ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩২

মনের শক্তিতে বদলে যাবে সবকিছু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৪ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:১৪ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

মানুষের মনের শক্তি অসীম। তবে এ শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে প্রথমত প্রয়োজন এ শক্তির উপর বিশ্বাস, অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস। যুগে যুগে মানুষ নিজের শক্তির উপর বিশ্বাসই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘আমি পারব, এই দৃঢ় বিশ্বাসই সকল সাফল্যের ভিত্তি।’ তাঁরা মনে করেন, ‘পারব বলে বিশ্বাস করলে আপনি অবশ্যই পারবেন।’

জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে ‘বিশ্বাস’ শব্দটি মনের এমন এক শক্তির প্রতীক, যার কোন যৌক্তিক সীমানা নেই। যেখানে সফলতা সেখানেই নিহিত রয়েছে গভীর বিশ্বাস। বিজ্ঞানী টমাস এডিসন বিশ্বাস করতেন যে, তিনি একটি সঠিক বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করতে পারবেন। এই বিশ্বাসই তাঁকে গবেষণার ক্ষেত্রে দশ হাজার বার ব্যর্থতার পরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি সক্ষম হয়েছিলেন সঠিক ধাতু প্রয়োগ করে যথার্থ বৈদ্যুতিক বাতি নির্মাণ করতে। বিমান আবিষ্কারক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু সহ অসংখ্য বিজ্ঞানীর সাফল্য তাদের আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের ফলেই অর্জিত হয়েছে।

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র দামোদার দাস মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজি আবদুল কালাম, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সবকিছু। তারা জন্মেছিলেন সাধারণ পরিবারে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

আপনি যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমস্ক হলে আপনাকেও মন-শক্তিতে বিশ্বাসী হতে হবে। এদের মত আপনারও সম্ভাবনা অনন্ত। আপনিও এদের মত অমূল্য সম্পদের মালিক। কিন্তু সে সম্পর্কে আপনি পুরো সচেতন নন। আর আপনার এই অমূল্য সম্পদ হচ্ছে আপনার ব্রেন-আপনার মস্তিষ্ক। নিউরো সাইন্টিস্টরা বলেন মানব মস্তিষ্ক সর্বাধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে দশ লাখ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই দামের হিসেব করলে একটি কম্পিউটারের দাম যদি ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে আপনার ব্রেনের দাম দাঁড়াচ্ছে কমপক্ষে ৫০০০ কোটি টাকা। 

আপনি সবসময় কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ আপনারই ঘাড়ের ওপর বয়ে বেড়াচ্ছেন। এরপরও যদি আপনি গরীব থাকেন তাহলে আপনার দারিদ্র্যের কারণ আপনি নিজেই। কারণ, আপনি ব্রেনের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। আর প্রতিভাবানরা-সফল ব্যক্তিরা এই ব্রেনের ক্ষমতার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবহার করছেন। আপনিও যদি ব্রেনের এই ক্ষমতাকে এদের মত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে সফল ও খ্যাতিমান হতে পারবেন।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’ মাত্র ৫ বছর স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। দারিদ্র্যের কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মাসে আমাদের টাকায় ৪০ টাকা বেতনে কেরানীর কাজ নেন। কিন্তু তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন একদিন তিনি একজন বড় লেখক হবেন। তাই তিনি প্রতিদিন নিয়মিত লেখা শুরু করেন। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে তার ৯ বছর লেগেছিল।

যারা বিত্তবান হয়েছেন তাদের ক’জন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন? এক এক করে আমাদের দেশের বিত্তবানদের দিকে তাকালে দেখব তাঁদের অধিকাংশই এসেছেন সাধারণ অবস্থা থেকে। মনের শক্তির উপরে বিশ্বাস ও সেই শক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগই তাঁদের সফল করেছে। এ প্রসঙ্গে ভারতেশ্বরী হোমসের প্রতিষ্ঠাতা আরপি সাহার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। নিতান্ত দীনহীন অবস্থা থেকে তিনি ধনকুবেরে পরিণত হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যারা ধনকুবের হিসেবে পরিচিত তাদের শতকরা নব্বই জনই খুবই সাধারণ অবস্থা থেকে এসেছেন। মার্কিন ধনকুবের এন্ড্রু কার্নেগির কথা ধরুন। তিনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে বড় ধনকুবের ছিলেন। তিনি ছিলেন বস্তির ছেলে। ১২ বছর যখন তাঁর বয়স, তখন তাঁর পোশাক এত মলিন ও নোংরা ছিল যে, দারোয়ান তাঁকে পাবলিক পার্কে প্রবেশ করতে দেয়নি। তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, যে দিন তার টাকা হবে সেদিন তিনি এই পার্কটি কিনে ফেলবেন। ৩০ বছর পর তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছিলেন। তিনি সে পার্কটি কিনেছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার  সবচেয়ে বড় ধনকুবের হুনডাই কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চুং জু জুং কৃষি শ্রমিক ছিলেন। অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতেন। দীর্ঘ শ্রম, অধ্যবসায় ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ করে তিনি পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ধনকুবেরে।

মনের শক্তি দিয়ে মানুষ যে রোগ ও দৈহিক পঙ্গুত্বকেও উপহাস করতে পারে তার প্রমাণ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। লিখতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না, দূরারোগ্য মোটর নিউরোন ব্যাধিতে ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে যেতেও তিনি বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটারের সহযোগিতায় রচনা করেছেন বর্তমান যুগের বিজ্ঞান জগতের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘এ ব্রীফ হিস্ট্রি অব টাইম’। হুইল চেয়ার থেকে তুলে যাকে বিছানায় নিতে হয়, তিনি অবলীলায় মহাবিশ্ব পরিভ্রমণ করে উপহার দিয়েছেন বিশ্ব সৃষ্টির নতুন তত্ত্ব। আইনস্টাইনের পর তাঁকেই মনে করা হচ্ছে বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞানী।