ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর বাগেরহাটের শহর রক্ষাবাঁধ 

এইচ.এম.মইনুল ইসলাম, বাগেরহাট

প্রকাশিত : ১১:২০ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৯ রবিবার

বাগেরহাটের শহর রক্ষাবাঁধ হতে পারে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। দড়াটানা ও ভৈরব নদীর কোল ঘেষে জেলা শহরের “শহর রক্ষাবাঁধ”টি আধুনিক মানের সৌন্দর্য্য বর্ধিত নির্মানের ফলে ক্রমশই বিনোদন কেন্দ্রে রুপ নিতে যাচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলে বাঁধের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সর্বত্রই শিশু, কিশোর, যুবকসহ নানা বয়সী দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।

ঘুরে দেখা যায়, ভৈরব ও দড়াটানা নদীর ভাঙ্গন থেকে বাগেরহাট শহরকে রক্ষা করতে নির্মিত শহর রক্ষাবাধ সড়কটি দড়াটানা সেতু টোলপ্লাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে মুনিগঞ্জ সেতুর নিচে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট চওড়া সড়কের এক পাশে রয়েছে বাগেরহাট শহর। অন্যপাশে ভৈরব ও দড়াটানা নদী। নদী ও সড়কের মাঝে রয়েছে পার্কিং টাইলস-এ তৈরি পাঁচফুট চওড়া ফুটপাত। 

ফুটপাতের পাশে লাগানো হয়েছে ফলজ, বনজ ও বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গাছ। সাধারণ মানুষের বসার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর তৈরি করা হয়েছে পাকা বেঞ্চ। এই সড়কের পাশেই রয়েছে নির্মানাধীন রুপা চৌধুরী পৌর পার্ক। যেটি ইতোমধ্যে বাগেরহাট শহরের মানুষের অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান হিসেবে রুপ নিয়েছে। আরও আছে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বদ্ধভূমি, ঈদগাহ, মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানসহ অনেক কিছু। সড়কটিকে আরও আকর্ষনীয় করেছে দুই প্রান্তের দুই সেতু (দড়াটানা সেতু এবং মুনিগঞ্জ সেতু)। এ সেতু দুটোর উপর দাড়িয়ে সড়কটিকে দেখতে আরও মন জুড়ায় ভ্রমন পিপাসুদের। সাথে আছে নদীর চরের বেড়ে ওঠা গোলপাতা ও ছইলা গাছের সমারোহ। তাইতো অবসর সময় কাটাতে শহরের বেশিরভাগ লোকই এখন বেছে নেয় বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ সড়ককে।

প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে অসংখ্য লোক হাটে এই সড়কে। অনেকে সকালের ছোট-খাট শরীর চর্চাও সেরে নেয়। দিনের শুরু থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠা সড়কের পাশে সারাদিনই মোটামুটি ভীড় থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হলেই ভীড় বাড়তে থাকে সড়কের পাশে। শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব ধরণের মানুষ আসেন একটু নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে। তবে এখানে বাঁধ সাধে কিছু অসাধু মানুষের ভ্রাম্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ময়লার স্তুপ। যার ফলে ফুটপাতের অনেক জায়গায়ই সাধারণ মানুষ বসতে পারে না। স্থানীয়দের দাবি ফুটপাত দখল মুক্ত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে বাগেরহাট শহর রক্ষা বাধ সড়কের ফুটপাত অধিকাংশ মানুষের অবসর সময় কাটানোর স্থান হতে পারে।

শহর রক্ষা বাধ সড়কে ঘুরতে আসা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আলী নওয়াজ বলেন, বাগেরহাট শহর রক্ষা বাধ সড়ক ও সড়কের পাশের ফুটপাত নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। তবে কেউ কেউ শহর রক্ষাবাঁধের সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করতে নানা স্থাপনা শুরু করেছেন। এ বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ এখনই আমলে না নিলে একসময় সাধারণ মানুষ এ জায়গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।

বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, দু বছর আগে যে সড়কটি খুব ভাঙ্গা ছিল। তা এখন আধুনিক মানের সড়ক ও সৌন্দর্য্য মন্ডিত হয়েছে। এই সড়কের পাশে সময় কাটানো ও ঘুরে দেখা অন্যরকম মজা। স্থানীয় ঠিকাদার এলাহী আলম বলেন, বাগেরহাট শহরের মধ্যে তেমন কোন বিনোদন বা অবসর সময় কাটানোর জায়গা নেই। শহর রক্ষা বাঁধ সড়কের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত হওয়ায় আমরা এখানে এসে সময় কাটাতে পারছি। তবে কিছু বেপরোয়া কিশোর ও যুবক মাঝে মাঝে ফুটপাতের উপর থেকে মটর সাইকেল চালায়, আবার ফুটপাতের উপরে চওড়া করে মটর সাইকেল রাখে এ জন্য সাধারণ মানুষের খুব সমস্যা হয়।
শহর রক্ষা বাধের পাশের ভ্রাম্যমান ফুসকা-চটপটি বিক্রেতা ফজলুল হক বলেন প্রতিদিন ৪শতাধিক মানুষের কাছে ফুসকা ও চটপটি বিক্রয় করি। এখানে প্রতিদিন অনেক লোক আসে ভালই লাগে নতুন নতুন লোকদের দেখে।

বাগেরহাট পৌরসভায় মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ সড়ক আমার প্রাণের সড়ক। এ সড়কে গেলে আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। যারা সড়কের সৌন্দর্য্য নষ্ট করার চেষ্টা করছে, আমরা অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করব। যাতে প্রাণের শহর রক্ষাবাঁধ যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য্য বর্ধিত হয়ে থাকে।

এনএম