ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

তিনবছর লোকসানে থাকলে বেসিক ব্যাংকের শাখা বন্ধ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

চলতি অর্থবছরসহ পরপর তিন বছর বেসিক ব্যাংকের যে সব শাখা লোকসানে থাকবে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সেখানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বেসিক ব্যাংকে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপ আছে। গ্রাহকরা যদি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকি টাকা ৯ শতাংশ হারে সুদের মাধ্যমে পরিশোধ করে তাহলে তা পরিশোধ হতে ১১ বছর লাগবে। যারা এই সুযোগ নেবে না তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বেসিক ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা চলছে। ঋণ বিতরণ অনিয়মে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার যোগসূত্র থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেশি বেতন নেওয়া, কাজ না করা ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকটির কাছে সব ঋণ খেলাপির ঠিকানা চেয়েছেন। 

এসময় তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। এ ব্যাংক টিকে থাকবে না বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে, আমরা সবসময় এটাকে সরকারি বা জনগণের ব্যাংক হিসেবে নার্সিং করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।

মন্ত্রী বলেন, বেসিক ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমার সে বিশ্বাস আছে। এজন্য ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হয়ে কাজ করে যেতে হবে। ২১০০ কর্মকর্তার কী কাজ, আমি জানি না। অনেকেই বেশি বেতন নিচ্ছেন। বেতন কার কত হবে, এটা নিজেরা বসে নতুনভাবে ঠিক করে নিলে লোকসান অনেকটা কমে যাবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, গত দুই বছর যেসব শাখা লোকসান করবে, সেগুলো বন্ধ করে দেবো। আপনাদের নিজেদের বেতন নিজেদের আয় করে নিতে হবে। এবছর লোকসানি শাখাগুলো লাভে আনার চেষ্টা করবেন। ব্যাংকের মোট লোকসান ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা।  আমরা ঋণ পুনঃতফসিলের যে নীতিমালা করেছি, তাতে অনেক টাকা আদায় হবে। তাদের পরিশোধের জন্য অনেক সময় দেওয়া হবে। আমি কারো ঋণ মওকুফ করতে পারবো না। লজিস্টিক সার্পোট দেবো। অর্থের অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় না। বন্ধ হয় ম্যানেজমেন্টের কারণে। 

তিনি বলেন, চিন্তা করতে হবে, মাসে এক কোটি টাকা বাঁচাতে পারলে অনেক সাশ্রয় হবে। পুরনো ঋণ গ্রহীতাদের আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমাদের সফল হতে হবে। তবে, এজন্য আপনাদের কাজ আপনাদেরই করতে হবে, আর আমার কাজ আমি করবো। 

‘বেসিক ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কী পরিকল্পনা করবে, সেটা জানতে চাই। আপনাদের পরিকল্পনার পরে আমরা আমাদের কাজ করবো।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসিক ব্যাংকে স্পেশাল অডিট করানো হবে। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকলে শাস্তি পেতে হবে। ঋণ বিতরণে কোনো কর্মকর্তার অবহেলা আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। 

তিনি বলেন, যেসব খেলাপি ভুল স্বীকার করে আবার ব্যবসা করতে চায়, আমরা তাদের ক্ষমা করবো। যেসব কর্মকর্তা কাজ করতে চান না, তাদের বিরুদ্ধে একবারেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি বদদোয়া দিলে পেটব্যথা হবে। বদদোয়া দিতে চাই না। এসময় কর্মকর্তাদের কাছে সব ঋণ খেলাপির ঠিকানা চান অর্থমন্ত্রী। 

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, এমডিকে ব্যাংক পরিচালনার জন্য পুরোপুরি ক্ষমতা দেওয়া হোক। যাতে, সব কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে চালাতে পারেন। বেসিক ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে। বিশ্বাসযোগ্যদের ঋণ দেবেন, যাতে টাকা আদায় হয়। দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যেসব খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে আসবে না, তাদের শক্ত ভাবে ধরতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, ২০০৯ সালে ৭শ’ জনবল দিয়ে ৭২টি শাখার কার্যক্রম চললেও এখন দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা। তাদের অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতো দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে প্রচুর সম্পদ চলে গেছে। এটা জনগণের সম্পদ। আমরা এটা বরদাশত করবো না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ। এসময় ব্যাংকের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন রফিকুল আলম। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব আছাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরকে/