ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জাতিসংঘে শিশুদের মুখপাত্র হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আরিফ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:০১ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

স্বপ্নবাজ তরুণ আরিফ রহমান শিবলী। বাবার ব্যবসায় লসের কারণে ছোটবেলাতেই সংসারের টানাপোড়েন প্রত্যক্ষ করেছেন। পরীক্ষার ফি জোগাতেই হিমশিম খেতে হত। শত কষ্টের মাঝেও স্বপ্ন দেখতে ভুলেননি। প্রতি মুহূর্তেই স্বপ্ন দেখেন নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে পারেন৷ ছোটবেলায় নিজের কষ্টের পরিণতিই তাকে এই কাজ করতে উৎসাহিত করে৷

এরপর এগুতে থাকেন নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে। স্কুল জীবনেই কাজ শুরু করেন বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। এরপর আরও কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অনেক জনপ্রিয় গণমাধ্যমে কাজ করেছেন এই স্বপ্নবাজ তরুণ৷

গণমাধ্যমে কাজের সময় থেকেই আয়ের একটি অংশ দিয়ে ১৭ জন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কাজের মধ্য দিয়ে দেশের সুনাম বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আরিফ। চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় রক ব্যান্ড লিংকিন পার্ক নিয়ে আরিফের তৈরি করা বায়োগ্রাফি ব্যান্ডটির সদস্যদের নজরে আসে। তাকে নিয়ে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন ব্যান্ডটির র‍্যাপ ভোকাল মাইক সিনোডা। যেটা আরিফের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পরিচিত করেছে বিশ্ববাসীর কাছে।

বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিস্তিনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু কিশোরদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।

গণমাধ্যমে কাজ করে দেশে বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আরিফ ইতিমধ্যে পেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও আর্টিকেল নাইন্টিন সদস্যপদ।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে করা জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশের সম্মেলনে এই তরুণ আরিফ বক্তব্য রাখেন। ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রথম ও জনপ্রিয় শিশু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ‘কিডস মিডিয়ার’ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর থেকে আরিফকে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে পরিচিত করে তোলে আরও। শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আরিফ রহমান শিবলী ইতিমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাংলাদেশ সরকার থেকেও সম্মাননা পেয়েছেন।

‘কিডস’ খ্যাত এই আরিফ স্বপ্ন দেখেন জাতিসংঘের মঞ্চে সারা বিশ্বের নেতাদের কাছে তুলে ধরবেন বাংলাদেশি শিশু কিশোরদের সমস্যা-সম্ভাবনা।

জাতিসংঘে শিশুদের মুখপাত্র হয়ে যেতে পারলে কি কি বিষয় তুলে ধরবেন এমন প্রশ্নের জবাবে  আরিফ বলেন, অবশ্যই সারা বিশ্বের শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট গড়ে তোলা কতটা জরুরি তা তুলে ধরব৷ এর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে তা তুলে ধরতে চাই বিশ্ব মঞ্চে। বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার হাত ধরে কিভাবে বাল্যবিবাহ, শিশু চোরাচালান বন্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় সফলতার সঙ্গে এগিয়ে গেছে তাও তুলে ধরতে চাই। রোহিঙ্গা শিশুদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ যেভাবে সীমান্ত খুলে দিয়ে মানবতা দেখিয়েছে তা অনেক ধনী দেশের জন্যেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমি বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরতে চাইবো, মধ্যবিত্ত দেশ হওয়া সত্বেও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, এনজিওদের সহায়তা নিয়ে কিভাবে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা করে যাচ্ছে। নারী শিক্ষাকে শক্তিশালী গতিশীল করতে কিভাবে বাংলাদেশ সরকার সফলতা দেখিয়ে চলেছে আমি তাও তুলে ধরতে চাই৷ এর পাশাপাশি সারা বিশ্বে বেড়ে যাওয়া শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন দমন করতে বিশ্ব নেতাদের সহায়তা চাইব এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর শিশুদের শারীরিক পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসা বাড়ানো কতটা দরকার তাও তুলে ধরতে চাই বিশ্ব মঞ্চে।

নিজের স্বপ্ন পূরণে ও বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন আরিফ।

তিনি বলেন, ‌আমি হার মানতে শিখিনি। নিজ প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা পেলে বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার দেশের শিশু-কিশোরদের আশা, প্রত্যাশা, সফলতা তুলে ধরতে পারব।