ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কবি বেলাল মোহাম্মদ এর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩০ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৩৩ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও শব্দ সৈনিক কবি বেলাল মোহাম্মদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য মৃত্যুর আগেই নিজ দেহ দান করে যান।

বেলাল মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাম মোহাম্মদ ইয়াকুব এবং মাতা মাহমুদা খানম। তিনি ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে ছিলেন পঞ্চম।

১৯৬৪ সালে বেলাল মোহাম্মদ কর্মজীবন শুরু করেন রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামে। বেতারে চাকরির আগে তিনি চট্টগ্রামের ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকায় উপ-সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। মার্চ ১৯৭১-এর শেষ সপ্তাহে বাঙালি জাতি যখন চরম বিভীষিকার মুখোমুখি তখন চট্টগ্রাম বেতারের কালুরঘাট বেতার যন্ত্র থেকে মানুষ শুনতে পায় আশার বাণী। এর আগে শব্দসৈনিক আবুল কাসেম সন্দ্বীপিসহ কয়েকজন বেতার কর্মী নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ কেন্দ্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করে পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তথ্য জাতিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই সময় বাঙ্গালির একমাত্র আশা ভরসার জায়গা ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আর এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপের মূলে ছিলেন বেলাল মোহাম্মদ।

লেখক, সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেরকর্মী কামাল লোহানী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। তার হাতে গড়া এই বেতার কেন্দ্র সে সময় যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষ তাকে আজীবন মনে রাখবে। কবি, পুঁথিপাঠক সুসাহিত্যিকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৬টি।

বিশিষ্ট অভিনেতা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা পাল্টে দেওয়ার জন্য তাকে যেমন প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল, তেমনি চাপও প্রয়োগ করা হয়েছিল তার উপর। তিনি এতটাই দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন যে, কোন প্রলোভন বা চাপ তাকে দমাতে পারেনি। অবশ্য এ জন্য তাকে বহু বছর বিদেশে থাকতে হয়েছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের এই শব্দসৈনিক সম্পর্কে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁরা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তিকে এ দেশে কোনোদিন মাথাচারা দিয়ে উঠতে না দিলেই তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য নিজ দেহ দান করা ছাড়াও ২০১০ সালে অর্জিত স্বাধীনতা পদকটি তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ বেতারকে। পাওয়া নগদ অর্থ দিয়ে তার জন্মস্থান সন্দ্বীপে গণশিক্ষা এবং বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য গঠন করেছিলেন লালমোহন-মোজাফফর কল্যাণ ট্রাস্ট। ভিক্ষুকের হাত কিভাবে কর্মজীবীর হাতে পরিণত করা যায় তার পথ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

বাঙালির ক্রান্তিকালে,ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে জনযুদ্ব হয়েছিলো, ঠিক সময়ে তিনি প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে তিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্বের সঠিক তথ্য দিতে, মুক্তিকামী জনতাকে প্রেরণা দেয়ার লক্ষে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি নিজেই একটি ইতিহাস ও ইতিহাসের উপাদান কবি বেলাল মোহাম্মদ ।

যুদ্বকালীন সময়ে এই বেতার কেন্দ্র ছিলো বাঙালির একমাএ আশ্রয় স্থল। জীবনবাজি রেখে তিনি বাঙালির অমূল্য ইতিহাসের ধারক বাহকের ভূমিকা পালন কররে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পরে তাকে দিয়ে বহুবার মিথ্যা ইতিহাস লেখাতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে গেছেন। তাই সত্যে অবিচল থেকে জাতিকে ঘোষণা বিতর্কের কলংক থেকে বাঁচিয়েছেন।

কেআই/