ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ঢাকার রিকশা এখন নিউইয়র্কের রাস্তায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৯ রবিবার

রিকশা। দেশের ঐতিহ্যবাহী বাহন। ঢাকার রাস্তায় অতিপরিচিত এই যানটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুদিন থেকে। এ কারণেই ঢাকাকে বলা হয় রিকশার রাজধানী। এই রিক্সা যেখানে আমাদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে, সেখানে ভিনদেশিদের চোখে এ এক ভিন্নধর্মী নান্দনিক শিল্পে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ সাংবাদিক ও ভ্রমণবিদ অ্যান্ডি ইসাকসন। রিকশাচিত্রের সৌন্দর্য আর রসবোধ তাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। আর এই আকর্ষণ থেকেই তিনি রিকশা নিয়ে ভিন্ন এক উদ্যোগ নেন। ঢাকার রিকশাকে তিনি নিয়ে গেছেন নিউইয়র্কের রাস্তায়।

ইসাকসন পেশায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। বিশ্বখ্যাত অনেক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। লেখালেখির পাশাপাশি ছবি তোলা, প্রাণী ও দূরদূরান্তের স্থান সম্পর্কে বই সংগ্রহ আর ভ্রমণ তার নেশা। তিনি বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে। এক বছর যাবত পুরো এশিয়াতে চষে বেড়িয়েছেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন এই তরুণ সাংবাদিক। এখানকার প্রকৃতি, সংস্কৃতি, মানুষের জীবনযাপনের ধরন তাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। তবে সবচেয়ে যে জিনিসটা তাকে ভাবায়, সেটি হলো ‘রিকশা’। যেহেতু ছবি তোলা তার নেশা, তাই তিনি রিকশার পেছনে আঁকা চিত্রকর্ম ক্যামেরাবন্দি করেন। এই চিত্রকর্মে সুনিপুণভাবে ফুটে ওঠা আবহমান বাংলাদেশের সংস্কৃতি দেখে তিনি মুগ্ধ হন।

অ্যান্ডি লক্ষ করলেন, এই অসাধারণ চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করছে। গ্রাম-বাংলার মেঠো পথ, ধানের আইল, নদী-নালা, দুরন্ত কৈশোরের ছুটে চলা কিংবা শহুরে যান্ত্রিকতায় ঘেরা ব্যস্ত জীবন—সবই আছে এই শিল্পীকর্মগুলোতে। অ্যান্ডি রিকশার পেছনে যাঁরা এমন চিত্রকর্ম করেন, তাদের খোঁজ করা শুরু করলেন। এমন দুর্লভ প্রান্তিক শিল্পীদের পেয়ে তিনি খুশিতে ফেটে পড়েন। এর পূর্বে রিকশার এমন সৌন্দর্য দেখে তিনি মনে মনে একটি রিকশার অভাব বোধ করেছিলেন। তার মাথায় চিন্তা আসে একটি রিকশা এখান থেকে তৈরি করে তিনি নিউইয়র্কে নিয়ে যাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, গ্যারেজ থেকে তৈরি করে নিলেন রিকশা। স্থানীয় সৃজনশীল শিল্পীদের দিয়ে তার স্বপ্নের রিকশার পেছনে করালেন অসাধারণ এক চিত্রকর্ম। এই প্রকল্পের নাম দিলেন রিকশা এনওয়াইসি।

অ্যান্ডি তার এই রিকশাকে দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। তিনি ভাবছিলেন, এটিকে কিভাবে মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে একটি বিশ্বজনীন বাহন হিসেবে দাঁড় করানো যায়। অবশেষে একটা বুদ্ধি এল তার মাথায়, তিনি নিউইয়র্কের রাস্তায় তার রিকশা ছেড়ে দেন। যাত্রীরা সেখানে বিনা ভাড়ায় রিকশায় ওঠেন। যাত্রীদের বলা হতো, তারা রিকশায় ওঠার পর তাদের জীবনের না-বলা গল্পগুলো বলতে পারবেন। এভাবেই ইসাকসন নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় তার স্বপ্নের রিকশা এনওয়াইসির মাধ্যমে মানুষের জীবনের বিচিত্র গল্প শোনার ও বলার অন্যরকম এক ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। ইসাকসনের এই রিকশা বর্তমানে ব্রুকলিনবাসীর কাছে বেশ পরিচিত একটি বাহন।

অ্যান্ডি ইসাকসন বলেন, ‘২০১২ সালে সাংবাদিকতার কাজে বাংলাদেশে প্রথম সফরে আসি। এদেশের ঝলমলে সুন্দর রিকশা আমার নজর কেড়ে নেয়। এ সুন্দর বাহনটির স্বতন্ত্রতা থেকে শুরু করে শিল্পী ও চালকের নিজস্ব ভাবাবেগ ও অভিব্যক্তি আমাকে আলোড়িত করে। সেই থেকে স্বপ্ন দেখেছি, আমার নিজের একটি রিকশা থাকবে।’

এসএ/