ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ডেঙ্গু ও মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ভ্রমণের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগটি এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এডিস মশা নিধনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ রোগ দ্রুত ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, বাংলাদেশের মত মালয়েশিয়ায়ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ডেঙ্গুবাহিত মশা নিধনে দু’দেশের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার এবং মারা গেছেন একশ’রও বেশি মানুষ।

এর আগে সর্বাধিক সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিলো ২০১৫ সালে। ওই বছরে ১২০,৮৩৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিলো ৩৩৬ জনে। গত বছর একই সময়ে দেশটিতে ডেঙ্গু রোগে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। তবে ২০১৬-১৭ সালে এ রোগের প্রকোপ কম ছিলো।

দেশটির নয়টি রাজ্যে ২৫১ টি এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ডেঙ্গু রোগ বিস্তারের কারণ এবং আক্রান্তকারীরা বেশিরভাগ ওই এলাকার ফ্লাট বা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা।

রাজ্যগুলো হচ্ছে- সেলানগর, ফেডারেল টেরিটরিস, জুহর, কেলানতাং, সাবাহ, পেনাং, সারাওয়াক, নেগ্রি সেম্বিলান এবং পাহাং।

এদিকে জানা গেছে, মশা নিধনে দেশটি বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ব্যক্তিগত কাজে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া এক বাংলাদেশি।

তিনি তার এক লেখাতে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে মালয়েশিয়ায় যাই। কয়েকদিন কুয়ালালামপুর থাকি। সেখান থেকে লংকাউই গিয়ে জ্বর অনুভব করি। তাই তাড়াহুড়ো করেই কুয়ালালামপুর ফিরে আসি। জানাশোনা সবাই বলল, ডেঙ্গু হতে পারে। আমি হাসপাতালে গেলাম। রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসক বললেন, ডেঙ্গু হয়েছে। রোগটি সম্পর্কে আমার ধারণা পরিষ্কার না থাকায় হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরে আসি। জ্বরের মাত্রাও বাড়ল। শরীরে প্রচন্ড ব্যথাও অনুভব করতে থাকি। আবার গেলাম হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক স্যালাইন পুশ করলেন। একটি শেষ হলেই আরেকটি স্যালাইন দেওয়া হলো।

দেখলাম, সেখানে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। তাদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। তখনই জানলাম, মালয়েশিয়া ডেঙ্গুপ্রধান দেশ। সারা বছর বৃষ্টির কারণে দেশটিতে এডিস মশাও প্রচুর। যদিও সরকার সারা বছর ওষুধ ছিটায়।

হাসপাতালে যেতেই কর্তৃপক্ষ জানতে চাইল, আমি কোথায় ছিলাম। আমার ঠিকানা নিয়ে ওই এলাকা এবং এর আশপাশে আধাকিলোমিটার জায়গা জুড়ে মশার ওষুধ ছিটানো হলো। এ হলো তাদের মশারোধের অন্যতম ব্যবস্থা।

চিকিৎসা শুরু হলো। আমাকে প্রথমে বেশি গতিতে, মিনিটে ১৮-২০ ফোঁটা করে স্যালাইন দেওয়া হলো। ৩ ব্যাগ স্যালাইন শেষ হওয়ার পর গতি কমানো হলো। মিনিটে ৬ থেকে ৮ ফোঁটা দেওয়া হলো। প্রতিঘণ্টায় রক্ত পরীক্ষা করে প্লাটিলেট দেখা হলো। একটি পানি পরিমাপ করার মগ দেওয়া হলো। বলা হলো, প্রস্রাব করতে হবে ওই মগে। প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাব করতে হবে, যা একজন স্বাভাবিক মানুষের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাকে এতটাই পানি এবং তরল পদার্থ পান করানো হলো যে, ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রস্রাবের বেগ হতো। ২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। কী পরিমাণ পানি পান করেছি তা অনুমান করা যাবে না।

এরপর স্যালাইনের পরিমাণ ৪ ফোঁটায় নামানো হলো। প্রতি ঘণ্টায় রক্ত পরীক্ষা হাসপাতাল ছাড়ার আগ পর্যন্ত চলল। মাঝে মাঝে কিছু ওষুধ খাওয়াল। খাবারে করলা থাকলো প্রতি বেলায়। জেনেছি, ডেঙ্গু রোগীর জন্য এটি নাকি বিশেষ খাবার।

চিকিৎসকের অনুমতির কিছুদিন পর হাসপাতাল ছাড়লাম। দেখলাম, শত শত রোগীকে একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানো হচ্ছে এবং সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমি মনে করি, ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যাপারে মালয়েশিয়ার এই পরামর্শ আমাদের বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

হাসপাতাল ছাড়ার পর চিকিৎসক আমাকে পেঁপে পাতার জুস (মালয়েশিয়ায় বোতলজাত পাওয়া যায়) খেতে দিলেন। এই জুস খাওয়ার পর আমি শরীরে বেশ জোর পেলাম। জেনেছি, পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে খুবই সাহায্য করে।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, মালয়েশিয়ায় সারা বছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। ডেঙ্গু নিয়ে তাদের গবেষণাও বেশ ভালো। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা গেলে আমাদের দেশের অনেক প্রাণ বাঁচবে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছর বিশেষভাবে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এসএ/