ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে বন্যায় ৫৪ স্কুল প্লাবিত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:২১ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৯ রবিবার

যমুনার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা জুড়ে বেড়েছে বন্যা দুর্ভোগে আক্রান্ত মানুষের হতাশা। গত ২৪ ঘন্টায় নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার কমে তা বিপদ সীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যায় এ দুটি থানার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হাহাকার। সদিয়াচাঁদপুর, স্থল, ঘোরজান, উমরপুর, খাসপুকুরিয়া, খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এবং খুকনী, জালালপুর ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া নলকুপ তলিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই এনায়েতপুর-পাঁচিল ওয়াপদা বাঁধে পলিথিন টাঙিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তারা এ বন্যায় দুর্বিষহ জীবন কাটালেও যথাযথ সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

খোকশাবাড়িতে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আব্দুল আলীম ও শের আলী জানান, আমরা বন্যায় কাজ হারিয়েছি। বাঁধে আশ্রয় নিলেও এখানে খেয়ে না খেয়ে কাটছে আমাদের জীবন। এখন পর্যন্তও কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি।

এদিকে চলমান বন্যায় চৌহালী, এনায়েতপুরের ৫৪টি স্কুল তলিয়ে পাঠদানে নতুন দুর্ভোগ যোগ করেছে। এর মধ্যে ক্লাসরুমগুলোতে ১ থেকে ৩ ফুট পানি থাকায় সেখানে পাঠদান কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বাকি স্কুলগুলোতে ক্লাস চলমান থাকলেও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় উপস্থিতির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলে জানিয়েছে শিক্ষকরা।

রোববার সকালে সরেজমিনে শাহজাদপুর উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দুটি পাকা ভবনের মধ্যে উত্তর পাশের ভবনটি তলিয়ে যাওয়ায় ১ম ও ২য় শ্রেণির পাঠদান বন্ধ। ৩য় থেকে ৫শ শ্রেণির ক্লাস চললেও উপস্থিতি একেবারেই কম।

এরমধ্যেই গলাপানি ডিঙিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। কেউ বা নৌকা চড়ে, কেউ-কেউ বড় ভাই ও মায়ের উপর ভর করে। অনেকেই আবার বই মাথায় করে প্যান্ট ভিজিয়েই আসছে স্বপ্নের স্কুলে।

মূলত আশপাশের এলাকা, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এমন বিড়ম্বনায় ভুগতে হচ্ছে বলে জানালো স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাতুল, সিহাব ও ৫ম শ্রেণির প্রিয়া। তারা জানায়, এবার ভয়াবহ বন্যায় আমাদের সব তলিয়ে গেছে। স্কুলে না গেলে তো আর লেখা-পড়া শেখা যাবেনা। তাই কষ্ট করে হলেও পড়তে যাচ্ছি। সামনে পরীক্ষা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এই বন্যায় কিভাবে আমরা প্রস্তুতি নেব।

এদিকে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়া পুত্র সন্তানকে কোলে করে পৌঁছে দিতে আসা বাবু মিয়ার স্ত্রী আমিনা খাতুন জানান, গত ৬ দিন ধরে নিজে ভিজে ভিজে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছি। সমস্যা হলেও আমার ছেলেকে বড় হতে হবে। তিনি আরও জানান, এবারের বন্যায় তারা কোন ধরণের ত্রাণ সহায়তাও পায়নি।

 

গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরুল ইসলাম মন্ডল জানান, পহেলা আগষ্ট থেকে আমাদের স্কুলে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। এ অবস্থায় আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও শিক্ষার্থীরা কোন প্রস্তুতিই নিতে পারছেনা। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি থাকবে, বন্যা দুর্যোগের জন্য যেন পরীক্ষা পেছানো হয়।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোঃ ইউসুফ রেজা জানান, বন্যা আক্রান্ত ৫টি উপজেলার ৩৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে ২য় সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা সংসয় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের সাথে পুন:সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা আলাপ করবো।

এনএস/কেআই