ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ডেঙ্গুজ্বরের পরীক্ষা কী কী? কখন করাবেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৯ শনিবার

প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জ্বর দেখা দেলেই রোগী নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন অভিভাবকরা। আবার জ্বর দেখা দিলেই ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা যাছাইয়ের জন্য ব্যস্ত থাকেন অনেক অভিভাবকই। এ নিয়ে ছুটাছুটিও কম করছেন না। এর সঙ্গে সঙ্গে যত্রতত্র টাকা-পয়সাও খরচ করছেন। 

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদের ডা. এবিএম আবদুল্লাহ কি বলছেন তা জেনে নিন: 

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনও কখনও ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও মনে করেন, রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে ডেঙ্গুজ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। 

এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিকাল পিরিয়ড’। এ সময়টাতেই সবারই সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্তত রক্তের সি.বি.সি. এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা উচিত, কারণ এখন ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি।

ডেঙ্গুজ্বরের কোন সময়ে পরীক্ষা করবেন 

জ্বরের শুরুতে বা দুই-একদিনের জ্বরে রক্ত পরীক্ষায় কোনো কিছু শনাক্ত নাও হতে পারে এবং তা রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। রোগী এমনকি ডাক্তারও মনে করতে পারেন যে রিপোর্ট ভালো আছে, তাই আর কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

মনে রাখতে হবে, প্লাটিলেট কাউন্ট ৪ বা ৫ দিন পর থেকে কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর ৫ বা ৬ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এর আগে পরীক্ষা করলে তা স্বাভাবিক থাকে বিধায় রোগ নির্ণয়ে যেমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তেমনি অপ্রয়োজনে পয়সাও নষ্ট হয়।

অনেকেই দিনে দুই-তিনবার করে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন। আসলে প্লাটিলেট কাউন্ট ঘন ঘন করার প্রয়োজন নেই, দিনে একবার করাই যথেষ্ট, এমনকি মারাত্মক ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারেও। তাছাড়া একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট না করানোই ভালো, এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
দেখা যায়, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন রকমের রিপোর্ট আসছে, এতে কোন রিপোর্ট সঠিক তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার বা রোগী বিভ্রান্তিতে পড়েন। তাছাড়া এতে অযথা রোগীর অর্থের অপচয় ঘটে। আরও একটি পরীক্ষা অনেকেই করে থাকেন যেমন ডেঙ্গু এন্টিবডি।

এই এন্টিবডি সাধারণত ৪ থেকে ৬ দিন পর তৈরি হয়। তাই এই সময়ের আগে এই পরীক্ষা করলে রক্তে এন্টিবডি পাওয়া যায় না, যা রোগ নির্ণয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু এন্টিবডির পরীক্ষা ৫ বা ৬ দিনের আগে করা উচিত নয়। মনে রাখা দরকার, এই পরীক্ষা রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও রোগের চিকিৎসায় এর কোনো ভূমিকা নেই।

এই পরীক্ষা না করলেও কোনো সমস্যা নেই, এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়। তবে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন জ্বরের ২-৩ দিনের মধ্যেই করা যেতে পারে, যা স্বল্পসময়ে রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করে।

ডেঙ্গুজ্বরে কী কী পরীক্ষা করবেন

সব রোগীর ক্ষেত্রেই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত, ডেঙ্গুতে সাময়িকভাবে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গুতে কিছু রুটিন পরীক্ষা করা হয় যা অপরিহার্য নয় এবং সব ক্ষেত্রে করা হয় না, কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই করা উচিত।

ডেঙ্গুতে সাধারণত লিভারের প্রদাহ (হেপাটাইটিস) হয়ে থাকে, যার কারণে রক্তে লিভারের পরীক্ষাগুলো স্বাভাবিক নাও হতে পারে। যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি বাড়তে পারে।

তাই ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত হয়ে গেলে লিভারের জন্য এই পরীক্ষাগুলো বার বার করার কোনো দরকার নেই, রোগের চিকিৎসায়ও কোনো লাভ হয় না। এতেও অযথা অর্থের অপচয় ঘটে।

পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পেটে পানি (এসাইটিস) পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও রোগীর চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন হবে না বা অতিরিক্ত কোনো ওষুধ দেয়া লাগে না। তাই রুটিন হিসেবে পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করার কোনো দরকার নেই।

বুকের এক্স-রে করলে দেখা যায়, প্রায়ই বুকের ডান দিকে পানি পাওয়া যেতে পারে। যদি রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকে তবে এক্স-রে করা যেতে পারে। তবে বুকে পানি জমলেও তা বের করার প্রয়োজন সাধারণত হয় না। ডেঙ্গুর চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

রক্তের বিটি ও সিটি করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে চিকিৎসক যদি মনে করেন যে রোগী ডিআইসি জাতীয় কমপ্লিকেশনে আক্রান্ত তবে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এ.পি.টি.টি., ডি. ডাইমার. এফ.ডি.পি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন।

যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত কারণে হয়, তাই রক্ত ও প্রস্রাবের কালচার রুটিন হিসেবে করার প্রয়োজন নেই। তবে যদি ক্লিনিক্যালি অন্য কোনো সংক্রামক রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে, তবেই এই পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে। মাথার সিটিস্ক্যান সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়, এমনকি প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকলেও।

ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত কারণে হয়, তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। যেমন- জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও এর সঙ্গে প্রচুর পানি এবং শরবত জাতীয় তরল খাবার খাওয়ানোই যথেষ্ট। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।

এএইচ/