ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩২

যে বোতলে পানি খাচ্ছেন, তা বিষাক্ত নয় তো?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

প্লাস্টিকের সঙ্গে আমরা নানাভাবে জড়িয়ে গেছি। প্লাস্টিক ছাড়া ভাবতেই পারি না। সারাদিন আমরা হরেক রকম প্লাস্টিকের সংস্পর্শে থাকি। বিশেষ করে পানি খাওয়ার বেলায় তো প্লাস্টিক বোতল এখন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কোনটা ক্ষতিকারক, কোনওটা কম ক্ষতিকার, আবার কোনটা নিরাপদ। অনেকেই হয়তো জানি না এই বোতলের রহস্য।

প্রতিটা প্লাস্টিকের গায়েই একটি ত্রিভুজাকৃতি চিহ্ন থাকে। এটা আসলে রিসাইকেল অর্থাৎ পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ আপনি রোজ যে বোতলে পানি খাচ্ছেন, প্লাস্টিক বক্সের মধ্যে ভরে কোন কিছু রেফ্রিজারেটরে রেখে দিচ্ছেন অথবা কোন দৈনন্দিন কাজে লাগাচ্ছেন সেটা কতটা নিরাপদ বা আপনার জন্য আদৌ নিরাপদ কি না তা বোঝা যাবে এই প্রতীক এবং এর নম্বর থেকেই।

লক্ষ্য করে দেখবেন, প্রতিটা প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে ত্রিভুজাকৃতি প্রতীকের মধ্যে বা আশপাশে অর্থাৎ গাঁয়ে নম্বর থাকে। যা ১ থেকে ৭ পর্যন্ত নম্বরের কোনও একটি থাকে। আর প্রতিটা নম্বরই আলাদা অর্থ বহন করে। কোন নম্বর থাকলে কী হতে পারে তা দেখে নিন-

যদি নম্বর ১ থাকে : প্লাস্টিক পণ্যের গাঁয়ে যদি ১ লেখা থাকে, তার অর্থ সেটা পলিইথিলিন টেরেফটালেট দিয়ে তৈরি। সাধারণত পানির বোতল, বিভিন্ন কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল এই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয়। কোন বোতলে ১ লেখা থাকলে তা নিরাপদ হিসেবেই গণ্য হয়। তবে তা একবারেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ এই বোতলে সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে। ফলে খুব সহজেই ব্যাকটিরিয়া ঢুকে যেতে পারে।

যদি নম্বর ২ থাকে : যেসব প্লাস্টিকের বোতল অস্বচ্ছ পলিইথিলিন দিয়ে তৈরি, তাতে ২ নম্বর লেখা থাকে। ডিটারজেন্ট বোতল, দুধের বোতল লক্ষ্য করলে দেখবেন, তাতে ২ লেখা থাকে। এই নম্বরের অর্থ নিরাপদ। কারণ তাতে ব্যাকটিরিয়া তৈরি হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এটিও।

যদি নম্বর ৩ থাকে : তেলের বোতল, কল ও পাইপের মতো প্লাস্টিকে ৩ নম্বর লেখা থাকে। এগুলো খুবই ক্ষতিকারক। লক্ষ্য রাখবেন, আগুনের পাশে যেন একেবারেই এই প্লাস্টিক না থাকে। বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মধ্যে ভুল করেও এই প্লাস্টিক ঢোকাবেন না। এটা আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য বিষ। এই উপাদান রক্তে মিশলে দেহে হরমোনের ভারসাম্য পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়।

যদি নম্বর ৪ থাকে : উপাদান লো ডেনসিটি পলিইথিলিন। সাধারণত এগুলো নিরাপদ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্যও। অর্থাৎ একবারের বেশি ব্যবহার করা যেতেই পারে।

যদি নম্বর ৫ থাকে : ওষুধের বোতল, কেচআপের বোতল বা সিরাপের বোতল যেগুলো পলিপ্রোপাইলিন দিয়ে তৈরি, তার গায়ে নম্বর ৫ লেখা থাকে। এগুলো সুরক্ষিত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।

যদি নম্বর ৬ থাকে : পলিস্টাইরিন বা স্টাইরোফোম দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের দ্রব্যে নম্বর ৬ লেখা থাকে। এই বোতল থেকে ক্ষতিকারক স্টাইরিন নির্গত হয়। যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাই ৬ নম্বর লেখা প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।

যদি নম্বর ৭ থাকে : আইপড, কম্পিউটার, খাবারের কন্টেনার, বাচ্চাদের ফিডিং বোতল যে উপাদান দিয়ে তৈরি সেগুলো নম্বর ৭-এর ক্যাটাগরিতে পড়ে। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক বিসফেনল দিয়ে তৈরি হয়। যা থেকে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের ফিডিং বোতল কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া জরুরি তাতে কী নম্বর লেখা রয়েছে।

মনে রাখবেন ২, ৪ এবং ৫ নম্বর লেখা থাকলে সেগুলো তুলনামূলক নিরাপদ। নম্বর ১ লেখা বোতলও নিরাপদ হিসাবেই গণ্য হয়। কিন্তু নম্বর ৬ এবং নম্বর ৭ ভীষণভাবে ক্ষতিকর। তাই এই নম্বরের বোতলগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।

আরও একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, মাইক্রোওয়েভেবল প্লাস্টিক মানেই তা কিন্তু নিরাপদ নয়। এর অর্থ তা মাইক্রোওয়েভের তাপ সহ্য করতে সক্ষম। তা থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বেরিয়ে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

এএইচ/