ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বিদায়ী মালিঙ্গাকে লঙ্কানদের সেরা উপহার 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৬ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১১:২৭ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

লঙ্কান বোলারদের ক্ষুরধার বোলিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে মাত্র ৩৯ রানেই চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাব্বির-মুশফিক মিলে মূল্যবান শতাধিক রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ট্রাকে ফিরিয়ে আনলেও তাতে জয়ের নাগাল পায়নি বাংলাদেশ। ফলে মালিঙ্গার বিদায়ী এ ম্যাচে ৯১ রানের বড় ব্যবধানের জয় নিয়ে উল্লাসে মাতে শ্রীলঙ্কা। এ জয় যেন বিদায়ী মালিঙ্গাকে লঙ্কানদের সেরা উপহার।

ম্যাচটি ছিলো, তামিমের অভিষেক আর মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচ। এ যেন তামিমের বিপক্ষে মালিঙ্গার লড়াই। সেই লড়াইয়ে মালিঙ্গার ইয়র্কার অস্ত্র মোকাবেলা করতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েন টাইগারদের নয়া ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। আর জয়ী হলেন জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা লাসিথ মালিঙ্গা। ফলে শ্রীলঙ্কার দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট খোয়ালো বাংলাদেশ।
 
প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই মালিঙ্গার ইয়র্কার সামলাতে না পেরে লেগ স্ট্যাম্পে বোল্ড হন তামিম। পাঁচ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন টাইগার কাণ্ডারি। এমনিতেই ব্যাটে রান নেই তাঁর, তার ওপর ৩১৫ রানের বিশাল টার্গেট আর ক্যাপ্টেন্সির চাপ। এতগুলো চাপেই কিনা পিষ্ট হলেন ড্যাশিং ওপেনার। তামিম যখন আউট হলেন দলের রান তখন মাত্র ১। যার ফলে আরও চাপে পড়ে দল।  

শ্রীলঙ্কার দেয়া ৩১৫ রানের বিশাল লক্ষ্যকে আরও বিশাল বানিয়ে দলীয় মাত্র এক রানেই ফেরেন তামিম। তামিমকে হারিয়ে দল যখন চাপে, তখনই ব্যাট হাতে দলকে চাপমুক্ত করতে ক্রিজে আসেন সাকিবের বিকল্প ভাবা মিঠুন। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। অষ্টম ওভারে প্রদীপের শিকার হয়ে মিঠুন ক্রিজ ছাড়লে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ফেরার আগে ১০ রান করেন প্রস্তুতি ম্যাচের জয়ের নায়ক।

পরে মালিঙ্গার দ্বিতীয় আঘাতে সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সৌম্য সরকার। তামিমের মত একই ধরনের আঘাত ছিল এটাও। যা এবারও সামলাতে পারেননি সৌম্য। ২২ বলে ১৫ করে মাঠ ছাড়েন তিনি। কিছুক্ষণ বাদে মাহমুদউল্লাহও মাত্র তিন রান করে পূর্বসূরিদের পথে হাঁটলে, ৩৯ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

এর পর সেখান থেকে সাব্বির-মুশফিক মিলে মূল্যবান শতাধিক রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ট্রাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। বিপর্যয় মুহূর্তে কিছুটা ঝোড়ো গতিতে ফিফটিও হাঁকান সাব্বির রহমান। তবে তার আউটের মধ্যে দিয়েই যেন শেষ হয়ে যায় জয়ের আশা। 

আউট হওয়ার আগে সাব্বির খেলেন ৬০ রানের দর্শনীয় এক ইনিংস। ৫৬ বল খেলে সাতটি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। সেইসঙ্গে মুশফিকের সঙ্গে ১১১ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয়মুক্ত করেন তিনি।

পরে ৩৪তম ওভারে একটি ওয়াইড বলে রান নিতে গিয়ে দায়িত্বহীনভাবে হেলাফেলায় উইকেট বিলিয়ে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। 

এরপর ফিফটি হাঁকিয়ে লড়াই চালানো ৬৭ রানে আউট হন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। ৩৯তম ওভারের প্রথম ওই বলটি লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকলেও সেটাকে তাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। 

আর এতেই শেষ হয়ে যায় টাইগার ভক্তদের সব স্বপ্ন। কেননা, কিছুক্ষণ পরেই যে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ৯১ রানের বড় জয় নিয়ে মালিঙ্গার বিদায়কে আবিরের রঙে রাঙিয়ে তোলে করুনারত্নের দল।

দলের হয়ে এ ম্যাচে নুয়ান প্রদীপ ও লাসিথ মালিঙ্গা তুলে নেন তিনটি করে উইকেট এবং ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দুটি উইকেট লাভ করেন। তবে ৯৯ বলে ১১১ রান করে ম্যাচ সেরা হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কুশল জেনিথ পেরেরা।

শুক্রবার মালিঙ্গার বিদায়ী এ ম্যাচে কুশল পেরেরার ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে চড়ে বাংলাদেশকে ৩১৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। কলম্বোর রনসিংহ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া এ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় স্বাগতিকরা। 

ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১০ রানে প্রথম উইকেট হারালেও একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমত ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে থাকে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে টাইগার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। 
 যা ছিল পেরেরার ৯৬ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরি। তাঁর ৮২ বলের এই মারকুটে ইনিংসে ছিল ১৭টি চার আর একটি ছক্কার মার। এর আগে মাত্র ৩৮ বলে দশ চারে এসেছে পেরেরার হাফ সেঞ্চুরি। 

তামিমের অভিষেকের এ ম্যাচে টস হেরে বোলিং করতে নেমে শুরু থেকেই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবের মুখে বেশ খরুচে বোলিং করেন সবাইই। এর মধ্যেও সবচেয়ে সফল ছিলেন দীর্ঘ ৩২ মাস পর দলে ফেরা শফিউল ইসলাম। ৬২ রান দিলেও তিনটি উইকেট তুলে নেন শফিউল। 

অন্যদিকে ভরসার প্রতীক কাটার মাস্টার ছিলেন যেন একটু বেশিই খরুচে। ৭৫ রান দিয়েছেন তিনি। যদিও ২টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন বাঁহাতি এই পেসার। এছাড়া মিরাজ, রুবেল ও সৌম্য পান একটি করে উইকেট।

এনএস/আরকে