ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সন্তান পালনে করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৩ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯ বুধবার

সন্তানের সাফল্যের জন্য বাবা-মা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। তবে সাফল্য এমনি এমনি আসবে না, তার জন্য চাই সঠিক পদক্ষেপ। যেগুলোর উপর ভর করে সন্তানেরা তাদের সাফল্যের শীর্ষচুড়ায় পৌঁছাতে পারে। তাই সন্তানকে সফল দেখতে এবং তাদের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে সন্তান ছোট থাকতেই বাবা-মা কে নিম্নের পদক্ষেপগুলো গ্রহন করতে হবে।

১. ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখুন। এক সন্তানকে অন্য সন্তানের সাথে তুলনা করবেন না।

২. সন্তানকে নেতিবাচক কথা বলে তিরস্কার করবেন না। ধমকে কথা বা রাগের মাথায় অভিশাপ দেবেন না। সবসময় আদেশ না করে তার করণীয় কাজ যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন। অন্যদের সামনে তাকে বকা বা তার ভুল ধরিয়ে দেয়া থেকেও বিরত থাকুন। পরে শুধরে দিন।

৩. ছোটবেলা থেকেই তাকে স্বাবলম্বী করে তুলুন। নিজের কাজগুলো নিজেই করতে শেখান। সময়-সুযোগমতো ঘরের কাজেও তাকে ডাকুন। পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ বাড়বে।

৪. সন্তানের কোনো ভুলকে অপরাধ বা পাপ হিসেবে তুলে ধরবেন না। তাকে শোধরাবার চেষ্টা করুন। তবে ভুলের মাশুল তাকে মাঝে মাঝে পেতে দিন। যা তাকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করবে।

৫. সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। তার সাথে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করুন। নইলে ফোন, আড্ডা, টিভি, গেমস, ইন্টারনেট বা ক্ষতিকর বন্ধুত্ব তাকে নষ্ট করবে।

৬. সন্তান কোনো কিছু চাওয়ার সাথে সাথেই তাকে তা দেয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। তার অন্যায় আব্দার পূরণ করবেন না।

৭. পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ও বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সন্তানকে যথাযথ ধারণা দিন। আর্থিক ব্যাপারে ভুল ধারণা দেবেন না।

৮. সন্তানের মধ্যে কোনো বদভ্যাস তৈরি হতে দেবেন না। বদভ্যাসকে প্রথমেই শনাক্ত করুন ও তা দূর করুন।

৯. যুক্তিসঙ্গত কারণে সন্তানের সাথে দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। আপনার দৃঢ়তাই তার মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করবে।

১০. বিনোদনের নামে সন্তান অপসংস্কৃতি ও ড্রাগ এডিকশনের শিকার হচ্ছে কি না লক্ষ রাখুন। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার বন্ধুদের ব্যাপারে সজাগ থাকুন।

১১. তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগে দক্ষ মানুষরূপে গড়ে তুলুন। তবে সারাক্ষণ মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার, অর্থাৎ ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে পড়ে থাকতে দেবেন না।

১২. একেবারে ছোটবেলা থেকে তাকে একা ঘরে থাকতে অভ্যস্ত না করাই ভালো। আর বড় হলেও সন্তান যাতে সারাক্ষণ তার ঘরে একা সময় না কাটায় সেদিকে লক্ষ রাখুন। বাবামা, ভাইবোন এবং পরিবারের সবার সাথে সে সময় কাটাচ্ছে, এটা নিশ্চিত করুন।

১৩. নৈতিক, মানসিক, আত্মিক ও সৃজনশীল গুণাবলি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করুন।

১৪. তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত করুন। ধর্মজ্ঞানের অভাব সন্তানকে ধর্মান্ধ করতে পারে।

১৫ সারাক্ষণ শুধু পড়ার কথা না বলে তার শখ, হবি এসব নিয়েও তার সাথে কথা বলুন। তাকে খেলাধুলা, বেড়ানো, বই পড়া ইত্যাদি সুস্থ বিনোদনের সুযোগ করে দিন।

১৬. সন্তানের ওপর জীবনের লক্ষ্য চাপিয়ে দেবেন না। সিদ্ধান্ত নিতে তাকে সহযোগিতা করুন। চাকরির পরিবর্তে তাকে স্বাধীন পেশা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করুন।

১৭. আপনার সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে অপর পক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। এটা অপরাধ।

১৮. আগে সালাম দেয়া ও হাত মেলানোয় সন্তানকে অভ্যস্ত করে তুলুন।

১৯. সন্তানের সামনে নিজেকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করুন। তবে একেবারে নিষ্পাপ, নির্ভুল হিসেবে তুলে ধরবেন না। ভুল করে ফেললে দুঃখ প্রকাশ করুন।

২০. সন্তানকে আদরের নামে প্রশ্রয় দেবেন না ও শাসনের নামে অত্যাচার করবেন না। আদর ও শাসনের সমন্বয়ে তাকে বিকশিত হতে দিন।

২১. সবসময় মনে রাখবেন আপনার সন্তানের বিকাশের জন্যে আপনার স্নেহ-মমতা ও সমমর্মিতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই মমতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কল্যাণকামিতায় তাকে বড় করে তুলুন।

২২. ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ভালো কাজে, ভালো বা সৎসঙ্ঘের সাথে সম্পৃক্ত করুন। দান, অন্যকে সহযোগিতা, অন্যের প্রতি মমতায় তাকে উদ্বুদ্ধ করুন।

২৩. বিষয় ও বয়স বুঝে তাদেরকেও পারিবারিক পরামর্শে অংশীদার করুন।

আরকে//