ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেনাপোল এক্সপ্রেস চালু হচ্ছে ১৭ জুলাই

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৫৭ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

রাজধানী ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী জংশন ও যশোর হয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত চালু হচ্ছে দ্রুতগতির ট্রেন। বেনাপোলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চালু করা হচ্ছে এ ট্রেন সার্ভিস। ট্রেন সার্ভিসটি আগামী ২৫ জুলাই থেকে বেনাপোল-ঢাকা বিরতিহীনভাবে চালু করার কথা থাকলেও তা এগিয়ে ১৭ জুলাই আনা হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন সার্ভিসটির নাম চূড়ান্ত করেছেন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা থেকে তিনি এ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের দিন দুপুর সোয়া ১টায় ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বেনাপোল ও যশোর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন শেষে জানিয়েছিলেন ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সময় না মেলায় উদ্বোধনের দিন এগিয়ে ১৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান পরিবহন তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহ নেওয়াজ বলেন,‘আগামি ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসের’ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো.শামসুজ্জামানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন বেনাপোল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংযুক্ত হবেন। ২/১ দিনের মধ্যে অনলাইনসহ নতুন এই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে জানা গেছে।

জানা যায়, ট্রেনটিতে বগি থাকবে ১২টি। ৮৯৬ আসনের এই ট্রেন প্রতিদিন বেনাপোল স্টেশন থেকে ছেড়ে যশোর, ঈশ্বরদী জংশন ও ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য সাময়িক বিরতি দিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের শেষ গন্তব্যে গিয়ে থামবে। এ ট্রেনের শোভন চেয়ারের টিকিটের দাম ৫০০, এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) চেয়ার ১০০০ ও এসি কেবিনের দাম ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আধুনিক এই ট্রেনের কোচগুলো (বগি) ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি ইতোমধ্যে চালানো হয়েছে। আসছে পবিত্র  ঈদ-উল আযহায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই ট্রেনে চলাচলের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

রেলওয়ের ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, এই ট্রেনটি দেশের প্রথম প্রতিবন্ধীবান্ধব ট্রেন। এই ট্রেনে ওয়াইফাইসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এছাড়াও ট্রেনটিতে রয়েছে পরিবেশবান্ধব বায়ো-টয়লেটের ব্যবস্থা। যার ফলে যাত্রীদের মল-মূত্র রেললাইনে পড়ে পরিবেশ দূষণ হবে না।

ট্রেনটিতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সুবিধার্থে হুইল চেয়ার রাখার ব্যবস্থা থাকছে। একইসঙ্গে তাদের সুবিধার্থে থাকছে প্রশস্ত দরজা ও নির্ধারিত আসনের সুবিধা। এ ছাড়াও আমদানি করা প্রতিটি কোচ উচ্চগতিসম্পন্ন বগি, স্টেইনলেস স্টিলের বডি ও আধুনিক অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম জার্মানির তৈরি। তাছাড়াও প্রতিটি কোচে আধুনিক ও উন্নতমানের মাউন্টেড এয়ার কন্ডিশনার যাত্রী ইউনিট এবং এয়ার কন্টেইনারের ব্যবস্থা থাকবে। সেইসঙ্গে থাকছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি লাইট, অজুখানাসহ নামাজ ঘর, যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক ও মানসম্মত চেয়ার, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর, হ্যাঙ্গার, ওয়াইফাই রাউটার ও মোবাইল চার্জিংয়ের ব্যবস্থা। এমনকি অনাকাঙ্খিত ট্রেন থামানো রোধে বিশেষভাবে ডিজাইন করা অ্যালার্ম চেন পুলিং সিস্টেম, অত্যাধুনিক ডাইনিং সুবিধা ও সিবিসি কাপলার। নতুন এই ট্রেনের দুটি কোচের প্রতিটিতে ১২টি করে ২৪টি চেয়ার প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। প্রতিবন্ধীরা যাতে হুইল চেয়ার দিয়ে ট্রেনের অভ্যন্তরে চলাফেরা করতে পারে, সেজন্য প্রতিটি কোচের দরজাও থাকবে প্রশস্ত।

বেনাপোল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যশোর-থেকে ঢাকার মধ্যে যে ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে তা ঢাকায় পৌঁছানোর মধ্যে ১৪টি স্থানে বিরতি নেয়। এতে যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সেখানে চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বেনাপোল-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেনটি ৭ ঘণ্টার মধ্যে যশোর ও ৮ ঘণ্টার মধ্যে বেনাপোলে পৌঁছে যাবে। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যশোর রেলওয়ে জংশনে পৌঁছে ১৫ মিনিটের বিরতি করবে। এ সময়ের মধ্যে যাত্রী ওঠানো ও রেলের ইঞ্জিন ঢাকামুখী ঘোরানো হবে। এরপর ঈশ্বরদী গিয়ে ট্রেনের চালকসহ অপারেশনাল কর্মী বদলের জন্য আরও ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে।

পরে ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে শেষ গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। তবে এর আগে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্য ট্রেনটি থামানো হবে। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। প্রতিদিন সকাল ৮ টার মধ্যে ট্রেনটি বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াতে বেশ সুবিধা হবে। এদিকে যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বিশ্রামাগার সংস্কারের কাজ শেষের দিকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় সাত হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যায়। তাদের বেশির ভাগই ঢাকা থেকে আসেন। ঢাকা থেকে বেনাপোলে আসার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাস। ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হলে এই বাস নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা কিংবা বেনাপোলে পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা হয়। এসব কারণে বেনাপোলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকা-বেনাপোল রেল সার্ভিস চালু। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেল কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস চালুর সব কিছু চূড়ান্ত করেছে।

বেনাপোলের ব্যবসায়ী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘ট্রেনটি চালু হলে বেনাপোল-ঢাকার মধ্যে হাজার হাজার যাত্রীর যাতায়াত সহজ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে। আগামীতে এই ট্রেনটি কলকাতা পর্যন্ত চালুর জন্য আমাদের দাবি রয়েছে।’

ইন্দো-বাংলা চেম্বারের ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, স্বাধীনতার আগে খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় বন্ধ হয়ে যায়।

এমএস/কেআই