ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের বেতন ৩৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব

সরওয়ার হোসেন, লন্ডন 

প্রকাশিত : ০১:২১ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে বিদেশি কর্মীদের আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। একটি ডানপন্থী থিংকট্যাংক দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের কাছে এমন প্রস্তাব করবেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগেুলো জানিয়েছে। 

তবে বিশ্লেষকগণ এমন প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে আয়ের সীমা বৃদ্ধি করলে স্বাস্থ্যখাতসহ অর্থনীতির প্রধান কয়েকটি খাতে কর্মীসংকট ব্যপক আকার ধারণ করবে।

সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস সিজিএ নামের একটি থিংকট্যাংক মঙ্গলবার প্রকাশিতব্য তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিদেশি কর্মীদের আয়ের সীমা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৭০০ পাউন্ড (যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৭,৩০৮২৮) করা উচিত। ব্রেক্সিটের পর যেসব বিদেশি কর্মী চাকরীর ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতে চান বা যারা দেশটিতে চাকরির ভিসা নিয়ে আসবেন তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আয়ের এ সীমা শুধুমাত্র ইউরোপিয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ব্রেক্সিটের পর ইউরোপিয় নাগরিকদেরও এ নিয়মের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। 

কারণ হিসেবে তারা বলছে, কম বেতনের চাকরিগুলোতে বিদেশি কর্মীদের কারণে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া লোকজন চাকরি পাচ্ছে না। এমনকি বিদেশি কর্মীদের কারণে বেতন কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিব দলের সাবেক চেয়ারম্যান আয়ান ডানকান স্মিথ এই থিংকট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে,পারিবারিক ভিসার ক্ষেত্রেও নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। এ ভিসায় ২০১৮ সালে এক লাখ ৩৪ হাজার সাতশ ৮৯ জনকে ভিসা দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ শতাংশ অভিবাসী। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সাধারণ মানুষ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের পক্ষে এবং অভিবাসীর বর্তমান সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন। অভিবাসীদের মাধ্যমে ব্রিটেনের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলেও সাধারণ ব্রিটিশরা এর সুফল পাচ্ছেনা বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

অভিবাসী অধ্যূষিত এলাকা যুক্তরাজ্যের দরিদ্রতম এলাকা বলেও মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। বার্মিংহামে স্মল হিথ এলাকার উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে অধিকাংশ বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি অভিবাসীর বসবাস এবং সরকারী হিসাব মতে এই এলাকা ১০ শতাংশ অনুন্নত এলাকার তালিকায় অবস্থান করছে। তাই অভিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতিগত দারিদ্রতার বিষয়টি সরকারের জরুরি ভিত্তিতে দেখা উচিত বলে মনে করে সিজিএ।

এদিকে এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকগণ। লেখক এমা কেনেডি বলেছেন, ‘সরাসরি যদি বলি, যখন নার্সের সংকট তৈরি হবে, যখন ইউরোপীয় দেশগুলোর নার্সরা চলে যাবে, তখন প্রীতি প্যাটেল বিদেশি কর্মী যারা এদেশে কাজের জন্য আসতে চায় তাদের আয়ের সীমা ৩৬ হাজার ৭০০ করবে? অসুস্থদেরকে দেখভাল করবে বলে ভাবছে ব্রেক্সিটপন্থীরা? করুণ চোখে কুকুরগুলো?’ 

কাউন্সিলর ম্যালকম ফিনকেন এই প্রস্তাবকে পাগলামী বলে অভিহিত করে টুইটারে লিখেছেন, ‘নার্সিং, সোশ্যাল কেয়ার, ফার্মিং, ইন্ডাস্ট্রি, হসপিটালিটিসহ অনেক খাতে অভিবাসীরা কাজ করেন। যেখানে বছরে ৩৬ হাজার পাউন্ডের কম বেতন দেওয়া হয়। এসব স্থান পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্রিটিশ নাগরিক নেই। আমাদের অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় এসব খাতকে কি ধ্বংস করতে দেওয়া হবে?’ 

যু্ক্তরাজ্যের অভিবাসী বিষয়ক আইনজীবি ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন জানান, ‘কনজারভেটিব দল কখনোই অভিবাসী বান্ধব ছিল না। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অভিবাসীদের প্রতি নমনীয় মনে হচ্ছে। কিন্তু এই প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করলে দলটির প্রতি অভিবাসীদের সমর্থন অনেক কমে যাবে।’ 

পাশাপাশি ভয়াবহ কর্মীসংকটের কারণে অর্থনীতির ক্ষতি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এত বড় অংকের বেতন দিয়ে বিদেশ থেকে কর্মী আনা অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব হবে না। ফলে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যাতে অর্থনীতির ক্ষতি হবে।’