই সময় বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য ডাউনলিংক করা এদেশীয় বিজ্ঞাপন সম্প্রচারকারী ন্যাশনাল ওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড ও ডিজি যাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সতর্ক করে নোটিশ দেওয়া হয়।

আরকে//