ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বেসরকারি এজেন্সির অনিয়ম-দুর্নীতিতে দুর্ভোগে হাজীরা, ৫ জনের মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য প্রতিবছর নানান পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন বাংলাদেশ সরকার। তবে কিছু বেসরকারি হজ এজেন্সির অসহযোগিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গত বছরের ন্যায় এবারও অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মক্কায় বাংলাদেশ থেকে আসা হজযাত্রীদের। এছাড়া ইতোমধ্যে সেখানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন পাঁচ জন।

প্রতি বছরের মতো এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজ করতে আসা হাজীদের অভিযোগ, হজের বুকিং নেয়ার সময় এজেন্সির মালিকরা নানা আকর্ষণীয় কথা বলে থাকে। মক্কায় আল্লাহর ঘর পবিত্র ক্বাবা শরীফের খুব কাছে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে, ফাইভ স্টারের মতো হোটেলে রাখা হবে ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে আসার পর সেগুলোর কোন কিছুই মেলে না। 

হাজীদের অভিযোগ- ভালো খাবার, ভালো হোটেল রুম, হজ পালনে দক্ষ গাইড দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা কিছুই পাননি। গাইডের অভাবে হজের অনেক আহকাম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন কি না সন্দেহ অনেকের।

হজ করতে আসা আশার আলীম বলেন, হজ এজেন্সিগুলো আমাদের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কায় এসে দেখলাম এগুলোর ধারে কাছেও নেই এজেন্সিগুলো। আমাদেরকে বাংলাদেশি খানাদানা এবং সবসময় এজেন্সির পক্ষ থেকে হাজীদের জন্য গাইড দেবার কথা ছিল। কিন্তু এজেন্সিগুলো এর কোন প্রতিশ্রুতিই রাখেনি। 

বাংলাদেশের আরেক মহিলা হাজী আমেনা খাতুন জানান, আমরা মক্কায় এসে পৌঁছানোর পর প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুরই মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের পবিত্র ক্বাবা শরীফের পাশে রাখার কথা বলেছিলো। কিন্তু এখন ক্বাবা ঘর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে আমাদের রাখা হয়েছে। পবিত্র হারাম শরীফ গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারছি না হারাম শরীফে।

আরেক হাজী বলেন, খাবারের মান এতো নিম্ন পর্যায়ের যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া আমাদের যে বিল্ডিংয়ে রাখা হয়েছে সেখানে অনেক সময় পানি থাকেনা, ফলে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।  

এ ব্যাপারে হজ কনসাল মোহাম্মদ হাসান-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারি হাজীদের ব্যাপারে সরকারের একজন উপসচিব সার্বিক নজরদারি করছেন। আর বেসরকারি হাজীদের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই সমস্ত এজেন্সিকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হচ্ছে। 

এছাড়া যদি কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে সেই এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি। 

তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরের হজ কর্মী এবং হাজীদের আরাফাহ, মুজদালিফা ও মিনাতে সহযোগিতা করার জন্য রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দাস্থ কনসাল জেনারেল ২০০০ হাজার-এর মতো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করবেন। এ ছাড়াও ডাক্তার, নার্স ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলও কাজ করবেন।

এদিকে এ বছর প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৮ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করবেন। গত ৪ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৫৫ হাজার ১২৩ জন হজযাত্রী মক্কায় এসে পৌঁছেছেন। তন্মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫০ হাজার ৫১৯ জন এবং সরকারিভাবে ৪ হাজার ৬০৪ জন হাজী এসে পৌঁছেছেন। এরমধ্যে মক্কায় ৫ জন হাজীর মৃত্যু হয়েছে।

আল্লাহর মেহমান হিসেবে আসা এসব হাজীদের দাবি, বেসরকারি এজেন্সিগুলো হজের আগে তাদের জন্য দক্ষ গাইড দিলে তারা ভালোভাবে ও সুস্থ্যভাবে হজ পালন করেতে পারবেন।

এনএস/এসি