ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গৃহকর্মীর বাড়িতে এসে খেয়ে গেলেন মাশরাফি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৪ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৮ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

গৃহকর্ত্রী বা গৃহমালিকদের দ্বারা গৃহকর্মীদের নির্যাতনের খবর প্রায়ই শোনা যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এবার যে খবর শোনা গেল তা পুরোটাই উল্টো। নিজ গৃহপরিচারিকার ঘরে এসে স্বপরিবারে বেড়িয়ে-খেয়ে গেলেন গৃহকর্তা। 

এমনকি গৃহপরিচারিকার গ্রামের বাড়ির সেই জরাজীর্ণ হাফবিল্ডিং ঘরের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব নিয়েছেন গৃহের মালিক। এই গৃহকর্তা আর কেউ নন, স্বয়ং বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর সৌভাগ্যবতী ওই গৃহপরিচারিকার নাম টুনি।

ভারতের মেঘালয় ঘেষা সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গৃহপরিচারিকা টুনির বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের যোগানিয়া কাচারি মসজিদ সংলগ্ন টুনির বাবা আক্কাছ আলীর বাড়িতে বেড়াতে যান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও নিভৃত পল্লীতে দু’টি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে অতিথি আসার খবর, বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফির আগমণের খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। মাশরাফিকে দেখার জন্য নামে জনঢল। লোকজনের ভিড় সামলাতে পরে মাত্র আড়াই ঘণ্টা অবস্থানের পর শেরপুর ত্যাগ করেন মাশরাফি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের কোরবানির ঈদ মাশরাফির বাসাতে কাটলেও ঈদের পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসার ইচ্ছে ছিল গৃহপরিচারিকা টুনির। তার সেই ইচ্ছা পূরণে কেবল টুনিকে পাঠানো নয়, নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে সঙ্গে গোটা পরিবারের লোকজন নিয়েই টুনির গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন মাশরাফি।

গত শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের হলেও জুমার নামাজ পথেই আদায় করেন মাশরাফি। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পরই হঠাৎ দু’টি গাড়ি নিয়ে টুনিদের বাড়িতে হাজির হন টুনিসহ মাশরাফির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ বছর পূর্বে হতদরিদ্র আক্কাছ আলীর মেয়ে টুনিকে তার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নেন মাশরাফি। দীর্ঘ এই সময়কালে মাশরাফির স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে টুনির গড়ে উঠেছে নিবিড় সম্পর্ক। মাশরাফি ও তার পরিবারও টুনিকে এখন তাদের পরিবারের একজন মনে করেন এবং সেভাবেই তার প্রতিপালন করে আসছেন, সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

আরও জানা যায়, ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির আগমণের বিষয়টি আশেপাশের লোকজন আগে জানতেন না। টুনির বাবা-মা বিষয়টি জানলেও মাশরাফিদের আগমণের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাননি তারা। 

তবে টুনিদের বাড়িতে পৌঁছার পর ঘুরে-ফিরে চারপাশের প্রকৃতিকে এক পলক দেখে নাস্তা পর্ব শুরু করতেই এলাকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় হুলস্থুল কাণ্ড। দেশসেরা অধিনায়কের আগমণের খবরে ওই বাড়িতে নামে মানুষের ঢল। 

মাশরাফিকে কাছে পেয়ে সেলফি তুলতে ও তার অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভক্তরা। খবর পেয়ে মাশরাফিকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও টুনিদের বাড়িতে এসে হাজির হন।

এসময় ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপির আচরণ ও ব্যবহারে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুকছেদুর রহমান লেবু। তিনি বলেন, ভাবা যায়! বাসার কাজের মেয়ে এবং সাবেক নিরাপত্তাকর্মীকে খুশি করতে, তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে মাশরাফির মতো এমন একজন সেলিব্রেটি এমন অজপাড়াগাঁয়ে সস্ত্রীক এসেছেন। টুনির বাবা আক্কাছ আলী ক্রিকেট তারকা মাশরাফির বাসার নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিদায় নিলেও তার পরিবারের প্রতি মাশরাফির রয়েছে দারুণ মমতা এবং নানা সহযোগিতা।

উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, মাশরাফি আক্কাছ আলীকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন, তাদের মাথাগোজার জন্য গ্রামের বাড়িতে একটি হাফবিল্ডিং টিনশেড ঘর করে দিয়েছেন। সর্বোপরি মাশরাফি টুনির ভবিষ্যৎ দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সে এখানে না এলে বিষয়টি আমরা জানতেই পারতাম না। 

এদিকে মাশরাফিদের দুপুরের আহারে ভাত, পটল ভাজা, মাছ, মুরগির মাংস ও গরুর মাংস খাওয়ানো হয়। সঙ্গে ছিল দই ও মিষ্টি। মাশরাফি ফিরে যাওয়ার পর টুনির বাবা আক্কাছ আলী বলেন, ‘মাশরাফি আমার বাড়িত, ভাবতামও পাইতাছি না।’

এনএস/