ঢাকা, শনিবার   ১১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

যে কারণে মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বরগুনায় বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী ও হত্যকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। 

বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী। 

এসময় আদালতের বিচারকের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হন মিন্নি। এর একটির জবাবে নিজেকে নিরাপরাধ দাবি করে স্বামীর খুনীদের ফাঁসি চান মিন্নি।

এ সময় আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমি তিন জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল, আমার মনে হয় প্রতিপক্ষদের ভয়ে তারা আমার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।’

মিন্নির বাবা আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে আজ (বুধবার) আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের এর দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারনে দাঁড়াননি আমি বলতে পারবো না। তবে ধারণা করছি, প্রতিপক্ষের ভয়ে হয়তো কোনও আইনজীবীরা দাঁড়াননি।’

কোন প্রতিপক্ষের কারণেই কি আইনজীবী দাঁড়াননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিপক্ষ সেটা আপনারাই বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে বরগুনা থাকতে পারবো না। এছাড়াও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে কারণেই হয়তো সব কাগজপত্র রেডি করা সম্ভব হয়নি।’

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে মোজাম্মেল হোসেন তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমি তার পক্ষে দাঁড়াইনি।’ তবে কী কারণে দাঁড়াননি এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তিনি।

আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাকে মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে বলেছিলো কিন্তু ওকালতনামায় স্বাক্ষর না থাকায় আমরা মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে পারিনি। কোনও আইনজীবী তার পক্ষে না দাঁড়াতে পারলেও বিচারক তাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। মিন্নিই তার পক্ষে তার বক্তব্য পেশ করেছেন।’

কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জানা গেছে, স্থানীয় এমপিপুত্র অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের হুমকি! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমপিপুত্র আগেই স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন, খুনিদের পক্ষে আইনজীবীরা মামলা চালাবেন না। মূলত এই হুমকিমূলক স্ট্যাটাসের কারণেই কোন আইনজীবীই আদালতে মিন্নির পক্ষে দাঁড়ায়নি বা দাঁড়াতে সাহস করেনি। 

বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘যদি কোনও আইনজীবী আসামির পক্ষে দাঁড়াতে চায় এবং সেই বিষয়টি আদালতের বিচারকের কাছে আর্জি জানায় তাহলে বিচারক তাকে আসামির পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিন্নিকে যখন আদালতে হাজির করা হয়েছিল, বিচারক তখন উপস্থিত আইনজীবীদের বলেছিলেন- কেউ আসামির পক্ষে দাঁড়াতে চান কিনা। কিন্তু তখন কোনও আইনজীবীই আসামির পক্ষে দাঁড়ানোর কথা বলেনি।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার নিজ বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে আনা হয়।

এদিকে বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১০ জন আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।