ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্ত্রী মিন্নিই রিফাত হত্যার ভিলেন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৯ রবিবার

বরগুনার আলোচিত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

মিন্নির বিরুদ্ধে প্রশ্ন জোরালো হতে থাকে প্রকাশিত সিসিটিভির দ্বিতীয় ভিডিওটিতে। যেখানে রিফাতকে হত্যার সময় মিন্নির যে ভূমিকা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বলছেন রিফাত হত্যায় মিন্নির সম্পৃক্ততা সরাসরি প্রমাণ এ ভিডিও। কিন্তু রিফাত হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মিন্নির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলা উঠেছিল, সেগুলো মিথ্যা দাবি করেছিল মিন্নি।

অথচ সবশেষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নয়নের মায়ের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিন্নিকে নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। এদিকে রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুত্রবধূ মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

পাশাপাশি তিনি মিন্নি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তবে এসব ব্যাপারে কথা বলেননি মিন্নি। ফলে নতুন করে মোড় নিচ্ছে রিফাত হত্যার রহস্য।

সিসিটিভি ফুটেজ, নয়নের মা এবং রিফাতের বাবার সব শেষ বক্তব্য নতুন করে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে সবাইকে। সবার এখন একটাই প্রশ্ন- তাহলে কি রিফাত হত্যার ভিলেন ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি?

গণমাধ্যমে রিফাত হত্যার মূলহোতা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘রিফাতকে হত্যার আগের দিনও (২৫ জুন) মিন্নি নয়নের কাছে এসেছিল, তা আমাদের প্রতিবেশিরাও দেখেছেন। আমার ছেলেতো মারাই গেছে, আমার আর মিথ্যা বলার কিছু নেই। রিফাত হত্যার আগের দিন মিন্নি নয়নের সঙ্গে দেখা করে যায়।’

তিনি বলেন, ‘শুধু হত্যাকাণ্ডের আগের দিন নয়, রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাড়িতে এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করতো। মোটরসাইকেলে করে রিফাত মিন্নিকে কলেজে রেখে গেলে, মিন্নি আমাদের বাড়িতে আসতো। ক্লাস শেষ হওয়ার মূহুর্তে এখান থেকে বের হয়ে কলেজে যেত।’

রিফাত হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত দাবি করে সন্ত্রাসী নয়নের মা আরও বলেন, ‘রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের খবরের পর, নয়নকে আমি মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু নয়ন তা শোনেনি। সে তার মতোই চলেছে। যদি কথা শুনতো তাহলে আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না।’

তিনি বলেন, ‘মিন্নি রিফাতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অবস্থায় নয়নের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেত। একসঙ্গে দুজনকেই ম্যানেজ করতো সে। মিন্নির সম্মতিতে গত বছরের ১৫ অক্টবরে নয়নের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।’

এদিকে শনিবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ মিন্নিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।  

লিখিত বক্তব্যে মিন্নিকে গ্রেফতারের ১০টি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার ছেলে রিফাত হত্যার সাথে জড়িত। নয়নের সাথে বিয়ের ঘটনা সে ও তার পরিবার সুকৌশলে গোপন করে গেছে। এমন কি বিবাহ বলবৎ থাকা অবস্থায় শরিয়া বহির্ভূতভাবে মিন্নি রিফাতকে বিয়ে করেছে। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরেও মিন্নি নয়নের বাসায় আসা-যাওয়া ও যোগাযোগ রক্ষা করতো।

রিফাত হত্যার আগের দিন অর্থাৎ ২৫ জুন মিন্নি নয়নের বাসায় গিয়েছিলো, মিন্নি প্রতিদিন একা একা কলেজে গেলেও ঘটনার দিন  রিফাতকে ডেকে কলেজে নিয়ে গেছে।

রিফাত তার স্ত্রী মিন্নিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চলে আসতে চাইলেও মিন্নি কৌশল করে কালক্ষেপন করেছে।

রিফাতকে যখন রিশান ফরাজী দলবল নিয়ে জাপটে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে ছিলো মিন্নি, রিফাতকে কোপানোর সময় মিন্নি আসামীদের জাপটে ধরলেও আসামীরা কোপায়নি।

আহত রিফাতকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা না করে মিন্নি তার জুতা ও ব্যাগ ওঠাতে ব্যস্ত ছিলো, আহত রিফাতকে বরিশাল নেওয়া হলেও মিন্নি তার সঙ্গে যায়নি বলেও জানান তিনি।

এসময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিফাতের বাবা। তিনি আরও বলেন, পুলিশ কেন এখন পর্যন্ত মিন্নিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না? পুলিশ মিন্নিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের সত্যতা তথা প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

রিফাত হত্যার ঘটনায় স্ত্রী মিন্নির বিরুদ্ধে করা রিফাতের বাবার অভিযোগের ব্যাপারে মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, রাজি হননি মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

তিনি বলেন, মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে জেলা পুলিশের অনুমিত লাগবে।

তিনি বলেন, দুলাল শরীফ হার্টের রোগী। তাই তিনি ভুলভাল বকছেন। তার কথার কোন ভিত্তি নেই। তার কথায় কান দেয়ারও কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, রিফাতের উপর হামলা করা হলে রিফাতকে আমার খরচে বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে যাই। বরিশাল নেয়ার পর কিছু লোক তার উপর হামলা করে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, তাদের কথার উপর ভিত্তি করেই দুলাল শরীফ এমন কথা বলছেন।

মিন্নির বাবা বলেন, আমার মেয়েটি বিধবা হয়েছে। মেয়ের জামাইয়ের জন্য আমার বুক ফেটে যায়। রিফাতকে যখন কোপানো হয়, আমার মেয়ে তাকে জীবন বাজি রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। তারপরও, আমার মেয়ে ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে দুলাল শরীফ।

মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয়ে গণমাধ্যমে বরগুনা পুলিশ সুপার বলেন, রিফাত হত্যার ঘটনা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মামলাটি আমরা অত্যান্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরপক্ষেভাবে তদন্ত করছি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে ই জড়িত তাকে আইনের আওতায় আনতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।

আই/