ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্ধ হতে পারে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল ড্রেজিং

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ১০:৫৯ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১১:০৭ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার

মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের মাটি ফেলতে না পারায় চ্যানল খনন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ২৬ কিলোমিটার এ চ্যানেলের নৌ পথের দু’পারে খননের মাটি দিয়ে সব জায়গাই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন জায়গার অভাবে নদী খননের মাটি আর ফেলা যাচ্ছেনা। ফলে খননকৃত মাটি কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে চরম সংকট তৈরি হচ্ছে। মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেল খননে দায়িত্বরত বি আই ডাব্লুউ টি এ (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ) এসব তথ্য জানায়। 

নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের দূরত্ব কমাতে ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেলটির খনন কাজ শুরু করা হয়। ৮০’দশকের পর থেকে স্থানীয়রা ওই চ্যানেলটির সংঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোতে অবৈধ বাধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করলে ভাটার সময়ে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে পলি পড়ে ভরাট হতে শুরু করে। দ্রুত ২২ কিলোমিটার পলি পড়ে ২০১০ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এ চ্যানেলটি। পরে ২০১৪ সালে ১ জুলাই ২৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পলি অপসারণ করে খনন কাজ শুরু করে নৌ চ্যানেলটি পুণরায় চালু করা হয়। তবে চ্যানেলটি ড্রেজিং দ্বারা খনন করা মাটি কোথায় ফেলবে তা নিয়ে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নদীর দু’পারে খননের মাটি ফেলতে ফেলতে আর কোনও জায়গা নেই বলে জানা গেছে। 

বি আই ডাব্লুউ টি এ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আনিচ্ছুজামান জানান, মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ঠিক রাখতে সোমবার (১৫ জুলাই) পর্যন্ত ২৭৭ দশমিক ৪৬ লক্ষ ঘনমিটার মাটি খনন করা হয়েছে। ২৬ কিলোমিটার নৌপথের মাটি খনন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

প্রকৌশলী মোঃ আনিচ্ছুজামান আরও বলেন, নদী খননের এসব মাটি নদীর দ’পারেই ফেলা হয়েছে। একই জায়গায় একাধিকবার এ মাটি ফেলায় উচু টিলার সৃষ্টি হয়েছে। যা যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশংকা করেন তিনি। এছাড়া তাদের ড্রেজিং দ্বারা নদী খননের মাটি মোংলা ও রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে মাটি দিতে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোন জায়গা পাচ্ছেন না তরা। তাই নদী খননের মাটি ফেলার জায়গা না পেলে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননেও বাধা সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের মাটি দ্বারা নদীর দু’পারে নিচু জমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি ও শিল্পায়ন সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জমির দামও বেড়েছে চারগুনে। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল বলেন, আর্ন্তজাতিক এ নৌ চ্যানেলটি পুনরায় চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরে আমদানি রফতানিতে গুরুত্ব বেড়েছে। স্থায়ীভাবে এ চ্যানেলটির নাব্যতা ঠিক রাখতে পারলে অর্থনৈতিক ভাবেও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। চ্যানেলে খনন কাজে বাধার সৃষ্টি হলে নৌ চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই চ্যানেলটি চালু রাখতে সরকারের সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। 

এছাড়া এ ব্যবসায়ী আরও যোগ করে বলেন, নদী খননের মাটি দ্বারা নদীর দু’পারে অনেক নিচু এলাকা ভরাট হওয়ায় জমির দামও বেড়েছে। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ওই সব জায়গা অধিগ্রহন করে কলকারখানা করছে। যা এসব এলাকাকে ঘিরে নতু সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে।       

বি আই ডাব্লুউ টি এ’র ড্রেজিং বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাবের হোসেন মজুমদার জানান, মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের মাটি দিয়ে কয়েক’শ একর সরকারী বেসরকারী জমি ভরাট করা হয়েছে। মাটি ফেলার এখন আর কোনও জায়াগা নেই। নতুন করে জায়গা সৃষ্টি হলে ড্রেজিং বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি। 

আরকে//