ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

ডিম থেকে একে একে বের হলো ২০টি ভয়ংকর অজগরের বাচ্চা

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:১৫ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১১:২৩ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

দেড়মাস চুপচাপ ছিল এই মাদি অজগরটি। আর পাশে কড়া পাহাড়ায় ছিল পুরুষ অজগর। বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেবের বুজতে বাকি রইল না যে তার সেবা ফাউন্ডেশনের অজগরটি ডিম পেড়েছে। সাপটি এ আচরণ করার দুই দিন পরই তার কুণ্ডলীর মধ্যে ডিমেরও দেখা পান সিতেশ রঞ্জন দেব এর ছেলে সজল দেব।

ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তাই অজগরের খাঁচাটাকে একটু আড়াল করে রাখেন তিনি। গত বুধবার বিকালে কুণ্ডলী থেকে সরে আসে মাদি সাপটি। আর কয়েকটি ডিম থেকে বের হয়ে আসে তার সন্তান।

বুধবার ভোর থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ২০টি ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে। ৪টি ডিম এখনো ফুটেনি। তবে এর ভিতরে নরাচড়া রয়েছে। যে কোনও সময় ওই চারটি থেকেও বাচ্চা বের হয়ে আসবে বলে জানান সিতেশ রঞ্জন দেব এর ছোট ছেলে সঞ্জিত দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, তার আশ্রিত অজগর তৃতীয়বারে মতো ডিম পাড়ে এবং সে ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটেছে।

বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজলদেব জানান, ১৯৯৯ সালে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সীমান্তের দিনারপুর পাহাড়ের একটি লেবুর বাগান থেকে ওই অজগরটি উদ্ধার করেন। অজগরটি উদ্ধারের পর বেশ অসুস্থ থাকায় এটিকে রেখেদেন তার মিনি চিড়িয়াখানায়। একই সঙ্গে অন্য একটি স্থান থেকে উদ্ধার করে একই খাঁচায় স্থান পায় আরো একটি পুরুষ অজগর।

দুই অজগর এক সঙ্গে ৫ বছর বসবাসের পর ২০০৪ সালের মে মাসে মাদি অজগরটি ৩২টি ডিম পেড়েছিল। ডিম পাড়ার দুইমাস পর ২৮টি বাচ্চা ফুটেছিল। পরে সে বাচ্চা লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করা হয়।

পরে ২০১১ সালের ১৩ মে ২য় বারের মতো ৩৮টি ডিম দেয়। সেবারও দুইমাস পর বাচ্চা ফুটেছিল ৩২টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ মে মাসে ৩২টি ডিম দেয় এর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০টি ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, অজগরের আকার ও বয়সের ওপর নির্ভর করে তার ডিমের সংখ্যা। তিনি জানান, এই সাপের ১০৭টি পর্যন্ত ডিম দেয়ার রেকর্ড রয়েছে। মার্চ থেকে জুন মাসে এরা ডিম দেয়। আমাদের দেশে এই প্রজাতির সাপ চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুন্দরবনে দেখা যায়। পাখি থেকে বড় হরিণ, ছাগল সবই তার খাদ্য তালিকায় আছে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী জানান, বনের ঝোপঝাড়ের সংখ্যা কমে এসেছে এরা বনেও ডিম পাড়ার সুযোগ পায় না। কারণ এদের আকার অনেক বড়। আর এখন মানুষের বিচরণ সর্বত্র। এদের নিরবিচ্ছিন্ন প্রসবের জায়গা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে তাই বন নির্ভর প্রাণীগুলো ক্রমশ আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, কাছাকাছি সময়ে সাপের বাচ্ছাগুলোকে লাউয়াছড়া অথবা সাতছড়িতে অবমুক্ত করা হবে।