ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

যেসব পাত্রে রান্না করছেন, তা কতটা নিরাপদ!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১১ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

খাওয়া-দাওয়ার বেলায় সবারই মনোযোগ থাকে খাবার সামগ্রি ও মশলার দিকে। স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এ রকম চিন্তা মাথায় রেখেই খাবার বাছাই করা হয়। কিন্তু যেসব পাত্রে খাবার রান্না হচ্ছে, এ পাত্রের উপাদান মিশে গিয়ে খাবার দূষিত হতে পারে। তা থেকে আপনার স্বাস্থ্যহানীও হতে পারে। খাবার রান্নার পাত্র সুস্বাস্থ্য়ের একটি মাপকাঠিও বটে।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কথা মাথায় রাখলে, ঘরে রান্না করে খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু রান্না ও খাওয়ার কাজে কোন পাত্র ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ৷  কারণ ভুল পাত্রে রান্না করলে এই পাত্র থেকে কিছু উপাদান মিশে খাবারকে বিষাক্ত করে দিতে পারে৷ এ থেকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন অসুখ৷

এবার দেখা যাক কোন পাত্রে রান্না কতটা নিরাপদ :

অ্যালুমিনিয়াম , অক্সিডাইজ করা থাকে বলে এতে রান্না করলে বা গরম করলে খাবার দূষিত হয় না৷ তবে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে গরম খাবার রাখলে বা এতে জড়িয়ে রান্না করলে সে খাবার দূষিত হতে পারে৷

জার্নাল অফ অ্যালঝাইমার ডিজিজে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জানা গেছে কম বয়সে অ্যালঝাইমার ও পার্কিনসন ডিজিজ দেখা দেওয়ার মূলে এই ধাতুটির ভূমিকা আছে৷ এছাড়া আমেরিকার স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যে এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (এটিএসডিআর) বার করা হয়, তাতে ক্ষতিকর ২০০টি রাসায়নিকের তালিকায় অ্যালুমিনিয়ামের নামও আছে৷ কাজেই খাবার প্যাক করার কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বদলে পার্চমেন্ট কাগজ ব্যবহার।

নন–স্টিক প্যান : শৌখিন রান্নাঘরের অঙ্গ৷ কম তেলে রান্না করতে ও সহজে পরিষ্কার করতে এর জুড়ি মেলা ভার৷ টেফলন, সিলভারস্টোন, টেফাল, অ্যানোলন, সার্কুলন, সেফালনসহ আরও অনেকে উপাদান রয়েছে এসব পাত্রে। যা রান্নার সময়ে খাবারের সঙ্গে মিশে দূষিত করে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে এসব উপাদানের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, পড়াশোনার দক্ষতা কমে যাওয়া ও ওজন বাড়ার একটা যোগ আছে৷

স্টেইনলেস স্টিল  : ভাল মানের স্টিল দেখতে ভাল, কাজেও ভাল৷ এই ধরনের বাসন  থেকে কোনও ক্ষতিকর ধাতু খাবারে এসে মেশে না৷ যদিও আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ মিশলে বরং ভাল, কারণ আমাদের শরীরে এদের প্রয়োজনীয়তা আছে৷

কিছু স্টিলের পাত্রে অ্যালুমিনিয়াম বা তামার প্রলেপ দেওয়া থাকে৷  কখনও আবার পাত্রের নীচে থাকে তামার প্রলেপ৷ অনেকক্ষণ তাপ ধরে রাখার জন্যই এসব করা হয় সচরাচর৷ তবে স্টিলের দুটি স্তরের মাঝে স্যান্ডুইচের মতো করে দেওয়া থাকে বলে, প্রবল ঘষাঘষিতে উপরের স্তর উঠে না গেলে কোনও ক্ষতি হয় না৷

লোহার পাত্র : লোহার পাত্র দেখতে খুব একটা ভাল হয় না৷ তার উপর এতে রান্না করলে খাবার অনেক সময় কালো হয়ে যায়৷ টমেটো, লেবুর রস বা ভিনিগার দিয়ে করলে তো আর কথাই নেই৷ কিন্তু এসব না ভেবে যদি লোহার কড়াই ব্যবহার করেন, কড়াই থেকে লোহা খাবারে মিশে পুষ্টি বাড়িয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, পলিসাইথিমিয়া নামে বেশি রক্ত থাকার অসুখ বা থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকলে নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে৷

তামা : এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (এটিএসডিআর)–এর প্রায়োরিটি টক্সিন তালিকার বেশ উঁচুতেই রয়েছে তামার নাম৷  সুস্বাস্থ্যের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স–এর ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক্সের মতে পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রামের মতো তামা দরকার৷ আর তার পরিমাণ ১০,০০০ মাইক্রোগ্রাম বা ১০ মিলিগ্রামের থেকে বেড়ে না গেলে কোনও ক্ষতি নেই৷ কাজেই এসব পাত্রে রান্না করলে কি খেলে ভাল ছাড়া মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই৷

মেলামাইন : এতে খাবার গরম করা বা রান্না না করাই ভাল৷ কারণ গলে না গেলেও এ থেকে সামান্য পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে খাবারে মিশতে পারে৷ মাইক্রোওয়েভ আভেন বা ডিশ ওয়াশারের তাপেও একই ব্যাপার ঘটতে পারে, যতই তা মাইক্রোওভেন-টেকসই  বলা হোক না কেন৷

সিরামিক : যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়৷ এতে গরম খাবার যেমন খাওয়া যায়, তেমনি রান্না করলেও ক্ষতি নেই৷ মাইক্রোওভেন, ডিশ ওয়াশার বা ব্রয়লারের তাপেও সে ঠিকঠাক থাকে৷ দেখতেও সুন্দর৷

মাটি বা পাথরের পাত্র : আগেকার দিনে মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না করার চল ছিল৷ পানি রাখা হতো মাটির কলসি বা কুঁজোতে৷ গরমকালে সেই পানি খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা৷  আজকাল অনেকে শখ করে পাথরের পাত্র ব্যবহার করেন৷ এতে ক্ষতির কিছু নেই৷

তবে মাটির পাত্র একদিকে যেমন ভঙ্গুর, উচ্চতাপও সে বিশেষ সহ্য করতে পারে না৷ পাথরের বাসন অত ভঙ্গুর না হলেও তাপমাত্রার অনেকটা পরিবর্তন সে মেনে নিতে পারে না৷

এএইচ/এসি