ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলার দায় খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২৩ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়া যে অপকর্ম করেছিলেন সেই পদাঙ্কই এরশাদ অনুসরণ করেছিলেন। খালেদা জিয়াও একই রকম কাজ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন। কারণ আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হলে দেশকে নিশ্চিহ্ন করা যেত। ২১ শে আগস্টে যে গ্রেনেড হামলা হলো তার দায় খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না।’ 

বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট-এ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৫তম বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগস্ট মানেই আমাদের জন্য এক অশনি সংকেত। ২২ জন নেতা কর্মী ঐ গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিল। আমি এখনও বেঁচে আছি। হামলায় যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়, সেটা যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার হয়। আর সেই গ্রেনেডই একটা রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে ব্যবহার করা হলো। আমি কখনও ভীত ছিলাম না’।

বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করতেই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকলকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে দিন বেঁচে গিয়েছিলাম। আমি যখন ফিরে এসে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। সে সময়ই জানতাম যে, আমি যে কোন সময় হত্যার শিকার হতে পারি। আমি এ আশঙ্কাকে তুচ্ছ করে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। আমি নিজের জীবনের মায়া করিনি। যে মাটিতে আমার বাবাকে হত্যা করা হয় সেই মাটিতেই হত্যাকারীদের পুরষ্কৃত করা হয়। কারা এ হত্যাকারীদের পুরষ্কৃত করেছিল।’ 

জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক যখন অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তার মাত্র সাত দিন পর জিয়াকে সেনা প্রধান করা হয়। বিশ্বস্ত না হলে কেউ কাউকে সেনা প্রধান করেন না। তার মানে জিয়া এ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এই বাংলাদেশের জনগনের ভোট চুরি করে হত্যাকারীদের সংসদে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি বলেন, যে মাটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছে সে মাটিতেই আমি ফিরে এসেছি। আমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসার জন্য দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার নেতাকর্মীরাই আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। তা একবার নয় বার বার।’ 

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশ রক্ষা না করে উদ্ধারকারী নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হয় এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোন সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভবনের ছাদে এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কিন্তু সে দিন কোন নেতাকর্মীকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। গ্রেনেড হামলার সময় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরী করে আমাকে রক্ষা করেছিল। এমন এক পরিস্থিতিতে দিনে দুপুরে কিভাবে গ্রেনেড হামলা হয়। এখানে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার জড়িত। আল্লাহর ইচ্ছায় সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। এ সময় নেতাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করতে আসলে তাদেরকে লাঠিচার্জ করা হয়। টিয়ার গ্যাস মারা হয়। আহতদের সাহায্য করতে পুলিশ এগিয়ে আসেনি।’ 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘তারা আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এক সেনা অফিসার আলামত রক্ষার চেষ্টা করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। একটা ফরমায়েসি রির্পোট করে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। একজন সাধারণ মানুষ। সে এত গ্রেনেড কিভাবে কিনবে? দীর্ঘ দিন পর সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা বাহিরে আনা হয়।’

সে দিন আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়। সে দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেননি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বলা হয়েছিল আমি নাকি হ্যান্ডব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে ছুঁড়ে মেরেছি। কিন্তু এত গ্রেনেড আমি নিব কিভাবে। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদেরকেও মিথ্যা জানানো হয় যে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই গ্রেনেড হামলা করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হলো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। এ দলের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। একটা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে তিনি দেশকে গড়ার জন্য কাজ করেছিলেন। তার নিজের কোন চাওয়া ছিল না, দেশের জন্যই তিনি কাজ করে গেছেন। আমি দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে ভাবি এতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাচ্ছেন।’

যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন বলে জানান তিনি। বার বার মৃত্যুর মুখে পড়েও পিছ পা হননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন দিন কারও কাছে মাথা নত করেননি শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তিনিও কারও কাছে মাথা নত করবেন না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। 

আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সে সময়ে আহত নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাসিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমুসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। 

এমএস/এসি