ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

যদি যাই থানায় জিডি করেই সন্দ্বীপ যাবো

কানাই চক্রবর্তী

প্রকাশিত : ০৮:০০ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৬:৩৩ পিএম, ৮ জুলাই ২০১৯ সোমবার

সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের নৈরাজ্য নিয়ে এর আগে দুটি লেখা লিখেছিলাম। এই ঘাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমি মগ বলেছিলাম। বর্গি, বাঘ,কলিজা খেকো খলিলউল্লাহ আরও কি কি নামে যেন অভিহিত করে তাদের থেকে এ ঘাটকে মুক্ত করার কথাও বলেছিলাম (আমার টাইম লাইনে গিয়ে পড়তে পারেন)। কিন্তু কাঙ্গালের কথা যেমন বাসি হলেও ফলেনি, এ হরিদাস পালের লেখায়ও কিছুই হয়নি। শুধু তাই নয় আমার চেয়েও বড় হরিদাস পালদের তৎপরতাতেও পরিস্থিতির সামান্যতম উন্নতিও হয়নি। কমেনি মগদের আগ্রাসি তৎপরতা। ঘাটের কলিজা খেকো খলিলউল্লাহরা আরও স্ফীত হয়েছে।

ঘাট নিয়ে দুর্বৃত্তায়ন যে আরও প্রবলভাবে বেড়েছে, ২৭ জুন বৃহস্পতিবারের ঘটনা তার প্রমাণ। কি হয়েছিল এদিন তা ভাইরাল হওয়া ছবি এবং বিভিন্ন সংবাদে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের কুমিরা ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাটের গুপ্তছড়া অংশে হামলার শিকার হয়েছেন চার যাত্রী। সন্দ্বীপের কুলে আসার পর সার্ভিস বোট থেকে যাত্রীদের কুলে নামানোর জন্য লালবোটে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোর প্রতিবাদ এবং লালবোটে নামতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই তাদেরকে নাজেহাল এবং নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন প্রবাসীও আছেন।

মূলত, দু’বছরের বেশি সময় আগে এ ঘাটেই লালবোট ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যুর পর ঘাট সংশ্লিষ্টদের আমি উপরোক্ত নামে অভিহিত করেছিলাম, কিন্তু বৃহস্পতিবারে চারজন যাত্রীকে নাজেহাল এবং নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তাদেরকে আমি কি নামে অভিহিত করবো তাই নিয়ে ঝামেলায় পড়েছি। কলিজা খেকো খলিলউল্লাহ নামে অভিহিত করার পর এ মুহূর্তে আগের বিশেষণগুলোর চেয়েও কোন খারাপ বিশেষণ আমার মাথায় আসছে না। যুৎসই শব্দের জন্য অভিধান বের করে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। আপনারা পড়ুন আর না পড়ুন আমি কুড়ি মিনিটের মধ্যেই এ লেখা শেষ করবো বলে মনস্থির করেছি। এ ফালতু (?) কাজের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা উচিতও নয়। তবে কথা দিচ্ছি আজ থেকেই আমি গুপ্তছড়া ঘাটের নরকের কিটগুলোর জন্য খারাপ খারাপ, প্রয়োজনে অশ্লীল বিশেষণ খুঁজে খুঁজে দেখবো। একেবারে জঘন্য শব্দের। অভিধানে না পেলে নিজেই খারাপ শব্দ আবিষ্কার করবো। কোন জন্তু জানোয়ারের নাম নয়। তারা এদের চেয়ে অনেক ভালো এবং উপকারি। প্রয়োজনে তাদের বাপ-দাদা এবং গড ফাদারকেও তুলে (মায়েদের না) আনবো। আমার পরবর্তী লেখায় আমি সেই সব মারাত্মক অশ্লীল এবং শব্দ অস্ত্র (বোমা) ব্যবহার করবো, যদি এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আরও হয়। আর এ ঘটনায় দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

আমি জানি আমার এ লেখাটিতে যা লিখবো তা কোন কাজে আসবে না। বরঞ্চ এ লেখার বিপরীতে তারা লুঙ্গি বা প্যান্টের চেইন খুলে আমাকে আদিম যুগ স্টাইলে মহামূল্যবান কোন অঙ্গও দেখিয়ে দিতে পারে (দুঃখিত লাইনটি অশ্লীল মনে হলে আমি তুলে নেব)। তবে আপাতত যেহেতু সন্দ্বীপ যাচ্ছি না তাই সাগরে ফেলে দেওয়ার ভয়ও করছি না। আর ভবিষ্যতে যদি সন্দ্বীপ যাই, তাহলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কোন থানায় জিডি করে যাবো। যদি আমাকে সাগরে ফেলা হয় কিংবা আমার যদি কিছু হয় তাহলে সন্দ্বীপের সমস্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ, বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তা ব্যক্তিরা দায়ী থাকবেন। আমার ক্ষমতা যদি কুলায় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতেও জানান দিয়ে যাবো। একই সাথে আমার সাংবাদিক বন্ধুদেরও জানাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা। কারণ সন্দ্বীপ আমার জন্মস্থান। কোন না কোন দিন আমি সন্দ্বীপ যাবোই। আমি সন্দ্বীপকে অনেক ভালোবাসি। আমার এ ভালোবাসা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য নয়, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান কিংবা এমপি হওয়ার জন্য নয়। জন্মগত কারণেই আমার এ ভালোবাসা। আমি সন্দ্বীপে জন্মেছি। বেড়ে উঠেছিও এখানে। আমি জানি আমার মতো অনেকেই সন্দ্বীপকে ভালোবাসেন, তারাও সন্দ্বীপ যেতে চান। বাপ-দাদার ভিটেমাটি দেখতে চান, কিন্তু সাগরে নিক্ষেপ হবেন এ ভয়ে নিজ জন্মভূমিতে যেতে পারেন না। লালবোট সাদাবোট নামে আজরাইলের ভয়ে নিজ ভূমে না ফিরতে পারার বেদনায় প্রতিনিয়ত তাদের রক্তক্ষরণ হয়।

এবার ঘাট নিয়ে ঘটনায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লালবোটে উঠতে অস্বীকৃতি জানানো এবং এর প্রতিবাদ করায় চারযাত্রীর যে পরিণতি, তা আমাদের সড়ক পথের নৈরাজ্যের কথাও মনে করিয়ে দেয়। বাস চালক এবং তার সহকারীরা প্রতিবাদকারী যাত্রীদের মাঝ রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে হত্যা করার সংবাদ মাঝে-মধ্যে পাওয়া যায়। বিপরীতে কম হলেও এসব বাসচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনাও কিন্তু কম নয়। কিন্তু বছর বছর ধরে গুপ্তছড়া ঘাটে যে নৈরাজ্য চলছে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এর আগে একই স্থানে লালবোট ঘটনায় ১৮ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। সেই ঘটনায় যারা দায়ি ছিল তাদের একটি লোম ছিঁড়তে না পারার কারণেই কি এ ঘাটে বারবার তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?

দেশে এখন সবচেয়ে আলোচ্য ঘটনা বরগুনায় প্রকাশ্যে একটি হত্যার বিষয়। এ ঘটনা সারাদেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড়। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থারও নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে যে (গুপ্তছড়া ঘাটে) প্রকাশ্যে যাত্রীদের মারধর করে নদীতে ফেলে দেওয়া হলো বা এর আগে ১৮ জনকে হত্যা করা হলো, তার কোন প্রতিকার দৃশ্যমান হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব ইজারাদারদের বিশেষ করে লালবোটের চালক বা স্টাফরা তো একেবারেই সাধারণ মানুষ, তাদের এই যাত্রী হয়রানির শক্তির উৎস কোথায়? কারা তাদের এত বেপরোয়া বানিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা আছে হয়তো। বিষয়টা আমার মনে হয় এখন আর অস্পষ্ট নয়। এ ঘাটকে কেন্দ্র করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা সবাই মিলে তৈরি করেছে একটি রাজহাঁস। সোনার ডিম সবার পেতে যায়। যেকোন মূল্যে তারা তাদের এই অবস্থান ধরে রাখার জন্য সব সময় তৎপর।

আমি আগেই বলেছি, এখানে অনুপ্রবেশকারী হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। যতদিন তাদের ঘাটের প্রক্রিয়া থেকে বাদ না দেওয়া যাবে ততদিন এ ঘাটে জোর জবরদস্তি চলতেই থাকবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা যাবে না। সেটাও যৌক্তিক। এ ঘাট পরিষদের একটা বড় ইনকাম সোর্স। জেলা পরিষদ চালাতে অর্থ লাগে, আর সেই অর্থের একটি বড় অংশ আসে সন্দ্বীপের এ গুপ্তছড়া ঘাট থেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জেলা পরিষদের আর্থিক লাভের জন্য চার লাখ সন্দ্বীপবাসী আর কতদিন যোগাযোগ ক্ষেত্রে এ দুর্ভোগের শিকার হবে। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার দিনে সন্দ্বীপের লোকজন কেন মান্ধাতার আমলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাগর বা নদী পাড়ি দিবে?

পরিষ্কারভাবে বলছি, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ নৌরুট হচ্ছে সেবাখাত। ঘাট হবে বিআইডব্লিউটিএ এর আর স্টীমার হবে বিআইডব্লিউটিসির। জাহাজে যাত্রী হোক না হোক জাহাজ চলবে। লাভ-ক্ষতি বিআইডব্লিউটিসির তথা সরকারের। যেমন পশ্চিম দিকে যখন স্টীমার সার্ভিস ছিল। যতদূর জানি এ ব্যাপারে পাকিস্তান আমল থেকেই একটি কনভেনসন আছে। এ অধিকারটুকু আদায় করা না গেলে শত আলোর ঝলকানিতেও সন্দ্বীপ থেকে যাবে অন্ধকারে। পুরো সন্দ্বীপ আলোকিত হয়েও গুপ্তছড়ার এ স্থানটি যদি অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে, তাহলে উন্নয়নের লাল গুড় পিপড়ায় খাবে।

মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি এখন সন্দ্বীপের প্রাণপুরুষ। আপনি সন্দ্বীপকে আলোকিত করেছেন। এজন্য আপনাকে আবারও স্যালুট। প্লিজ সন্দ্বীপের এ অংশটুকুকে (ঘাট) আলোকিত করার একটা উদ্যোগ নিন। এখানে মধ্যযুগ চলছে। এর অবসানে দ্রুত উদ্যোগ নিন। নতুবা আপনার অনেক সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। সন্দ্বীপের মানুষ আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমিও তাদের একজন।

লেখক: কানাই চক্রবর্তী, উপপ্রধান প্রতিবেদক, বাসস।