রক্তের প্লাটিলেট প্রসেসিংয়ে নেয়া হচ্ছে ‘গলাকাটা ফি’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৬ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:৩৯ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

দেশের সর্বত্র মারাত্বক আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। সরকারের পক্ষে ডেঙ্গু সনাক্তকরণ পরীক্ষার মূল্যও এরইমধ্যে বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্লাটিলেট ম্যানেজ করতে গিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে গলাকাটা দাম।
সম্প্রতি এমনই এক অভিযোগের কথা জানিয়েছেন সাংবাদিক আতাউর রহমান কাবুল। এ সংক্রান্ত একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন-
'এক প্রাইভেট গাড়ী চালকের ৭ বছরের শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। প্লাটিলেট নেমে গেছে ২০ হাজারের নিচে। চিকিৎসকরা দ্রুত এক ইউনিট/ব্যাগ প্লাটিলেট ম্যানেজ করতে বললেন।
এক ইউনিট প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে ৪ জন রক্তদাতার প্রয়োজন। শিশুটির ড্রাইভার বাবা বহু কষ্টে ৪ জন রক্তদাতা ম্যানেজ করে ল্যাবএইডের ব্লাড ব্যাংকে গেলেন প্লাটিলেট প্রসেস করে আনতে। কিন্তু এই এক ইউনিট প্লাটিলেট প্রসেসিং ফি বাবদ ল্যাবএইডকে ২০ হাজার টাকা দিতে হলো তাকে! এটাই নাকি তাদের রেট! আমি অনুরোধ করার পরও তারা এক টাকাও কমালো না।
তিনি আরও লেখেন, সরকারের পক্ষে ডেঙ্গু সনাক্তকরণ পরীক্ষার রেট ইতিমধ্যে বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্লাটিলেট ম্যানেজ করতে গিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে যেভাবে গলাকাটা দাম নেয়া হচ্ছে সে বিষয়টিতে সরকার নজর দিচ্ছে না কেন?
এ বিষয়ে ল্যাব এইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া রেটই আমরা নিচ্ছি। আমরা কারও কাছ থেকে বেশি ফি নিচ্ছি না।
এদিকে একুশে টিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে কোয়ান্টাম ল্যাবে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা সাধারণভাবে রোগীদের কাছ থেকে রক্তের প্লাটিলেট প্রসেসিং ফি বাবদ ৯৫০ টাকা করে নিয়ে থাকি। এই ফি সবার জন্যই।
তবে গরীব-অসহায়দের জন্য মোটা অংশ ছাড় দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আসলেই গরীব ও অসহায় তাদের জন্য আমাদের এখানে ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। তাদেরকে আমরা প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকি।
তবে যারা ফি বেশি নিয়ে থাকেন, তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এটা যার যার ব্যাপার। সরকার দেখবে। আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
ডা. মনিরুজ্জামানের শেষ কথার সঙ্গে মিলিয়েই সাংবাদিক আতাউর রহমান কাবুল ফেসবুক পোস্টের শেষে লিখেন- 'বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে রেট কমিয়ে শিগগিরই দেশের সকল ব্ল্যাড ব্যাংকে রক্তের নানা প্রসেসিং ফি দ্রুত নির্ধারণ করে দেয়া হোক।
প্লাটিলেট কি?
রক্তের প্লাটিলেট আসলে কি, সে সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা হলো- রক্তের একধরনের ক্ষুদ্র কণিকা। যা রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক মানুষের রক্তে অণুচক্রিকার হার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ।
সাধারণত, ৪ জন ডোনার থেকে ১ ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখন উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে ১ জন ডোনার থেকেই ১ ব্যাগ প্লাটিলেট বের করা যায়।
আর সে জন্য এফেরোসিস মেশিন বা প্লাটিলেট মেশিন দ্বারা এক জন ডোনারের কাছ থেকে ২৫০ মিলির মতো ব্লাড নিয়ে মেশিনে প্রসেসিং করে প্লাটিলেট বের করে ব্লাডের বাকী অংশটুকু আবার ডোনারের শরীরে পুশ ব্যাক করা হয়।
এইভাবে প্রতি ধাপে ১০-১৫ মিনিট করে ৬/৭ বারে মোট ১ ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। মেশিন ভেদে সিস্টেম একটু আলাদাও হতে পারে।
কিন্তু একবার প্লাটিলেট দিলে ১০-১৫ দিন পর আবার সে প্লাটিলেট দিতে পারে। কারণ অণুচক্রিকা ছাড়া রক্ত থেকে অন্য কিছু নেয়া হয়না। আর অণুচক্রিকার জীবনকাল থাকে সর্বোচ্চ ৩ দিন। যা ২/৩ দিনেই শরীরে আবার ব্যাক করে।
আরও একটা ব্যাপার হলো- প্লাটিলেট ডোনার একাই ৪ জন ডোনারের কাজ করছে। এতে বাকি ৩ জন ডোনার অন্য রোগীকে বাচাঁতে সক্ষম হবে।
/এনএস/আরকে