সামাজিক মাধ্যম প্রতিবাদের জনপ্রিয় এক নাম
নিলয় মামুন
প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:০২ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার

বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি মানুষকে সংযুক্ত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সর্বস্তরের মানুষ এখন তাদের জীবনের বড় একটি অংশ অতিবাহিত করে এই জায়গায়। তাদের আবেগ-অনুভূতি, মতামত সবকিছু এই মাধ্যমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। পুরো পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের মানুষও এই মাধ্যমে বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।
এমনকি এই মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশের বড় মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করছে তারা। আর এর মাধ্যমে সামাজিকভাবে মতামত প্রকাশ করে বহু ঘটনার ভালো ফলাফল পেতেও দেখা গেছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যা, আড়ংয়ের ঘটনায় মুনজুর মোর্শেদ শাহরিয়ারের বদলিসহ বিভিন্ন ঘটনায় বড় পরিবর্তন দেখেছে মানুষ।
এই মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার কারণে দেখা গিয়েছে মূল ঘটনা সামনে এসেছে সবার। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা এই মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। আর আন্দোলনের পর কোটা সংস্কার করে সরকার। অন্যদিকে এক শিক্ষার্থী দূর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহতের ঘটনায় পুরো দেশের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আর এর মাধ্যমে তাদের আন্দোলনও সফল হয়। আর এই আন্দোলনেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা ছিল অনেক।
এরপর ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলে ওসি মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে আলোড়ন সৃষ্টি হয় পুরো দেশে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোয়াজ্জেম বেআইনিভাবে মোবাইল ফোনে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করেছেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় ওসি গ্রেপ্তারও হয়।
অন্যদিকে গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রীর সামনেই প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বেলা তিনটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। তখন হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর এরপর আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে আড়ংকে জরিমানা করার কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলি করা হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি জারি করার পরই মূহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
এ সময় অনেকেই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। যার ফলে শাহরিয়ারের বদলি স্থগিত করে মন্ত্রনালয়। এমন সব ঘটনায় প্রমাণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের মতামত প্রকাশের কারণে আসামি বা মূল ঘটনা সামনে এসে ন্যায় বিচার পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। আর এর কারণে মানুষের এসব মাধ্যমে মতামত প্রকাশের প্রবণতাও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । অনেকে আবার এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে ইভেন্ট খুলে দাবি আদায়েও রাস্তায় নামছেন। এই মাধ্যম এমনি যেমন কিছু ভালো ফলাফল বয়ে এনেছে। তেমনি এই মাধ্যমেই একটি চক্র গুজব রটিয়ে বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করতেও ব্যাস্ত রয়েছেন।
সর্বশেষ, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে ছেলে ধরা গুজব ছড়ায় চক্রটি। তবে এই বিষয়ে সরকার কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেওয়ায় সফল হয়ে উঠতে পারেনি চক্রান্তকারীরা। এছাড়াও এই গুজব ছাড়া এই মাধ্যমে নতুন নতুন গুজব নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সচেতনতায় পারে এসব থেকে সবাইকে দূর রাখতে।
এনএম