ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কমিউনিস্ট নেতা রতন সেনের হত্যাবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৬ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার

আজ ৩১ জুলাই, বুধবার কমরেড রতন সেনের ২৭তম হত্যাবার্ষিকী। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা, মাকর্সবাদী তাত্ত্বিক, আজীবন বিপ্লবী, ত্যাগী কমিউনিস্ট নেতা সিপিবি খুলনা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি, সাবেক কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৯২ সালের ৩১ জুলাই খুলনা ডিসি অফিসের সামনে ঘাতকরা নির্মমভাবে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

কমরেড রতন সেনের জন্ম ১৯২৩ সালের ৩ এপ্রিল বৃহত্তর বরিশালের উজিরপুরে। পিতা নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন দৌলতপুর বি এল কলেজের প্রধান অফিস সহকারী। তিনি সপরিবারে কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন। সে সুবাদে রতন সেনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে দৌলতপুরে। তিনি দৌলতপুর মহসীন স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে দৌলতপুর একাডেমিতে (বি এল কলেজ) ভর্তি হন। বি এল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বিএ অনার্স (ইংরেজি)-তে ভর্তি হন। ছাত্র আন্দোলনের কারণে গ্রেফতার হওয়ায় তিনি জেলে বসে ১৯৪২ সালে ডিস্টিংশনসহ বি এ পাস করেন।

রতন সেন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বড়ভাই বিপ্লবী মোহিত লাল সেনগুপ্তের হাত ধরে। তিনি ছিলেন যশোর-খুলনা যুব সংঘের নেতৃস্থানীয় কর্মী।

রতন সেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চের দিনগুলো তিনি খুলনা অঞ্চলের পার্টি কমরেডদের সংগঠিত করে ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতে পাঠাতে থাকেন। ১১ এপ্রিল সহযোদ্ধা অমর কৃষকনেতা বিষ্ণু চ্যাটার্জী ঘাতক-দালালদের হাতে নিহত হওয়ার পর তিনি ভারতে চলে যান। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটে পানতোড়, পরে টাকী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অবস্থান করেন। আশেপাশের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ছাত্র, যুবকদের সংগঠিত করে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দিতেন। তাছাড়া ১৮৪৭ সালে দেশত্যাগ করা সহযোদ্ধা স্বদেশ বসু, কুমার মিত্র, কৃষ্ণ বিনোদ রায়, ধনঞ্জয় দাস প্রমুখের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ গেরিলাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন খুলনা জেলা কমিটির সম্পাদক। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৮৯ সালে সভাপতির পদ সৃষ্টি হলে তিনি খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য থাকাকালে তিনি বেশকিছু দিন ঢাকায় অবস্থান করেন। সে সময় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ, দলিল, ইস্তেহার রচনা করেন।

হত্যাদিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় খুলনা ডিসি অফিসের সামনে প্রয়াত নেতার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, টিইউসি, উদীচী, খেলাঘর আসর, কৃষক সমিতি, ক্ষেতমজুর সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন।

এ উপলক্ষে বিকেল ৪টায় খুলনা নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে পার্টির পক্ষ থেকে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় সভাপতি, ডাকসু’র সাবেক ভিপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ডাঃ মনোজ দাশ। জনসভায় পার্টির জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।

জনসভা শেষে নগরীতে লাল পতাকার বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, আজ ৩১ জুলাই বুধবার সকাল ৯টায় ডিসি অফিসের সামনে প্রয়াত এ বিপ্লবী নেতার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ওয়ার্কার্স পার্টি খুলনা জেলা কমিটি’র পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। এ কর্মসূচিতে পার্টির সকল নেতাকর্মীকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এসএ/