ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চেয়ারম্যান পদ নিয়ে জাতীয় পার্টিতে উত্তেজনা

আজাদুল ইসলাম আদনান 

প্রকাশিত : ০১:১৬ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:০৭ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কার কাঁধে উঠছে তা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি দল ও দলের বাইরে। তবে সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে গেল ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এরশাদের ছোটভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। 

দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের পক্ষ থেকে কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন। যদিও সে অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতার অনেকেই থাকলেও, ছিলেন না দলের কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের উপনেতা রওশন এরশাদ।

ফলে দলের চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে নতুন করে নাটকীয়তার শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। এরশাদ না থাকায় তার পদ নিয়ে দেবর ও ভাবির মধ্যে চলছে উত্তেজনা। 

এরই মধ্যে গতকাল সোমবার দলের দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এক বিবৃতিতে জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান নয় বলে ঘোষণা দেন।

তার ভাষ্যমতে, দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হতে পারেন না। তিনি চেয়ারম্যান নন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছে বলে জানান তিনি। 

রওশন এরশাদ বলেন, হুট করে আলাপ-আলোচনা ছাড়া তাকে নতুন চেয়ারম্যান ঘোষণা হঠকারী সিদ্ধান্ত। কারণ তাকে জাপার চেয়ারম্যান করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিবৃতিতে তিনি ১০ জন জ্যেষ্ঠ নেতার নাম উল্লেখ করলেও, ফাঁকা ছিল স্বাক্ষরের ঘর। 

ফলে চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জটিলতা, সৃষ্টি হয়েছে নাটকীয়তার। 

দলটির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত এবং দলের কাঠামো অনুযায়ী জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হয়েছে। হঠাৎ করে রওশন এরশাদের এমন প্রশ্ন তোলায় দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে জানান তারা। দের দাবি, এরশাদ মারা যাওয়ার কাদেরকে দলের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, এ জন্য তিনি দলের চেয়ারম্যান হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আবদুর রাজ্জাক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিএম কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বলেন, রওশন এরশাদের বিরোধীতার ব্যাপারে কিছুই জানিনা। তিনি দীর্ঘদিন থেকে দলের কোনো মিটিংয়ে আসেন না। সবশেষ প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।  

রওশনের বিরোধীতায় দলে বিভেদ তৈরি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলে কোন গ্রুপিং নেই। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আগের মতই আছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। 
 
আর দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ০/১ ক ধারা অনুযায়ী এরশাদ মৃত্যুর আগে তার ছোটভাই জিএম কাদেরকে তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে যান। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তারপরও কেন রওশন এরশাদ বিরোধীতা করছেন আমার জানা নেই। 

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাদের চেয়ারম্যান হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতো আলোচনার কিছু নেই। দলের সিদ্ধান্ত  ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন। এর বেশিকিছু আমি বলতে পারব না। বাকিটা জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ বলতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

তবে রওশন পন্থী একাধিক নেতা জানান, দলের সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এতে করে দলে সংকট দেখা দিবে বলে মনে করেন তারা। 

গত ১৪ জুলাই  রাজধানীর সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর থেকে দলের চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে চলে নানা জটিলতা। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দলের চেয়ারম্যান  হন তার ছোটভাই জিএম কাদের।