ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এই এরশাদ সেই এরশাদ

মঈন বকুল

প্রকাশিত : ১২:৩০ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৫:১১ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত-সমালোচিত নাম। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনা প্রধান। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।

এক সময়ের প্রতাপশালী এই নেতা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীর্ণ-শীর্ন জীবন-যাপন করছেন তিনি। তার জীবনের বাকে বাকে ঘটে গেছে নানান ঘটনা। এসব ঘটনা নিয়ে অনেক সময় তিনি হয়েছেন মিডিয়ায় আলোচিত-সমালোচিত। অনেক সময় হয়েছেন টক অব দ্য ডে।

নিজেকে স্মার্ট রাখতে যে এরশাদ এক সময় প্রতিদিন গলফ খেলতেন, নতুন করে চুল গজাতে স্কার্ফ করতেন, সেই এরশাদের মুখে এখন খাবার তুলে দেন কেউ না কেউ।

প্রতাপশালী এরশাদ

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন একসময় বেশ ক্ষমতাধর ও প্রতাপশালী ব্যাক্তি। বাংলাদেশের মানুষের মনে বেশ কিছু কারণে তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০- ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন।

১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯- ১৯৭০ সালে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক ও ১৯৭১ - ১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন।

এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরে ৫ (পাঁচ) বৎসরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে গণবিক্ষোভের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এছাড়া ১৯৯৬ সালে সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মহাজোট করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে সাথে রাখতে সক্ষম হয়েছিল আওয়ামী লীগ।

ঐ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ছিলেন জেনারেল এরশাদ।

তার স্ত্রী রওশন এরশাদ সংসদে ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা। একইসাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জাতীয় পার্টি থেকে তিনজন মন্ত্রী ছিলেন।

বর্তমানে এরশাদ জাতীয় পার্টি (এরশাদ) উপদলের নেতা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে ১১তম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একক সিদ্ধান্তে এরশাদ

জাতীয় পার্টি মানেই অস্থিরতা। আলোচনা আর সমালোচনা যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ে না এই দলের। দলীয় পদ পদবির বিতর্ক আর পদত্যাগ নিয়ে চরম অস্থিরতায় সময়ই মিডিয়ায় আলোচিত।

এই অস্থিরতা আর মেরুকরণের চাবি সব সময় একজনেরই হাতে ছিল। তিনি হচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এরশাদ একাই সব সিদ্ধান্ত দেন। আবার একাই তা প্রত্যাহার করেন। অন্য নেতারা হয় দর্শক আর না হয় সমর্থক।

একেক সময় একেক কথা ও সিদ্ধান্ত এরশাদের বৈশিষ্ট্য। সময়ে সময়ে এতে কিছু নেতা নাখোশ হলেও এক সময় তারাও এরশাদের এ বৈশিষ্ট্যের সুবাদে লাভবান হন। তখন তারা এরশাদের একেক কথা ও সিদ্ধান্তকে দোষ বলেন না। একে এরশাদের মহানুভবতা-উদারতা হিসেবে কবুলই করেন না, প্রশংসাও করেন। আর আক্রান্ত হলে বা ভাগে কম পড়লে গোস্যা হন। আদতে জাপার নেতাদের মধ্যেও এরশাদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বেশ প্রভাবিত-সংক্রামিত।

বর্তমানে এরশাদের শারিরীক অবস্থা এতটাই খারাপ যে তার অবর্তমানে পার্টির হাল কে ধরবেন তা নিয়ে অনেকদিন ধরেই চলে নানা বিতর্ক। অবশেষে নানা জল্পনা-কল্পনার পর সেটির অবসান হয়। তার আপন ভাই জিএম কাদেরকেই দায়িত্ব দেয়া হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তার ওপরেই আস্থা রাখেন এরশাদ।

জীর্ন শীর্ন এরশাদ

বর্তমানে হুসেইন মুহম্মদের যে অবস্থা তাতে তাতে সিদ্ধান্ত দেয়া তো দূরে থাক নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারেন না। অনেকদিন ধরেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে বিছানাগত তিনি।

এরশাদ ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে পারেন না। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। প্রতিদিন তার মুখে তুলে খাবার তুলে দেন কেউ না কেউ। এমন অবস্থায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শরীরের এ অবস্থায় তিনি নিজেই নিজের জন্য কবর দেখতে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

জানা গেছে, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কবর খোঁজার জন্য ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে পরামর্শ দিয়েছেন এরশাদ। এ নিয়ে তারা কবরের জন্য একাধিক সম্ভাব্য স্থান সরেজমিনে দেখেছেন।

কবরের সন্ধানে যাওয়া কয়েকজন জানান, এরশাদের ইচ্ছা মৃত্যুর পর যেন ঢাকায় তাকে সমাহিত করা হয়। সেক্ষেত্রে কবরের কাছে যেন মসজিদ, মাদ্রাসা থাকে। এ রকম উপযুক্ত স্থান পাওয়া না গেলে রংপুরে সমাহিত করার কথা জানিয়ে রেখেছেন তিনি।

জানা যায়, এরশাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ইতিমধ্যে বনানী কবরস্থানে স্থায়ী জায়গা কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে রাজধানীর বারিধারায় আমেরিকান সেন্টারের কয়েকশ গজ উত্তরে একটি মাদ্রাসা ও এতিম খানার কাছে জায়গা দেখা হয়েছে। এছাড়া পূর্বাচলের কাছেও একটি জায়গা দেখে এসেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কোনোটিই এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

এছাড়া তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে গত রমজানে কূটনীতিকদের সম্মানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ইতিমধ্যে এরশাদ তার সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ট্রাস্ট গঠন করে দান করেছেন।

কবি ও প্রেমিক এরশাদ

‘আমার যৌবন আর বেশি দিন নেই। কয়েক বছর পর আমি মধ্যবয়স্ক হয়ে যাব। তাই যতোদিন পারি, এই ক্ষণস্থায়ী যৌবনকে উপভোগ করতে চাই।’ কথাগুলো যুক্তরাজ্যে গিয়ে বলেছিলেন ৮২ বছর বয়সের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তার এমন বক্তব্য থেকে বুঝা যায় কতটা ‘রোমান্টিক’ও ‘প্রেমিক পুরুষ’ তিনি।

তিনি একাধারে ছিলেন কবি ও প্রেমিক পুরুষ। তিনি তো একবার বলেই ফেলেছিলেন, আমাকে অনেকে কবি বলেন না। আমিও বলব না আমি কবি। আমার লেখা পড়লে বুঝবেন আমার মনে কত ব্যথা, কত সুর, কত আনন্দ।

তিনি কবিতা লেখার পাশাপাশি প্রেমে পড়েছেন একাধিক নারীর। যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। একবার প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নুরে-আলম সিদ্দিকী এরশাদ সম্পর্কে বলেন,‘ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেমিকার সংখ্যা কত, তা হাতে গুনে শেষ করা অসম্ভব।’

তবে এর জন্য তিনি যেমন অনেক সমালোচিতও হয়েছেন। আবার এর কারণে অনেকের আগ্রহের জায়গাও তৈরি হয়েছে তার সম্পর্কে।

তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘এরশাদের প্রেমে পড়াটা ভুল ছিল এমনটা কখনো মনে হয়নি। এরশাদের মতো কেউ তো আমাকে ভেজা রুমালে শিউলি ফুল দিয়ে ঘুম ভাঙাবে না। এমন প্রেমিক পৃথিবীতে নেই। আমি তো মনে করি, এরশাদ এখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। সেটা নাটক হয়ে থাকলে নাটক। কিন্তু আমি তো এনজয় করেছি।’

অন্যদিকে একবার একটি সভায় প্রস্থানরত স্ত্রী রওশনের হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘রওশন আমার আলোর মৌমাছি।’

তার বর্তমান স্ত্রী রওশান এরশাদকে নিয়ে তিনি একটা কবিতাও লিখেন। তা হলো,

‘নিঃসঙ্গ ধূসর বিশাল এক অন্ধকারে

আমি জেগে আছি

কোথায় উষার জ্যোতি

কতদূর আলোর মৌমাছি?

হুসেইন মুহাম্মদ অসংখ্য কবিতার বই লিখেছেন, তার উল্লেখযোগ্য কবিতার বই হলো, -প্রেমের কবিতা, হে আমার দেশ, বৈশাখের কবিতা, ঈদের কবিতা, এক দেশে সাত তারা, জীবন যখন যেমন প্রভৃতি।

এরশাদের শাসনকালীন সাফল্য

থানা পর্যায়ে দেশব্যাপী উপজেলা স্থানীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্যই এরশাদ আমল (১৯৮২-৯০) স্মরণীয় হয়ে আছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা মূলত আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশি কেন্দ্র হিসেবে থানাগুলোকে সৃষ্টি করে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের জন্য ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মতো থানা পর্যায়ে একটি স্থানীয় সরকার ইউনিট গঠন করা হয়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রশাসন ও পরিকল্পনায় তাদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাই উপজেলাগুলোকে উন্নয়ন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উন্নীত করার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়।

এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে ১৯৮২ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০টি ধাপে ৪৬০টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

এ আইনের আওতায় উপজেলা পরিষদগুলোকে একটি কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়, যাতে প্রতিনিধিত্বমূলক সদস্য ছাড়াও পেশাজীবী ও প্রায়োগিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। চেয়ারম্যানরা ছিলেন পরিষদের প্রধান নির্বাহী এবং তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন।

এর বাইরে উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা, উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি, তিনজন মহিলা সদস্য, একজন মনোনীত সদস্য এবং সরকারি সদস্যবৃন্দ। উপজেলা পরিষদসমূহের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানবৃন্দ ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পের বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং দেশে ব্যক্তিখাতের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল সরকারি মালিকানাধীন উত্তরা, পুবালী ও রূপালী ব্যাংকের বিরাষ্ট্রীয়করণ। এ সময়ে দেশে প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণ্যিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিকে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি প্রদান করা হয়।

দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও সংস্কারেও এরশাদ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে জেলার সংখ্যা ৬৪ করা হয়। এগুলোর অধীনে আবার ন্যস্ত করা হয় ৪৬০টি উপজেলাকে।

একটি সমন্বিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে প্রায়োগিক পার্থক্যের ভিত্তিতে এরশাদ সরকার ৩০টি ক্যাডারে বিভক্ত করে; সিভিল সার্ভিস ক্যাডারসমূহের গঠন ও দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের আনুষ্ঠানিক আকার দেওয়ার লক্ষে ক্যাডার কম্পোজিশন ও নিয়োগ বিধি জারি করা হয়।

পাশাপাশি এদের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য প্রণীত হয় সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধি এবং শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি। নারীসমাজের আর্থ-সামাজিক স্বার্থ সমুন্নত রাখতে এরশাদ সরকার ১৯৮৪ সালে একটি পৃথক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করে।

এরশাদ আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন সিভিল পদে মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ। তবে প্রশাসনের আকার কমাতে তিনি বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় দফতর বিলোপ করেন এবং অনেক দপ্তর একীভূত করেন।

ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসিয়ে এরশাদ উচ্চতর আদালত বিকেন্দ্রীকরণেরও প্রয়াস চালান, কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে পরে তা খারিজ হয়ে যায়।

এরশাদ সরকার দেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমি সংস্কারেরও প্রয়াস চালান। এ লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৮২ সালে ঘোষিত নতুন শিল্পনীতিকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য আরো উদার করে এরশাদ ১৯৮৬ সালে আরেকটি শিল্পনীতি ঘোষণা করেন। এরশাদের আমলে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত লক্ষণীয়, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে।

তাঁর অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল ভিত্তি ছিল সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের নেতৃত্বে প্রবৃদ্ধি অর্জন। ব্যক্তিখাতকে শিল্প-বিনিয়োগে সহায়তা দিতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে এরশাদ ১৯৮৯ সালে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিনিয়োগ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।

বিশেষত উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার কারণে এরশাদের অনুসারীরা তাঁকে ‘পল্লীবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রয়ারি রংপুর জেলায় দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সব কিছু থাকলেও একদিক দিয়ে তিনি অসহায়। বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন তিনি। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। প্রতিটি মানুষেরই খারাপ-ভাল গুণ থাকে। এর বাইরে কেউ নয়। ভাল-মন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। তবে মানুষ হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেমনই হোক না কেন তার সহজ সরল ও স্বাভাবিক প্রস্থান আশা করে বাংলাদেশের জনগণ।