ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সময়ের দীর্ঘসূত্রিতা এড়ানোর উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৬ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

আজ করবো, কাল করবো, সকালে করবো, বিকালে করবো- এভাবেই আমরা সময়ের দীর্ঘসূত্রিতায় জড়িয়ে থাকছি। আবার এই করি করি করে আর করা হয় না। আর যদি করাও হয় তা শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়োর মধ্যে। ধীরে সুস্থে ভালোভাবে করার জন্যে রেখে দিলেও শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কাজটি শেষ করতে হচ্ছে দায়সারাভাবে। অথচ আমরা একটু সচেষ্ট হলেই এই দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে উঠতে পারি। জীবনকে করে তুলতে পারি আরও সফল, আরও আনন্দময়।


মনোবিজ্ঞানী ড. লিন্ডা সাপাদিন দীর্ঘ গবেষণা করে দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে তিনটি সাধারণ অনুভূতি বা আচরণ শনাক্ত করেছেন। তা হলো- ১. বড় বড় কাজ করতে চাই কিন্তু সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করি না। ২. কাজ শুরু না করার ব্যাখ্যা দাঁড় করাই। ৩. দীর্ঘসূত্রিতার দ্বারা সুখকে স্যাবোটাজ করা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অনুশোচনা দীর্ঘসূত্রিতাকেই আরও বাড়িয়ে দেয়।


গবেষণায় আরও বলা হয়, দীর্ঘসূত্রিতার মূল কারণ আলস্য নয়, এর প্রধান কারণ হচ্ছে অজানা আশঙ্কা। এই আশঙ্কা বা ভয় হতে পারে পরিবর্তনের ভয়, নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়, অশান্তির ভয় বা অন্য কোনো ভয়– যার অস্তিত্ব রয়েছে আপনার মনের গহীনে। আর দীর্ঘসূত্রী মানুষ সব সময় পেছনে পড়ে থাকে। অন্যরা যখন সাফল্যের সোপানে ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়, সে তখন পেছনে থেকে দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। 
দীর্ঘসূত্রিতার প্রধান ধরন হচ্ছে ৬টি। এই ছয় ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা যেভাবে এড়ানো যায় জেন নিন :


স্বপ্নচারী 
এই জাতীয় মানুষ বাস্তব জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আকাশকুসুম কল্পনার মাঝে ডুবে থাকতেই ভালবাসে। কারণ সেখানে কোন কিছুই তাদের জন্যে হুমকি নয়। তাদের নিয়ম অনুসরণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ধরনের স্বপ্নচারী দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পেশাগত, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক সমস্যা সৃষ্টি করে। যা পরিণামে তার মধ্যে এক পলায়নী মনোবৃত্তি জন্ম দেয়।


প্রতিকার : আপনি যদি এ ধরনের স্বপ্নচারী হন, তাহলে মুহূর্তের ভালোলাগা আর নিজেকে ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখুন। আপনি যদি এখন দিবাস্বপ্নে ডুবে থাকেন বা টেলিভিশনের সামনে বসে অলস সময় কাটান, তাহলে এটা হচ্ছে মুহূর্তের ভালোলাগা। কিন্তু আপনি যদি নতুন কিছু শেখেন, কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে সময় ব্যয় করেন, তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, নিজের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। এটা হচ্ছে নিজেকে ভালোলাগা। তাই বাস্তবতার আলোকে প্রতিদিন কি কি করা যায় এবং তা করার জন্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিন। আজকের কাজ আজকেই করব এই মানসিকতা গড়ে তুলুন।


দুশ্চিন্তাকারী
দুশ্চিন্তাকারীরা সবসময় নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কোন ঝুঁকি বা পরিবর্তনের মুখোমুখি হলেই দুশ্চিন্তায় তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। ঝর্ণাধারার মতো অবিরাম গতিতে দুশ্চিন্তার প্রবাহ চলতে থাকে তার মনের ভেতরে। অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করার চেয়ে সে একঘেয়ে নিরাপদ জীবনকেই বেছে নেয়। এসব ক্ষেত্রে তার অভিভাবকরা প্রতিটি প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসেন এবং সন্তান যে তাদেরকে ছাড়া চলতে পারে না এই অনুভূতিতে আনন্দ পান। দুশ্চিন্তাকারীদের জীবনে আনন্দ খুবই কম থাকে। তারা সহজেই ক্লান্ত হয়ে যায়।


প্রতিকার : অধিকাংশ দুশ্চিন্তাকারীর অন্তরেই ঘুমিয়ে আছে প্রাণবন্ত সাহসী সত্তা। আপনি যদি একঘেঁয়েমিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যদি কিছুই ভালো না লাগে, তখনই আপনাকে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সবকিছুর মধ্যেই বিপদ কল্পনা করা থেকে বিরত থাকুন। নতুন পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে শুধুমাত্র খারাপ দিকগুলো না ভেবে সম্ভাবনাগুলো নিয়ে ভাবুন। ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবলে অনুভূতিই পাল্টে যাবে। নতুন কাজে হাত দেয়ার সাহস পাবেন।


অমান্যকারী 
কর্তৃত্ব বা ক্ষমতার বিরুদ্ধে এদের ক্ষোভ রয়েছে। এরা এই ক্ষোভ প্রকাশ করে খুবই সংগোপনে। এই ধরনের দীর্ঘসূত্রিতাকারীকে কেউ যদি বলেন, এ কাজটা করে দাও। সে সঙ্গে সঙ্গে বলবে- ঠিক আছে, করে দেব। কিন্তু তারপর সে তার প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যাবে অথবা আধাআধি কাজটি করবে বা অনেক দেরিতে কাজটি করবে। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এরা অন্যের প্রয়োজন পূরণের বেলায় এই একই কৌশল অবলম্বন করে। এর পরিণামে অমান্যকারী নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
প্রতিকার : নিজেকে জীবনের শিকার মনে করার পরিবর্তে জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভাবুন। অন্যরা আপনার ব্যাপারে কি করছে সে দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজের জন্যে কি করছেন তা নিয়ে ভাবুন। নিজে উদ্যোগী হওয়া ও প্রো-অ্যাকটিভ হওয়াই শক্তিমান ও ক্ষমতাবান হওয়ার প্রথম শর্ত।


সঙ্কট সৃষ্টিকারী 
একজন সঙ্কট সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিকে আমলে নেয় না। চাপ অনুভব না করলে শুরুই করতে পারে না। পরে অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। সব বাদ দিয়ে সময়মতো কাজ শেষ করার জন্যে লেগে যায়। এ ধরনের প্রক্রিয়া তারুণ্যে চলে। কিন্তু ৪০-এর পর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শরীর তাল মিলাতে পারে না।

প্রতিকার : সময়সীমার মধ্যে কাজ করা বীরত্বব্যঞ্জক কিছু নয়, এটি নিয়ম। সঙ্কট সৃষ্টি করে কাজ করাটা একমাত্র প্রক্রিয়া নয়। সঙ্কটসৃষ্টিকারী কাজের ব্যাপারে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় না ভুগে এখনই করতে হবে এই ভেবে নিয়ে কাজে হাত দিন।

নিখুঁত কর্মসম্পাদনকারী
এরা প্রতিটি কাজই নিখুঁতভাবে করতে চায়। যে কোন কাজ করতে গেলেই আত্মমর্যাদাকে এর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা আদর্শবাদী এবং সময় ও শক্তি ব্যয়ের ব্যাপারে অবাস্তববাদী। এরা প্রতিটি জিনিসকেই হয় একেবারে নিখুঁত অথবা কিছুই না এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে তারা নিজেদেরকেই ব্যর্থ ভাবে। নিখুঁত কর্মসম্পাদনারীরা মনের গভীরে সবসময় মনে করে পুরোপুরি না পারলেই শেষ হয়ে গেলাম। 


প্রতিকার : কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। তাই কোনো কাজই নিখুঁত হতে পারে না। আপনার মাঝে মাঝে ভুল করা উচিত। টেবিলের ওপর আধাবেলা সব এলোমেলো করে রাখুন। পোশাকে একটু খুঁত থাকুক না এক বেলা। যখন দেখবেন এর ফলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না তখনই আপনি শিখবেন—নিখুঁত নয়, সুন্দরভাবে সময়মতো কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।


সব কাজের কাজী
সব কাজের কাজী সব সময় ব্যস্ত। কাজের মধ্যে থাকতে চায়। সে সবাইকে খুশি করতে চায়। কাউকেই না বলতে পারে না। সব কাজের কাজীকে আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হয়, সেই সফল। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। আত্মনির্ভরশীল হওয়া ও সব কাজ করার সংগ্রামে সে তার কাজ ও সময়ের মধ্যে সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়। যাদের সে খুশি করতে চেয়েছিল তাদেরকেও সে খুশি করার জন্যে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে কিন্তু তাদেরও খুশি করতে পারে না। কারণ সে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ হাতে নিয়েছিল।


প্রতিকার : সব কাজের কাজীদের হাতে সময় ও কাজ কতটা আছে সেটা বিবেচনা করে হ্যাঁ বলুন। এ সপ্তাহে করতে না পারলে আগামী সপ্তাহের কথা বলুন। যতটুকু আপনি করতে পারবেন ততটুকুই নিন। বাকিটুকু ছেড়ে দিন অন্যদের জন্যে। তাহলেই আপনি সুখী হবেন। অন্যরাও আনন্দ পাবে।


এবার নিজেকে আবিষ্কার করুন এই ৬ ধরনের দীর্ঘসূত্রীর মধ্যে আপনি কোন গ্রুপে। সেভাবে পদক্ষেপ নিন। দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দর জীবনের পথে অগ্রসর হতে থাকুন।


এএইচ/