ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রিফাত হত্যা: তদন্তে হস্তক্ষেপ করবেনা হাইকোর্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩৯ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৪১ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার ঘটনায় চলমান তদন্তে কোনোধরনের হস্তক্ষেপ করবেনা বলে জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে, আইনজীবী ফারুক হোসেন রিফাত হত্যার প্রধান স্বাক্ষী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার, তদন্ত ও রিমাণ্ডের প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করলে আদালত এ কথা জানান। 

প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে  আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, বাদী পক্ষের সবচেয়ে আস্থাভাজন মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

শুধু তাই নয়, তাকে ১২ ঘন্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে তোলা হলে, মিন্নিকে ৫ দিনের রিমাণ্ড দেন আদালত। বিষয়টি আদালতের দেখা  উচিত। তার পক্ষে কোন আইনজীবীও দাঁড়াচ্ছেন না বলেও এসময় তিনি  উল্লেখ করেন। তার এমন কথার প্রেক্ষিতে জেষ্ঠ্য বিচারক বলেন, ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে, আমরা কোনোভাবেই এখানে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না। 

আইনজীবী ফারুক হোসেন তখন বলেন, মিন্নি  তো আসামী নয়, স্বাক্ষী। তাকে রিমাণ্ডে নেয়া হয়েছে। বিচারক তখন বলেন, “সে তো এখন গ্রেপ্তার। পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এখন আপনার কিছু করার থাকলে ফৌজদারি নিয়ম মেনে করুন। প্রপার চ্যানেলে আসুন। আমরা তদন্তে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।” 

পরে গণমাধ্যমকে আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, মিন্নি এ ঘটনায় এক নম্বর স্বাক্ষী। যেখানে পুলিশ এজহারভুক্ত সব আসামীকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি, সেখানে মিন্নিকে গ্রেফতার কতটা যৌক্তিক। 
তাকে রিমাণ্ড নেওয়ায় মামলা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে, এমন আশঙ্কায় আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিলাম। 

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী মিন্নির উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হোন রিফাত। 
এ ঘটনার পরদিন রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হোন। 

গত ১৪ জুলাই রিফাতের বাবা রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নিকে দায়ী করে তার গ্রেফতার দাবী করেন। পরদিন প্রেসক্লাবে মিন্নির গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। 
যদিও শুশুরের অভিযোগ অস্বীকার করে মিন্নি বলেন, নয়নের সহযোগীরা আমাকে ফাঁসাতে আমার শুশুরকে ব্যবহার করছে। 

এছাড়া মিন্নির বিরুদ্ধে নয়নের মায়ের দেয়া বক্তব্য ভাইরাল হলে আলোচনায় আসে মিন্নি। গত মঙ্গলবার এক আসামীকে শণাক্ত করার কথা বলে পুলিশ লাইনে মিন্নিকে নেয়া হয়। পরে সারাদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সম্পৃক্ততা প্রতীয়মান হওয়ার কথা দাবি করে পুলিশ। ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। 

পরদিন বুধবার আদালতে তুললে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোয় স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের চাপের বিষয়টি নজরে আনে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। 

মিন্নিকে একা আদালতে তোলা হলে মিন্নি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে স্বামী হত্যার বিচার চান। কিন্তু নয়নকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে আদালত জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি মিন্নি। 
মিন্নির বাবা বলেন, মিন্নির জন্য তিনজন আইনজীবীকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছি। তারা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, কিন্তু দাঁড়াননি। এজন্য প্রভাবশালী মহলকে দায়ী করেন তিনি। 

ওই আইনজীবীরা অবশ্য কারণ হিসেবে ওকালতনামা না পাওয়ার কথা জানান। 
পরে আদালত মিন্নিকে ৫ দিনের রিমাণ্ড দেন। এমন অবস্থায় সরকারের সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একজন সংসদ সদস্য মিন্নিকে গ্রেফতারে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানান। 
তার একদিন পরই আইনজীবী ফারুক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিষয়টি নজরে আনেন। তবে আদালত তা নাকচ করে দিয়ে জানান পুলিশের তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। 

আই/আরকে