ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মেকআপ কি ত্বকের ক্ষতি করে? জেনে নিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩২ এএম, ৩ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

মেয়েরা সাধারণত সাজতে খুব ভালবাসে। বিশেষ করে যারা অফিস করেন, তারা কম-বেশি কিছু না কিছু মেকআপ নিয়ে থাকেন। রোজ রোজ ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, লাইনার, আইশ্যাডো দিয়ে সাজছেন ঠিকই। কিন্তু এর বিনিময়ে কি আস্তে আস্তে প্রাকৃতিক জেল্লা কেড়ে নিচ্ছে না তো এসব কৃত্রিম প্রসাধনী? এই প্রশ্ন ইদানিং কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে অনেককেই। 

কিন্তু রূপবিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করছেন, প্রায়শই প্রসাধন ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই মেকআপের কুপ্রভাব দেখা যায়। তার মূল কারণ দুটি। প্রথমত ত্বকের ধরন বুঝে প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করেন না। দ্বিতীয়ত দিনের শেষে মেকআপ ঠিক মতো তোলাও হয় না।

মেকআপ কেনা, তার ব্যবহার ও প্রসাধনের পরে পরিচর্যার কিছু কায়দা মনে রাখলে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

কীভাবে ক্ষতি, কোথায় ক্ষতি

মেকআপে যদি রাসায়নিক রঞ্জক বেশি মাত্রায় থাকে, তবে তাতে জীবাণু মিশতে পারে। এই ধরনের মেকআপ ত্বকে বেশিক্ষণ থাকলে র‌্যাশ, ব্রণ বার হয়। ত্বকের নতুন কোষ তৈরি হতেও বাধা পায়। তখনই চামড়া স্থিতিস্থাপকতা হারায়, তাতে বলিরেখা পড়ে। সবচেয়ে আগে ভাঁজ পড়ে চোখের চার পাশে। চেহারায় বয়সের ছাপ আসে।

আর কোন ভাবে যদি মেকআপের অবশিষ্ট ত্বকে থেকে যায়, তবে তা লোমকূপের মুখ আটকে দেয়। ওই ছিদ্রে ব্যাকটিরিয়া জন্মায়। ফলে ছিদ্র বড় হতে থাকে। তখনই ত্বকে গর্ত দেখা দেয়। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাও নষ্ট হয়। ত্বক নিষ্প্রাণ, বয়স্ক দেখায়।

নিম্ন মানের কাজল, আইলাইনার ভুল ভাবে ব্যবহার করলে চোখে সংক্রমণও হতে পারে। চোখ চুলকায়, জ্বালা করে, লাল হয়। দৃষ্টিশক্তিও দুর্বল হতে শুরু করে। তাই চোখের মেকআপ নির্বাচনের সময়ে সাবধানতা বিশেষ জরুরি।

সারাদিন ঠোটে লিপস্টিক লাগিয়ে রাখেন? লিপকালার ত্রুটিপূর্ণ হলে ঠোটের স্বাভাবিক রং চলে যেতে পারে। তখন ঠোট শুকিয়ে ছাল ওঠে, কালচে ছোপও দেখা দেয়।

প্রসাধন কীভাবে নির্বাচন করবেন?

ভাল গুণমানের প্রডাক্টে এমন উপাদান থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষা করে, সজীব রাখে, দ্যুতি বাড়ায়। তাই খুব উন্নত মানের প্রডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বক ভাল থাকবে। তবে পেশার প্রয়োজনে রোজ মেকআপ করতে হলে, ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। 

তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের প্রসাধন সামগ্রী কোন সময় এক হবে না। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলেও সংবেদনশীল ত্বকের উপযুক্ত সামগ্রী কিনতে হবে। কোন প্রডাক্টে কৃত্রিম রঞ্জক, ল্যানোলিন বা মিনারেল অয়েল থাকলে, তা এড়িয়ে চলুন।  

অন্যদিকে মিনারেলসমৃদ্ধ মেকআপ বেছে নেওয়া ভাল। কারণ এই ধরনের প্রসাধনী ত্বকে আটকে না থেকে তা উপরের পরতে আলগা লেগে থাকে। ফলে লোমকূপ বন্ধ হয় না। আবার পরিবেশের ক্ষতিকর পদার্থগুলো ত্বকে ঢুকতে বা মেকআপে মিশতেও দেয় না।

সঠিক নিয়মে মেকআপের অভ্যেস

স্ক্রাব করে, দু’বার মুখ ধুয়ে তবে মেকআপ শুরু করুন। এতে কোন ময়লা মেকআপে মিশে বিক্রিয়া হওয়ার সুযোগ থাকবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মেকআপ তোলার বিষয়টি। ঘরে ফিরে যতই ক্লান্ত লাগুক, মেকআপ  ভাল ভাবে ধুয়ে তুলে ফেলুন। প্রথমে মেকআপ রিমুভার দিয়ে সমস্ত প্রসাধনী পরিষ্কার করে নিন। চোখের অংশ সুইট আমন্ড অয়েল দিয়ে মুছে নিন।

তারপরে ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে হালকা ময়শ্চারাইজার লাগান। মেকআপ ঠিক করে না তোলার জন্যই ত্বকে বেশির ভাগ সমস্যা হয়। মেকআপ না তুলে ভুলেও ঘুমোতে যাবেন না। এতে লোমকূপের মুখ বুজে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে। বালিশের ময়লার সঙ্গে মেকআপ ও ত্বকের মৃত কোষ মিশে হারিয়ে যেতে পারে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা।

মেকআপ ব্রাশগুলো পরিষ্কার রাখুন। এগুলোতে আগের দিনের ব্লাশ, গ্লিটার বা পাউডার লেগে থাকলে পরের দিন তা ব্যবহার করবেন না।  প্রত্যেক বার মেকআপের পরে পরিষ্কার তুলো দিয়ে আলতো করে ব্রাশ-তুলি ঝেড়ে নিন। সপ্তাহে একবার স্প্রে-ক্লেনজার এবং মাসে একবার করে শ্যাম্পু দিয়ে মেকআপ কিটের যত্ন নিন। 

যতই ভাল প্রডাক্ট হোক, সব প্রসাধনীর এক্সপায়ারি ডেট থাকে। কোন কসমেটিকস অনেক মাস বা বছর ধরে ব্যবহার করবেন না। কোন পছন্দের লিপস্টিক একটু একটু করে কয়েক মাস ধরে লাগালেই তফাৎটা টের পাবেন। প্রথম দিকে তা যতটা ভালভাবে ঠোটে বসত, পরের দিকে তা হবে না। ভেঙে ভেঙে যাবে।  

অল্প-বিস্তর হলেও মেকআপে ত্বক শুষ্ক হয়। তাই ময়শ্চারাইজার আগে লাগিয়ে তারপর মেকআপ  শুরু করুন। এতে মূল মেকআপ ও ত্বকের মধ্যে একটি দেওয়াল থাকবে। ত্বক সরাসরি প্রভাবিত হবে না। সকালে মেকআপ লাগিয়ে বেরোতে হলে সানস্ক্রিন-বেসড ময়শ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। সানস্ক্রিনে অ্যান্টি-এজিং উপাদান থাকে। মেকআপের জন্য ত্বক কুঁচকে গেলে সানস্ক্রিন সামাল দিয়ে দেবে। 

ত্বকের জন্য রাখুন ১৫মিনিট

মেকআপ করলে ত্বকের বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন। দেড় মাস অন্তর ডিপ ক্লিন ফেশিয়াল করান। এক দিন অন্তর পিল অফ মাস্ক ব্যবহার করুন। মুলতানি মাটি, গোলাপ জলে মিশিয়ে পনেরো মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। 

শসা, লেবুর রস ও অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণও লাগাতে পারেন। ঠিক পনেরো মিনিট পরে মাস্কটা তুলে নিন। এমন মাস্কে ত্বকের সাতটি স্তর পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস, জীর্ণ কোষ, ত্বকের গভীরে ঘাপটি মেরে থাকা ময়লা ও মেকআপের অবশিষ্টও উঠে আসে। 

এই কয়েকটি উপায়ে মেকআপ নিয়ে চিন্তার অবসান ঘটাতে পারেন। আবার চিন্তামুক্ত হয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই চালিয়ে যেতে পারেন আপনার শখের মেকআপ। 

এএইচ/