ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হবে কনজুমারস ক্লাব: শাহরিয়ার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৬ পিএম, ৮ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৫:০২ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার

আড়ংকে জরিমানা করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার। তার নেতৃত্বে গত অর্থ বছরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের অধীনে সারাদেশে ৭ হাজার ৩৪৩টি অভিযান পরিচালনা হয়েছে।

যেখানে ১৯ হাজার ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১৪ কোটি ৮১ লাখ ৪২ হাজার ১৫০টাকা।

গত বছর অভিযোগ জমা হয়েছিল ৭ হাজার ৫’শ ১৫টি। এর মধ্যে ৭ হাজার ১’শ ৮৫টির নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪’শ ৬৮টি। অভিযোগ থেকে আরোপিত দণ্ডের মাধ্যমে আদায় হয় ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা।

অভিযোগকারী ভোক্তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪’শ ৬১ জনের মাঝে জরিমানার ২৫ শতাংশ বা ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩২৫ টাকা দেয়া হয়। আর সরকারকে দেয়া হয় ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৫২৫ টাকা।

সাম্প্রতিক সময়ে সেই মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ভেজাল খাদ্য নিয়ে যত অভিযোগ আছে তা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা। লক্ষ্য পূরণে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। চলমান ভেজালবিরোধী অভিযান নিয়ে নতুন অর্থ বছরের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এ ম্যাজিস্ট্রেট। বাজারে ওজনবান্ধব একটি মেশিন বা ডিজিটাল ওজন মেশিন সাপোর্ট, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কনজুমারস ক্লাব প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন তিনি।

একুশে টিভি অনলাইনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আজাদুল ইসলাম আদনান


একুশে টিভি অনলাইন: আপনাদের কাজের ধরণ সম্পর্কে জানতে চাই।

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: আমাদের কাজের নির্দিষ্ট পরিধি আছে। সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও প্রাপ্ত অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
দেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ অন্যান্য অনেক সংস্থার সোর্চ থাকে কিন্তু আমাদের নেই। যার কারণে আমরা নিজেরা অভিযান চালাই। পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে, তথ্য যাচাই করে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

আমাদের কাজগুলো হয় মূলত সিটিজেন জার্নালিজম হিসেবে। আমাদের অধিদপ্তরের আলাদা ফেসবুক পেজ আছে। যেখানে ফলোয়ার আছেন লক্ষাধিক। এর মাধ্যমে সচেতন ভোক্তারা আমাদের সেখানে কমেন্ট, ইনবক্সে আবার কখনো ফোনে কল করে তার অভিযোগ জানিয়ে থাকেন। আমাদের অধিকাংশ অভিযানই এর আলোকে হয়ে থাকে।


একুশে টিভি অনলাইন: নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আপনাদের কার্যক্রম প্রশংসিত। তবে কাজের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কিনা?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: আমাদের লক্ষ্যই হলো সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ব্যবসাকে অনুকূলে নিয়ে আসা। কাজের পরিধি বাড়াতে লোকবল নিয়োগ ও আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে করে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

পাশাপাশি দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন ও মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। জনসচেতনার লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কনজুমার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।


একুশে টিভি অনলাইন: রমজান আসলেই কেবল ভেজালবিরোধী অভিযানগুলোর দিকে সরকারি সংস্থাগুলো বাজার মনিটরিং, তদারকির দিকে মনযোগী হয়। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়না কেন?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: রমজানে আমাদের ৪টি টিম প্রতিদিন বাজার তদারকি করেছে। আমাদের একজন অফিসার দুই মাসের ট্রেনিংয়ে থাকায় এখন ৩টি করে টিম কাজ করেছে। তারপরও আমরা গতকাল ৪টি টিম কাজ করেছে, যা নিয়মিতই করা হবে।
আমাদের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় প্রতিমাসে ২৭৫টি অভিযান চালিয়ে আসছে। আর সারাদেশে চলতি বছরে ১০ হাজার অভিযান চালানো হয়েছে। যেখানে গতবছর ছিল ৭ হাজার ৩’শ ৪৩টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। তাই কোনভাবেই অভিযান কমানোর কোন সুযোগ নেই।


একুশে টিভি অনলাইন: আড়ংকে জরিমানা করায় বদলি, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্বপদে বহাল। কাজ করতে গিয়ে নতুনভাবে কোন বাধারমুখে পড়ছেন কিনা?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: বদলির বিষয়টা আসলে নতুন কিছু নয়। আমরা সরকারি কর্মচারি, সরকার যেখানে যখন পাঠাবে, সেখানেই আমাদের যেতে হবে। এটা চাকরির নিয়মিত অংশ।
এর আগে যখন এসিল্যান্ড ছিলাম, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলাম। পরে বদলিও হয়েছি।
আমার কাছে আমার কাজ ও দায়িত্বটাই আগে। আমার যে কাজ ছিল, তা আমি সঠিকভাবে করেছি। কাজের সাফল্যের উপর আমার জীবনের সফলতা নির্ভর করে।

এখন পর্যন্ত আমাদের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে বাধার শিকার হয়নি। স্বাধীনভাবেই কাজ করছি। সুতরাং এটা নিয়ে কিছু বলার নেই।


একুশে টিভি অনলাইন: খাদ্যে ভেজাল থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি? আপনারা যেভাবে অভিযান চালাচ্ছেন সেভাবে কতটুকু সফল হওয়া সম্ভব?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: এটা আসলে একদিনে হবে না। সময় লাগবে। আগে তো মানুষ জানতোই না। এখন মানুষ যখন জেনে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তার মাঝে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের মাঝে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। আশেপাশে কি হচ্ছে, এসব বিষয় আমাদের তথ্য দিতে হবে।

এমনকি আমরা বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, ক্যামিক্যাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলছি। এ সংক্রান্ত সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিয়তায় জোর দিয়েছে। প্রতিদিন অভিযান চলছে, জরিমানা হচ্ছে। আমাদের লোকবল বাড়লে প্রয়োজন হলে অভিযান আরো বাড়ানো হবে।


একুশে টিভি অনলাইন: সম্প্রতি খাদ্যে বিভিন্ন রং, ক্যামিক্যাল মেশানোর মতো ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে আপনাদের পদক্ষেপ কি?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। পাশাপাশি আমরাসহ এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছি। পাশাপাশি মানুষকেও মুখরোচক খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। যারা এটা করছেন, তাদের যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে আসলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া খুবই কঠিন। আর সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে।


একুশে টিভি অনলাইন: বাজারে নিষিদ্ধকৃত পণ্যগুলো এখনো কিছু জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কি বলবেন?

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। এখনো রাজধানীর দু’একটি দোকানে ওই পণ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তাই নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, যেন এগুলো বাজারে প্রবেশ করতে না পারে।


একুশে টিভি অনলাইন: আপনাদের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আর পরিকল্পনা জানতে চাই।

মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার: আগে যে পরিমাণ অভিযান চলতো, তার চেয়ে অধিক পরিমাণে অভিযান চালানোর চেষ্টা চলছে। লোকবল সংকট সমাধানে সরকারের নিকট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কাজের পরিধি বাড়াতে আইন সংশোধনেরও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। আশাকরি অল্প সময়ে আমরা কাঙ্খিত ফল পাবো।

আমাদের পরিকল্পনা আছে বাজারে ওজনবান্ধব একটি মেশিন বা ডিজিটাল ওজন মেশিন সাপোর্ট, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কনজুমারস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা ও আরও বেশি প্রচারণা চালানো।

এসব উদ্যোগ আমাদের একার পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি সরকার যে ব্যবসা খাত অনুকূলে আনার চেষ্টা করছে তা সফল হবে। ফলে দেশেও পরিবর্তন হবে।

আরকে//