ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকার মুনাফায় এখনও ১০ শতাংশ কর 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৪ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

সিদ্ধান্তের ২২ দিন পরও ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। আদেশ জারি না হওয়ায় ৫ শতাংশ করহার এখনও কার্যকর হয়নি। এছাড়া, বর্ধিত হারে কেটে নেয়া করের টাকাও ফেরত দেয়া হবে না বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। 

বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। সমালোচনার মুখে ২৯ জুলাই ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু এখনও ১০ শতাংশ উৎসে করই কাটা হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা।
 
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আগে ১ লাখ টাকায় ২৭শ ৯৩ টাকা পাওয়া গেলেও এখন তা কমে হয়েছে ২৬শ ৪৬ টাকা। তার মানে সেই ১ লাখ টাকা থেকেও ১০ শতাংশ কেটে নেয়া হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বলেন, ৫ শতাংশ করের বিষয়ে এখনও আদেশ জারি না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি। এনবিআর এবং রাষ্ট্রপতির আদেশ প্রয়োজন। যার কারণে সংশোধিত সিদ্ধান্ত হয়নি।

২-১ দিনের মধ্যে আদেশ জারি হবে বলে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, অর্থনীতির বিষয়টি পুনরায় পরিবর্তন করা হয় এআরও জারির মাধ্যমে। তবে, এর আগে থেকে যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে আবারও আরেকটি এসআরও জারি করতে হবে। তবে, যাদের কাছ থেকে বাড়তি কর এরই মধ্যে কেটে নেয়া হয়েছে তা ফেরত দেয়া হবে না। 

এর আগে ২৯ জুলাই সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে করের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান। নতুন করহার চলতি বছরের ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্র যাদের জন্য তারা না পেয়ে ধনীরা এ সুবিধা পাচ্ছে। এজন্য শিগগরিই সঞ্চয়পত্র নিয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে ৫ লাখের ওপরে যাদের বিনিয়োগ তারা ১০ শতাংশ উৎসে কর দিবে। এর নিচে বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও পেনশনভোগীরা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। পরে পেনশনভোগীদের জন্য সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করহার কমিয়ে ৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়।

মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেট পাসের পর সঞ্চয়পত্র নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রে যাদের ৫ লাখ টাকা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর আর এর বেশি যারা রাখবেন তাদের ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে গরিব বা স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই এখাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এ সুযোগ যাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য এটা চলবে। ৫ লাখ টাকা যথেষ্ট না হলে পরর্তীতে চিন্তা-ভাবনা করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ডাটাবেজ দেখে কে কোথায় কত টাকা বিনিয়োগ করেছে তা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। সঞ্চয়পত্রে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের জন্য শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনি কোনো বাধা না থাকায় শাস্তি দেওয়া সম্ভব না।

প্রস্তুতির অভাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া এখনও শুরু করা যায়নি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমরা বাজেটে পাস করেছি। কিন্তু সিস্টেম এখনো ডেভেলপ করতে পারিনি। প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সিস্টেম আপডেট করতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।

“সামনে ঈদ, অনেকেই ধারণা করছেন, এখন দেশে কেউ রেমিটেন্স পাঠালে তারা প্রণোদনা পাবে না। এটা কিন্তু ঠিক না। যেহেতু বাজেটে পাস হয়েছে সেহেতু এখন রেমিটেন্স পাঠালেও দুই শতাংশ প্রণোদনা, ছয় মাস পরে হলেও পাবে। এখন পাঠালেও পাবে, পরে পাঠালেও পাবে।

এক্ষেত্রে সিস্টেম ডেভেলপ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত কাজ করছে বলে জানান মুস্তফা কামাল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূইয়া এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আরকে/