ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কাশ্মীরের পুনর্জন্ম এবং তার প্রতিফলন ও প্রভাব

মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.)

প্রকাশিত : ১২:০৯ এএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০১:২৫ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.)

মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.)

গত ৫ আগস্ট সোমবার ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার তড়িঘড়ি করে জম্মু ও কাম্মীরের ওপর বড় মাপের একটা ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেছে। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন ৭০ বছরে যা কেউ পারেনি, ৭০ দিনে সেটি তিনি করে দেখিয়েছেন। এতদিন কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা প্রবাহের পথে যতগুলো ব্লক ছিল সেগুলো ক্লিন না করে বরং ওই সার্জারির মাধ্যমে বাইপাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুগির শেষ পর্যন্ত কি হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে রুগির মৃত্যু ঠেকাতে সেখানে এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ ভারতের কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে। বিপদ আঁচ করতে পারলেই উপযুক্ত দাওয়াই প্রয়োগের জন্য তারা সদা সর্বদা প্রস্তুত।

যা করা হয়েছে এবং যা ঘটেছে তা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাছাড়া একই রাষ্ট্রের ভেতরে কোনো অঞ্চল বা গোষ্ঠির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে বিশেষ ব্যবস্থা যৌক্তিক নয়। তবে যেভাবে কাজটি করা হয়েছে এবং যা করা হয়েছে তাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মূল লক্ষ্য যা মুখে বলা হচ্ছে তা অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেই প্রবল মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন রুগির মৃত্যু হয়তো হবে না। কিন্তু প্রবল রক্তক্ষরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে রক্তক্ষরণের প্রবাহ ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে পুরো অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কাশ্মীরের জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ বা সমঝোতা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এতবড় সুদূরপ্রসারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণেই রক্তক্ষরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে একথাও ঠিক কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এমন তাড়াহুড়ার পেছনে তাদের নিজস্ব যৌক্তিকতা রয়েছে। প্রথমত, মাত্র আড়াই মাস আগে সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। আগামী পাঁচ বছর তারা প্রবল প্রতাপের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এতবড় ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপের ব্যাকলাশ সামলানোর জন্য যথেষ্ট সময় সরকারের হাতে থাকা উচিত। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আপাতদৃষ্টিতে অপ্রিয় ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সরকারের যাত্রার শুরুতেই নিতে হয়, যাতে এর বিরূপ কোনো প্রভাব থাকলে তা যেন আগামী নির্বাচনের পূর্বেই প্রশমিত হয়ে যায়। সেই কাজটিই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মোদি সরকার করতে পেরেছে।

 দ্বিতীয়ত, এই বছরের শেষের দিকে মহারাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্যে বিধান সভার নির্বাচন রয়েছে। বিজেপি মনে করছে এর মাধ্যমে তাদের হিন্দুত্ববাদি চেতনা আরো শাণিত হবে এবং বিধান সভার নির্বাচনে ইতিবাচক ফল দিবে।

তৃতীয়ত, এই সময়ে পাকিস্তান অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি একেবারে ভঙ্গুর এবং তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে একবার ওয়াশিংটন তো আরেকবার প্যারিসে দৌড়াচ্ছেন। ভারতের মনে হয়েছে এটাই মোক্ষম সময়। হাকডাক ছাড়লেও কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা এই মুহূর্তে পাকিস্তানের নেই।

চতুর্থত, সম্প্রতি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতা করার উদ্যোগকে ভারত ভালভাবে নেয়নি। তাই সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে ভারত পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বার্তা দিল যে, কাশ্মীর ইস্যুতে কোন আন্তর্জাতিক পক্ষের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নিবে না।

পঞ্চমত, আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানে আমেরিকার উদ্যোগ সফল হলে সেখানে তালেবান বাহিনী ক্ষমতায় আসতে পারে। যেমনটি বলা হচ্ছে সেই অনুসারে আমেরিকার সেনাবাহিনী প্রত্যাহারিত হলে তখন রাষ্ট্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত আফগানিস্তানের তালেবানদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে জঙ্গি সশস্ত্র জিহাদি গোষ্ঠী কাশ্মীরের অভ্যন্তরে প্রবলভাবে তৎপরতা শুরু করবে এবং সেই পরিস্থিতিতে তা মোকাবেলা করতে হলে জম্মু ও কাশ্মীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ভারতের কাছে নেই।

৭২ বছর পর ভারত সরকার যে সিদ্ধান্তটি নিল তার দায়ভার অনেকখানিই পাকিস্তানের। বিগত ৭২ বছর ধরে কাশ্মীরের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ও অনবরত রক্তক্ষরণ জারি রাখার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরাসরি জঙ্গি সশস্ত্র তৎপরতায় মদদ দিয়েছে এবং নিজেরাও তাতে জড়িত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ কখনো থামেনি। পাকিস্তান সরকার সব সময়ই অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থকড়ি দিয়ে কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের সজীব রাখছে এবং একই সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের ছদ্মবেশে কাশ্মীরের ভেতরে পাঠাচ্ছে। এই কারণে ১৯৪৭ সালের পরে ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে আরও দুটি প্রকাশ্য যুদ্ধ হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। তাছাড়া লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মুহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনকে পাকিস্তান ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে পাঠিয়ে বড় আকারের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে জইশ-ই-মুহম্মদের সন্ত্রাসীরা দিল্লিতে ভারতের মর্যাদার প্রতীক পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ চালায়। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে আক্রমণ চালায় লস্কর-ই-তৈয়বার একটি সন্ত্রাসী দল। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভারতের পাঞ্জাবে পাঠানকোট সামরিক বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় জইশ-ই-মুহম্মদ।

সুতরাং এই সময়ে এসে ভারতের বিজেপি সরকার কাশ্মীর সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার জন্যে বহুলাংশেই পাকিস্তান দায়ী। পাকিস্তানের উগ্র সাম্প্রদায়িক নীতিই এখানে মূল কালপ্রিট। তবে একই সঙ্গে একথাও বলতে হবে আজকে যে পরিস্থিতির কারণে দিল্লির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টিতে ভারত সরকারের নীতি এবং কৌশলও কম দায়ী নয়। গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের আগ পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম বাদে কাশ্মীরের বৃহত্তর জনগণের মধ্যে আজকের মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না এবং তারা কখনো পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়নি। ১৯৮৭ সালে কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং জোর জবরদস্তির পরিণতিতে ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরের একটা বৃহত্তর অংশ সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় এবং তার মধ্য দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাতে ক্রমশই কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তাতে পাল্টাপাল্টি প্রতিনিয়তই রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। সঙ্গত কারণেই ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠতে থাকে।

এই সময়ে এসে সার্বিক পরিস্থিতি যেহেতু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুকূলে, তাই হয়তো তারা ভেবেছে এর একটা শেষ হওয়া উচিত। আর কত, অনেক হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি দিল্লি সরকারের লক্ষ্য অর্জিত হবে। এ প্রশ্ন অনেক জায়গা থেকে উঠছে। কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের আটকে রেখে, বৃহত্তর জনগণকে ক্ষুব্ধ করে এবং শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তিবলে ওই লক্ষ্য কি অর্জন করা সম্ভব হবে। এতদিন কাশ্মীরের মানুষ একটা বিশেষ মর্যাদা ভোগ করেছে। এটি যৌক্তিক, নাকি অযৌক্তিক সেটি এককথা, আর সেটি রদ করার জন্য যা করা হয়েছে তা আরেক কথা। ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে মর্যাদায় এতদিন কাশ্মীর এক ধাপ উপরে ছিল। আর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের ফলে ২৯টি রাজ্য থেকে কাশ্মীরের মর্যাদা এক ধাপ নীচে নেমে গেছে। এতে কাশ্মীরের জনগণ ক্ষুব্ধ হলে তাকে অযৌক্তিক বলা যায় না। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই এক ধাপ নীচে নামানোটা সাময়িক ব্যাপার। সব কিছু ঠিক থাকলে আবার কাশ্মীরকে অন্যান্য রাজ্যের সমমর্যাদায় উন্নীত করা হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে কাশ্মীরের সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ এবং পাকিস্তানের দূরভিসন্ধি ঠেকাতে হলে কেন্দ্রের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আর এ জন্যেই আপাতত জম্মু ও কাশ্মীরকে ইউনিয়ন টেরিটোরির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কথাটির মধ্যে যুক্তি আছে। বিজেপি সরকারের মতে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের অনেক  মূলস্রোতের পত্রিকাও এর বিরোধিতা করেছে এবং বলেছে এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ করে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫এ ধারা বাতিলের ফলে ভারতের অন্যান্য অংশের মানুষ কাশ্মীরে জায়গা জমি কিনতে পারবে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসও করতে পারবে, যা এতদিন সম্ভব ছিল না। ব্যক্তিগতভাবে, ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ যদি সেখানে জায়গা কিনে এবং বসতি স্থাপন করে সেটি এক রকম হবে। তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন কেন্দ্রীয় সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের অন্যান্য অংশের থেকে মানুষ এনে কাশ্মীরে পুনর্বাসন করে তাহলে সেটা বিপজ্জনক হবে। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি কাম্মীরের জনসংখ্যাগত বিন্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয় তাহলে মহাবিপদ হতে পারে। সে রকম হলে প্যালেস্টাইনের মতো কাশ্মীরও চিরস্থায়ী একটি সংকটে রূপ নিতে পারে।

সমস্ত প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন, সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং পাকিস্তানের পুরানো কৌশল কাশ্মীরের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে সেনা পাঠানো এবং জইশ-ই-মুহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার মতো সন্ত্রাসীদের ভারতের ভেতরে পাঠিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো, এসব অপতৎপরতা শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা ভারত কি সামলাতে পারবে। কাশ্মীরের বৃহত্তর জনগণকে আস্থায় না নিতে পারলে, সম্পৃক্ত করতে না পারলে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কোনটাই সম্ভব হবে না। নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা যত শক্তিশালী হোক না কেন আত্মঘাতি নাশকতামূলক আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি দিল্লির সংসদ ভবন আক্রমণ করতে পারতো না। ২০১৬ সালে পাঞ্জাবে পাঠানকোটের সামরিক বিমান ঘাঁটি পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-মুহম্মদের সন্ত্রাসীরা তিন দিন যাবত জিম্মি করে রেখেছিল।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, এ পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। বিজেপি সরকারও সেটা বুঝেছে বিধায় কাশ্মীরে এত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং দফায় দফায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল কাশ্মীরে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং সেখানে অবস্থান করছেন। অনেকে মনে করছেন বিজেপি সরকার বড় ধরনের বাজি ধরেছে। বাজিমাত হবে, নাকি পাল্টা অভিঘাত আসবে তা নিয়ে সকলেই চিন্তিত।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষুব্ধ হবেন, সে আশঙ্কা প্রবল। ফলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে এমন কথা ভাবার কারণ নেই। আনন্দবাজার পত্রিকা আরও লিখেছে, এত গুরুতর একটি পরিবর্তনের জন্য কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে না হোক, অন্তত সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল। হিন্দুস্তান টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পর সেখানকার পরিস্থিতি শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা সেনাবাহিনী দিয়ে মিটমাট করা যাবে না সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। দ্য হিন্দু পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, জম্মু ও কাশ্মীরকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মুকুট। উপত্যকার নেতারা ইসলামিক পাকিস্তান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তকেই শ্রেয় মনে করেছিল। কিন্তু বিজেপির এমন অ্যাডভেঞ্চারের ফলে কাশ্মীরে ইসলামপন্থী রাজনীতি আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

আসলে কি হতে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটা বলা যায়, কাশ্মীরকে ছিনিয়ে নেওয়া পাকিস্তানের আস্ফালন কোনদিন পূরণ হবে না। আর কাশ্মীরের বিদ্রোহীরা লড়াই করে আজাদি অর্জন করে ফেলবে সে বাস্তবতাও নই। অস্ত্রের জোরে কোনো পক্ষেরই অপরপক্ষ বা পক্ষদ্বয়ের ওপর একতরফা বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। সুতরাং সমঝোতা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা প্রবল। সেটা হলে সেই রক্তক্ষরণের রক্ত কাশ্মীরের পাহাড় থেকে গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো অঞ্চলে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

sikder52@gmail.com