ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্যার আবদুল করিম গজনভি’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০২ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:০২ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার

বাংলার মুসলিম রেনেসাঁর অন্যতম পথপ্রদর্শক স্যার আবদুল করিম গজনভি’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৩৯ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার বালিগঞ্জে নিজ বাসভবনে ব্রাঙ্কো-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

আবদুল করিম গজনভি ১৮৭২ সালের ২৫ আগস্ট বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল হাকিম খান গজনভি এবং মা করিমুন নেসা খানম চৌধুরানী। আবদুল হাকিম খান গজনভি ছিলেন দেলদুয়ারের জমিদার।

আবদুল করিম গজনভি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন রাজনীতিবিদ, পর্যটক, মন্ত্রী, বঙ্গীয় শাসন পরিষদ, বঙ্গীয় প্রাদেশিক ও ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য, মুসলিম শিক্ষার সংস্কারক। মুসলিমদের উপকারের জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন সব সময়। সৈয়দ আমির আলি প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। এর মাধ্যমে মুসলিমদের অভিযোগ ব্রিটিশ সরকারের কাছে তিনি তুলে ধরতেন।

আবদুল করিম গজনভি ইংল্যান্ডের ডেভনশায়ারের এক্সমাউথের সেন্ট পিটার্স স্কুল, লন্ডনের মেসার্স রেন এন্ড গার্নেজ ইনস্টিটিউশন ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এরপর জার্মানির জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল পড়াশোনা করেছেন। তিনি ইউরোপ সফর করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। ১৮৯০ সালে তিনি আইসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। লেখাপড়ায় তিনি তার বিদ্যানুরাগী মায়ের উৎসাহ পেয়েছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফেরার পর তিনি পৈতৃক জমিদারি পরিচালনায় নিয়োজিত হন। পূর্বপুরুষ ফতেহদাদ খান গজনভি লোহানির কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারি তাদের কাছে পৌছায়। তার পূর্বপুরুষরা আফগানিস্তানের গজনি থেকে বাংলায় এসেছিলেন বলে জানা যায়। এর ফলে তাদের পদবী গজনভি ব্যবহৃত হয়।

বঙ্গভঙ্গের সময় সময় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন দেন। কংগ্রেস নেতারা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে তিনি তার প্রতিবাদ করেন। এ কারণে বঙ্গভঙ্গ বিরোধীরা তাকে ভ্রান্ত গজনভি বলে অভিহিত করতেন। অন্যদিকে প্রদেশের গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার তাকে ন্যায়পন্থি বলে অভিহিত করেছিলেন। নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের মুসলিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি ১৯০৯ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯১৩ সাল থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুসলিম এলাকা থেকে ভাইসরয়ের কাউন্সিলে সরকার মনোনীত সদস্য ছিলেন। কাউন্সিলের সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি হাজিদের যাতায়াতের বিষয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। মক্কা ও মদিনায় হাজিদের যাতায়াত নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯১৩ সালে ভারত সরকার তাকে হেজাজের তৎকালীন শাসক হুসাইন বিন আলির নিকটে প্রেরণ করে। এসময় তিনি সিরিয়া ও ফিলিস্তিন ভ্রমণ করেছিলেন।

মুসলিমদের শিক্ষার উন্নতির উদ্দেশ্যে ১৯১৪ সালের ৩০ জুন গঠিত ডি পি আই ডব্লিউ ডব্লিউ হর্নেলের নেতৃত্বাধীন ১৪ সদস্যের কমিটিতে তিনি অন্যতম বেসামরিক সদস্য ছিলেন। এই কমিটির নাম ছিল মোহামেডান এডুকেশন এডভাইজারি কমিটি। মুসলিমদের জন্য কারিগরি ও বাণিজ্যিক শিক্ষার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করতেন এবং নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেন।

শাসনকাজে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য ১৯১৯ সালে ভারত সরকার আইন ১৯১৯ প্রণীত হয়। আইন অনুযায়ী ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার ১৯২৪-১৯২৬ মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহের দক্ষিণ-পশ্চিমের মুসলিম নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিনিধি হিসেবে সভার সদস্য হন এবং ১৯২৪ সালে দুই মাস মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৯২৭ সালে ১৯২৭-১৯২৯ মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠিত তৃতীয় নির্বাচনেও তিনি এই এলাকা থেকে জয়ী হন এবং সেই বছর সাত মাস মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯২৮ সালে নাইট খেতাব দেয়। ১৯৩৩ সালে তিনি নবাব বাহাদুর খেতাব পান।

আবদুল করিম গজনভি তিনটি বই লিখেছেন। এগুলি হল পিলগ্রিম ট্রাফিক টু হেজাজ এন্ড প্যালেস্টাইন, মুসলিম এডুকেশন ইন বেঙ্গল ও দ্য ডাইয়ারকিয়াল সিস্টেম ইন বেঙ্গল।

স্যার আবদুল হালিম গজনভি ছিলেন তার ছোট ভাই। নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তার খালা ছিলেন। আবুল আসাদ মুহম্মদ ইবরাহিম সাবের ও আবু জায়গাম মুহম্মদ খলিল সাবের ভ্রাতৃদ্বয় তার মামা ছিলেন।

এসএ/