ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রাজশাহীতে সাংবাদিকের মৃত্যুর পাঁচমাস পর হত্যা মামলা

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৩৭ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯ বুধবার

রাজশাহীর বাঘায় এক সাংবাদিক মারা যাওয়ার ৫ মাস ৮দিন পর হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

নিহত সাংবাদিক এসএম সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারির স্ত্রী সোনিয়া বেগমকে বাদি করে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলায় একজন হোমিও চিকিৎসকসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে চারজনকে আসামি করা হয়েছে বলে বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল ওয়াহাব জানিয়েছেন।

আব্দুল ওয়াহাব বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে সাংবাদিক সেলিমের ভিসারা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বিক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য শরীরের বিশেষ অংশ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। রাসায়নিক পরীক্ষক সাংবাদিক সেলিমের শরীরে অর্গানো ফসফরাস যৌগ (কীটনাশক বিষ) পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভিসারা প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপারের অনুমতিক্রমে থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক মাজিদুল করিম ও মিঠন নামের দুইজনের নাম উল্লেখ করে চারজনকে আসামি করা হয়েছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন, সাংবাদিক সেলিম মারা যাওয়ার পর সন্দেহভাজন হিসেবে হোমিও চিকিৎসক মাজিদুল করিমকে আটক করে জেলহাজাতে পাঠানো হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। আর মিঠন আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন। তবে হত্যা মামলা রেকর্ড করার পর তাদের দুইজনকে গ্রেফতারে মঙ্গলবার রাতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

মামলার এজাহারের বরাদ দিয়ে আব্দুল ওয়াহাব জানান, গত ৩০ জানুয়ারী রাতে মনিগ্রাম বাজারের হোমিও চিকিৎসক মাজিদুল করিমের ‘নিরাময় হল চিকিৎসালয়ে’ সেলিমকে ডেকে নিয়ে যায় মিঠনসহ তিন যুবক। সেখানে কৌশলে টাইগার ব্যান্ডের (কোল্ড ডিংস) কোমল পানীয়র সঙ্গে বিষ জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। পরে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাংবাদিক সেলিম। ৩১ জানয়ারি সকালে তাকে প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক সেলিম। ১ ফেব্রুয়ারি আরএমপির রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সাংবাদিক সেলিমের স্ত্রী ও মামলার বাদি সোনিয়া বেগম বলেন, রামেক হাসপাতালে ভর্তি পর কয়েকজন লোকের উপস্থিতিতে সেলিম আমাকে বলে গিয়েছেন, মিঠন ও আরো দুই যুবক আমাকে হোমিও চিকিৎসক মাজিদুলের চিকিৎসালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর হোমিও চিকিৎসক মাজিদুল টাইগার জাতীয় (কোল্ড ডিংস) ব্যান্ডের তরল পানীয় খাওয়ার জন্য দেয়। খেতে না চাইলে অন্যরা অনুরোধ করে। পরে মাজিদুল সেই টাইগার জাতীয় (কোল্ড ডিংস) ব্যান্ডের তরল পানীয় হাতে দিয়ে পান করান।

সোনিয়া বলেন, সেলিমকে পরিকল্পিতভাবে বিষ খাওয়ায়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

সাংবাদিক এসএম সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারি দৈনিক যায়যায়দিন, একাত্তর টেলিভিশন, স্থানীয় দৈনিক রাজশাহীর সংবাদ ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে উপজেলার মনিগ্রামের মৃত সামসুল হক ভান্ডারীর একমাত্র ছেলে।