ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জেনে নিন তামাত্তু হজের নিয়মাবলী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

শরিয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো হজ। এই হজ হতে হবে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশী করার নিয়তে করতে হবে হজ।

হজ তিন প্রকারের। হজে ইফরাদ, হজে কেরান এবং হজে তামাত্তু। সবচেয়ে উত্তম হল হজে কেরান। তারপর হচ্ছে হজে তামাত্তু। এরপরে রয়েছে হজে ইফরাদ। হজে কেরানে দীর্ঘদিন এহরাম বাঁধা অবস্থায় থাকতে হয় এবং দীর্ঘদিন এহরামের বিধি-নিষেধ মেনে চলা বেশ কঠিন। তাই অধিকাংশ হাজীকেই হজে তামাত্তু করতে দেখা যায়।

হজের মাসসমূহে প্রথমে শুধু ওমরার এহরাম বেঁধে ওমরা পালন করে এহরাম খুলে ফেলতে হয়। এরপরে হজের সময় পুনরায় হজের এহরাম বেঁধে হজ পালন করতে হয়। এভাবে হজ পালনের নাম হচ্ছে হজে তামাত্তু বা তামাত্তু হজ।

তামাত্তু হজ করতে চাইলে আপনাকে ধারাবাহিকভাবে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে :

১. প্রথমে শুধু ওমরার নিয়তে এহরাম বাঁধতে হবে। এই এহরাম ফরজ। ওমরার তিনটি কাজ- এহরাম বাঁধা, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা। মিকাত অতিক্রম করার পূর্বেই এহরাম বেঁধে নেয়া জরুরি। প্লেনে এই কাজটি করা বেশ কঠিন। তাই হজে গমনকারীর জন্য প্লেনে আরোহণের পূর্বেই এহরাম বেঁধে নেয়া উচিত। বিমানবন্দরে গিয়ে বা হজ ক্যাম্পে অথবা বাসা থেকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে বাসায় বসেও এহরাম বাঁধা যায়। এরপরে তালবিয়া পড়তে থাকুন।

২. মসজিদে হারামে প্রবেশ করে ওমরার তাওয়াফ করতে হবে। এই তাওয়াফ ওমরার জন্য ফরজ। তাওয়াফ শুরু করার মুহূর্তে কাবা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ বরাবর তাওয়াফের স্থানে যে লম্বা রেখা টানা আছে সেটাকে ডান পার্শ্বে রেখে এমন ভাবে দাঁড়ান, যেন হাজরে আসওয়াদ ডান কাঁধ বরাবর থাকে। এরপরে নিয়ত করুন। নিয়ত করা শর্ত। সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করতে হবে। এরপর দুই রাকআত নামাজ পড়া ওয়াজিব। ভিড়ের কারণে মাকামে ইব্রাহিমে এই দুই রাকআত নামাজ পড়া সম্ভব না হলে আশপাশে পড়ে নিবেন। তাও সম্ভব না হলে দূরবর্তী যেখানে সম্ভব সেখানে পড়ে নিবেন। নামাজ পড়ার পর জমজমের পানি পান করা এবং দোয়া করা মোস্তাহাব। এটি দোয়া কবুল হওয়ার স্থান। জমজমের পানি কাবা শরীফের দিকে মুখ করে পান করা মোস্তাহাব।

৩. তাওয়াফের পর ওমরার সায়ী করতে হবে। এই সায়ী ওয়াজিব। সাফা ও মারওয়া নামক দুটি পাহাড়ের মাঝে বিশেষ নিয়মে সাতটা চক্কর দেয়াকে সায়ী বলে।

৪. এহরাম খোলার জন্য চুল ছাঁটা ওয়াজিব। পুরুষরা চুল মুণ্ডন করবেন। মহিলাদের জন্য মুণ্ডানো হারাম। তারা চুল ছাঁটাবে।

৫. জিলহজের ৮ তারিখ হজের এহরাম বাঁধতে হবে। এই তারিখ থেকে হজের প্রস্তুতি শুরু হবে। এহরাম বেঁধে মিনায় যেতে হবে। এহরামের পর তালবিয়া শুরু হবে। ৮ জিলহজের যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজর সর্বমোট এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় পড়া মোস্তাহাব এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত।

৬. জিলহজের ৯ তারিখ আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে হবে। হজের মূল কার্যক্রম আরাফার ময়দানে। ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয়ের সামান্য কিছু পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। আরাফায় যাওয়ার পথে তালবিয়া, দোয়া ও যিকির করতে করতে অত্যন্ত খুশু-খুযুর সঙ্গে চলতে থাকতে হবে। আরাফায় পৌঁছার পরে তালবিয়া ও দোয়া-দরুদ পাঠ করতে থাকবেন। সম্ভব হলে গোসল করবেন, না পারলে ওজু করে নিবেন। তাঁবুর এক কোণে জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর পড়ে নিবেন। সূর্যাস্তের পূর্বে কোনক্রমেই আরাফা ময়দান ত্যাগ করা যাবে না। সূর্যাস্ত হলে মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে। মাগরিবের নামাজ মুজদালিফায় গিয়ে এশার ওয়াক্তে পড়তে হবে।

৭. জিলহজের ৯ তারিখ দিবাগত রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করতে হবে। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার পর সুবেহ সাদেক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এখান থেকে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করে নিতে হবে জামরাতে নিক্ষেপের জন্য। ফজরের নামাজের পরে সূর্যোদয়ের পূর্বে মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে।

৮. জিলহজের ১০ তারিখ জামরায়ে আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। এটা ওয়াজিব। এই তারিখে বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। অন্য জামরায় নয়। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামরার নিকট বিলম্ব না করে নিজ স্থানে চলে আসবেন।

৯. কঙ্কর নিক্ষেপের পর হজের শোকর স্বরূপ কোরবানী করা ওয়াজিব। বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে কোরবানী করলে দম ওয়াজিব হবে।

১০. মাথার চুল ছোট করতে হবে। এটা ওয়াজিব। বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানী করার পরে  চুল ছাঁটতে হবে, পূর্বে করা যাবে না, করলে দম দিতে হবে।

১১. তাওয়াফে যিয়ারত করতে হবে। এটা ফরজ। ১০ জিলহজ সুবহে সাদেক থেকে ১২ জিলহজ সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এই তাওয়াফ করা যাবে। তারপরে করলে মাকরূহ তাহরীমী হবে এবং দম দিতে হবে। তবে মহিলাগণ এই সময়ের মধ্যে হায়েয অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফ করতে না পারলে পরে করবেন, তাতে তাদেরকে দম দিতে হবে না।

১২. তাওয়াফে যিয়ারতের সায়ী করতে হয়। এই সায়ী ওয়াজিব। ১০ জিলহজ দিবাগত রাত মিনায় থাকা সুন্নাত। তাই এই রাতে তাওয়াফে যিয়ারত করলে তাওয়াফ সেরে মিনায় ফিরে যাবেন।

১৩. জিলহজের ১১ ও ১২ তারিখ মিনায় প্রত্যেক দিন তিনবার করে জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। এটা ওয়াজিব। পর্যায়ক্রমে ছোট জামরা, এরপর মধ্যম জামরা, সবার শেষে বড় জামরায় ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।

১৪. বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। এই তাওয়াফ করা ওয়াজিব। মক্কা থেকে বিদায় নেয়ার সময় এই বিদায়ী তাওয়াফ করার মাধ্যমেই তামাত্তু হজের সমাপ্তি হবে। তাওয়াফ শেষে জমজমের পানি পান করে সর্বশেষ মুহূর্তে বিরহের বেদনা নিয়ে দোয়া করুন, বিশেষভাবে এটা যেন বায়তুল্লাহর শেষ যিয়ারত না হয়, আবারও যেন আসার তাওফিক দান করেন এই মর্মে দোয়া করে বিদায় নিন।

তথ্যসূত্র : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিনের আহকামুন নিসা গ্রন্থ।

এএইচ/এসি