যেভাবে জিততে পারে বাংলাদেশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১০ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তাতে এক সময় মনে হয়েছিলো আজও সাড়ে তিনশতাধিক রান করতে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু দ্য ফিজ`র রিদমে ফেরা পারফর্ম্যান্সে ভারতকে ৩১৪ রানেই আটকে দেয় বাংলাদেশ। ফলে জয়ের জন্য টাইগারদের লক্ষ্য ৩১৫ রান।
চলতি বিশ্বকাপে টাইগারদের যে ধারাবাহিক ব্যাটিং পারফরম্যান্স, তাতে এ রান টপকানো অসম্ভব কিছুই নয়। কারণ দিন কয়েক আগেই ক্যারিবিয় বোলিংয়ের বিপক্ষে তাদের দেয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করেই জয় লাভ করে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে অসাধারণ ধারাবাহিক সাকিব করেন অনবদ্য সেঞ্চুরি।
তাই ভারতের এই রান তাড়া করা কিছুটা কঠিন মনে হলেও অসম্ভব নয়। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মত বিশ্বসেরা বোলিং লাইনের বিপক্ষেও তাড়া করে ৩৩০ রান তোলে মুশফিকরা। সে ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নেন মি. ডিপেন্ডেবল। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তিন শতাধিক রান করে জয় পায় মাশরাফিরা।
ফলে দেখা যাচ্ছে, বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতার স্বাক্ষর রাখলেও দুর্দান্ত ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে। যাতে সাকিব আল হাসান রয়েছেন সবার থেকে এগিয়ে। ইতিমধ্যে দুই সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৪৭৬ রান করে আছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায়। পিছিয়ে নেই মুশফিকও। এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে তার রান ৩২৭।
তবে এ দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। আজ এ দুজনের সঙ্গে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে হবে তামিম, সৌম্য, সাব্বিরদের। টাইগারদের সেরা ওপেনার তামিমের উপর নজর থাকবে এ ম্যাচে। কারণ এ ম্যাচ দিয়েই ২০০তম ওয়ানডে ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন তামিম। মাত্র একটি ফিফটি হাঁকিয়ে ২০২ রান তুলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন এ ম্যাচে ভালো কিছু করার।
তার ওপর রোহিতের ক্যাচ মিস করে এমনিতেই অবদান রাখার তাগিদে আছেন তামিম। আর তামিমের সঙ্গেই ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাতে হবে সৌম্যকেও। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে থাকা সৌম্যকে এ আসরে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আজ ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে হবে তাকেও।
আর এদের সঙ্গে লিটন, সাব্বির, মোসাদ্দেক সেরা পারফর্ম করতে পারলেই কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নিতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে বেঁচে থাকবে টাইগারদের সেমিতে যাওয়ার স্বপ্ন।
রোহিত শর্মার শতক ও রাহুলের ফিফটিতে বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে ভারত। সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাঁচা-মরার এ ম্যাচে জয়ের জন্য ৩১৫ রান করতে হবে টাইগারদের।
এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে `ডু-অর-ডাই` ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুর দিকে চেপে ধরলেও পঞ্চম ওভারে রোহিতের তুলে দেয়া ক্যাচ তামিমের হাত ফসকে গেলে ম্যাচের লাগামও যেন ফসকে যায় টাইগারদের হাত থেকে। পরে টাইগার বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে বড় জুটি গড়লে ভারতের স্কোর সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যাবে বলেই ধারণা করেন অনেকে।
কিন্তু তাদের সে ধারণাকে পাল্টে দিতে খুব বেশি সময় নেননি দুই টাইগাররা, বিশেষ করে সৌম্য ও রুবেল। শুরুটা হয় পার্টটাইম বোলার সৌম্য সরকারের হাত ধরেই। রোহিত-রাহুলের জুটিতে প্রথম আঘাতটাই হানেন সৌম্য। পতন ঘটে ১৮০ রানের লম্বা জুটির।
তবে সেঞ্চুরি করেই আউট হন মাত্র আট রানে ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন ফিরে পাওয়া রোহিত শর্মা। ৩০তম ওভারে লিটনের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ১০৪ রান। ৯২ বলে পাঁচ ছক্কা ও সাত চারে ওই রান করে আউট হন ওপেনার রোহিত।
এরপর রুবেলের আঘাতে উইকেট হারান আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল। ব্যক্তিগত ৭৭ রান করে রুবেলের বলে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ফলে ১৯২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
এরপর এক ওভারে জোড়া আঘাতে কোহলি আর পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে টাইগারদের খেলায় ফেরান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। এ দুজনকে ফেরাতে অবশ্য অবদান ছিলো আগের দুই উইকেট নেয়া রুবেল-সৌম্যের। কোহলি রুবেলের হাতে এবং পান্ডিয়া সৌম্যের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ২৩৭ রানেই ৪ উইকেট হারায় ভারত।
ওই ওভারে মেডেনসহ জোড়া উইকেট নেয়া মুস্তাফিজ পরে ৪৮তম ও শেষ ওভারে আরও তিন উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের বিপক্ষে আরও একবার এবং বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট লাভ করলেন দ্য ফিজ। আর এতেই ডেথ ওভারের দুর্বলতা কাটিয়ে পটাপট উইকেট তুলে নিয়ে রানও চেক দেয় বাংলাদেশ। ফলে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রানেই থামতে বাধ্য হয় ভারত।
মুস্তাফিজের ওই আঘাতের মধ্যেই সাকিবের ঘূর্ণিতে পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের ৪৫তম ও নিজের শেষ ওভারের এসে ঋষভ পন্তকে তুলে নিয়ে একমাত্র উইকেট পান সাকিব।
চলতি বিশ্বকাপের ৪০তম ম্যাচে বাঁচা মরার লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। এজবাস্টনের এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নেয় ভারত। এ ম্যাচে জিতলে সেমির স্বপ্ন টিকে থাকবে টাইগারদের। আর হারলেই বিদায়। তবে জিতলেও অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে মাশরাফিদের।
এদিকে, আইসিসির সবশেষ র্যাংকিং অনুসারে ভারতের অবস্থান দুই নম্বরে। আর বাংলাদেশ আছে সাতে। শুধু র্যাংকিংই নয়! পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত। দেখা যাক আজ কী হয়!
টিআর/